ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকের নেতিবাচক প্রতিবেদন বন্ধের পদক্ষেপ সংবাদ প্রচারের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৫ এপ্রিল ২০১৮

 ব্যাংকের নেতিবাচক প্রতিবেদন বন্ধের পদক্ষেপ সংবাদ প্রচারের  পথকে বাধাগ্রস্ত করবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের ব্যাংকিং খাতে নেতিবাচক প্রচার বন্ধে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের সুপারিশ করেছে ব্যাংক মালিকরা। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার বন্ধ করবে। তবে এ ধরনের পদক্ষেপ দেশের অর্থনৈতিক বিষয়ে সংবাদ প্রচারের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নরের মতে ব্যাংকিং খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ধরে রাখতে আলাদা কোন প্রতিষ্ঠান গঠনের কোন যৌক্তিকতা নেই। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হয়ে যায় ১০ কোটি ডলার। শুরুতে বিষয়টি গোপন থাকলেও কয়েকদিনের মধ্যেই তা গণমাধ্যমে চলে আসলে দেশের ব্যাংকিং খাতের অন্যতম বড় চুরির এ ঘটনা সামনে আসে। দেশের সংবাদ মাধ্যমে এ ঘটনা আসার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংকের আর্থিক অনিয়ম এবং সব শেষ ফারমার্স ব্যাংকের দুর্বল ব্যবস্থাপনা গণমাধ্যমে আসায় ব্যাংকের প্রতি মানুষের এক ধরনের আস্থা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রচার বন্ধে অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেন ব্যাংক মালিকরা। বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস, বিএবির পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি লিখিত চিঠিও দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইনফরমেশন এ্যাক্টের আওতায় আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের সুপারিশ করা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। এ ধরনের প্রচেষ্টা দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সাংবাদ প্রচারকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে মনে করেন অর্থনীতির জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘কণ্ঠ আটকে রাখবার একটি উদ্দেশ্য বলে আমি মনে করি। ব্যাংকের ওপরে কোন স্টোরি হোক এটা তারা চাচ্ছে না। কারণ ব্যাংকের ওপর এখন স্টোরি হলে এটা নেতিবাচক হবে। তাদের উদ্দেশ্য যদি হয়ে এগুলো যাতে ছাপা না হয়, লেখা না হয় তাহলে এটা তো তারা চাইবেই।’ এসময় তিনি আরও বলেন, ‘যখনই কোন সরাসরি তথ্য পাবার রাস্তা থাকে না, তখনই ভুল তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এক গবর্নর মনে করেন, ব্যাংক খাতের দুর্নীতি, অনিয়ম দূর না করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার এই চেষ্টা মোটেও ভাল লক্ষণ না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেউদ্দিন বলেন, ‘মিডিয়া অনেক রিক্স নিয়ে যেটা করেছে সেটা না করলে অনেক ব্যাংকের পতন ঘটত। যদি আপনি এই দোষগুলো না বলেন বা তুলে না আনেন তাহলে ব্যাংকগুলো আস্তে আস্তে মারা পড়বে। আমি মনে করি রোগ আটকে রাখলে তা আর রোধ হবে না।’ এদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, টিআইবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব জনস্বার্থবিরোধী, দুর্নীতি সহায়ক এবং তা অগ্রহণযোগ্য। দেশের আর্থিক খাতের সব থেকে বড় মাধ্যম ব্যাংকিং খাতের নেতিবাচক প্রচার বন্ধের অজুহাতে সংবাদ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হলে এ খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতিকে আরও উস্কে দিবে বলেই মনে করেন এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
×