ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মেধার বিকাশ, উন্মুক্ত চিন্তা ও বুদ্ধিভিত্তিক চর্চার শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৫ এপ্রিল ২০১৮

মেধার বিকাশ, উন্মুক্ত চিন্তা ও বুদ্ধিভিত্তিক চর্চার শ্রেষ্ঠ  কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক শিক্ষা ও কেবল সনদ প্রদানই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য নয়, বরং মেধাবিকাশ, উন্মুক্ত চিন্তা-চেতনার উন্মেষ, বুদ্ধিভিত্তিক চর্চা প্রয়োগের শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি, গবেষণা ও সৃজনশীল কর্মকা-ে যাতে শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত হতে পারে তার দ্বার উন্মোচন করাই হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন ও ব্যবহার এবং আবিষ্কার সম্পর্কে নিজস্ব কর্মসূচী থাকতে হবে। পাশাপাশি বিশ্বের নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পর্যালোচনা করে নিজেদের জন্য যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম এবং উন্নত পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে ব্যর্থ হলে তা যুগের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে। বুধবার বিকেলে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বক্তব্যের শুরুতে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি স্মরণ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী সূর্য সন্তানদের। তিনি সম্প্রতি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যিালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের চার মেধাবী ছাত্র ময়মনসিংহের ভালুকায় ইন্টার্নশিপ করতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত হওয়ায় গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। অনুষ্ঠান শুরুর আগে নিহত কুয়েটের চার শিক্ষার্থীর স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতি গঠনে প্রকৌশল শিক্ষার গুরুত্ব অত্যাধিক। প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা একটি জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করে। প্রকৌশলীদের মেধা, মনন ও সৃজনশীল চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসে টেকসই উন্নয়নের রূপরেখা। তাই প্রকৌশলীদের চিন্তা-চেতনায় থাকতে হবে দূরদৃষ্টির সুস্পষ্ট প্রতিফলন। বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিনিয়তই প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধিত হচ্ছে এবং নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাই আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করে নতুন নতুন উদ্ভাবনে উদ্যোগী হয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষ করে আমাদের শিক্ষার প্রতিটি স্তরে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, নবীন প্রকৌশলীরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে উপলব্ধি করবে এবং তাদের সৃজনশীল চিন্তা ও প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রযুক্তি উন্নয়নের বাহন। কিন্তু এ প্রযুক্তি যেন সর্বনাশের বাহন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। মোবাইল ফোন বর্তমান সময়ে একটি অপরিহার্য ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী। বলা যায় মোবাইল ফোন ছাড়া দৈনন্দিন যোগাযোগ রক্ষা ও জীবনযাপন অচল প্রায়। লেখাপড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল প্রদানসহ বিশ্ব তথ্যভা-ারের সঙ্গে যুক্ত থেকে ঘরে বসে অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় কাজ করা যায়। এতে জীবন হয় সহজ ও গতিশীল। কিন্তু এই মোবাইল ফোন যখন জীবনের ধ্যান-জ্ঞান সব হয়ে যায় তখন সেটি ভাল থাকে না। আজকাল বাস, ট্রেন, লঞ্চ, বিমান সর্বত্রই দেখা যায় যে, সিটে বসেই সবাই মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি সিটে বসেও একজন আরেকজনের সঙ্গে কোন আলাপচারিতা বা কথাবার্তা পর্যন্ত নেই। সারাক্ষণ মোবাইল ফোন নিয়েই ব্যস্ত। এমনকি বাসায় এসেও ফেসবুক, গেমস, মেইল ইত্যাদি নিয়েই সময় কাটিযে দেয়। একজন অন্যজনের সঙ্গে কোন কিছু শেয়ারও করতে চায় না। এতে করে একদিকে দিন দিন পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হচ্ছে অন্যদিকে ছেলেমেয়েরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। এতে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। তাই প্রযুক্তি বা মোবাইল ফোন কোনভাবেই দায়ী নয় বরং এর দায়দায়িত্ব ব্যবহারকারীর। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন ও মানবতার কল্যাণে কাজে লাগানোর মধ্যেই প্রযুক্তির সার্থকতা নিহিত।
×