ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লিয়াকত হোসেন খোকন

অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৫ এপ্রিল ২০১৮

অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত

পয়লা বৈশাখ দেশের সর্বত্র বর্ষবরণ উৎসবে মেতে উঠবে বাঙালী জাতি। সবার মধ্যেই দু’চারদিন আগে থেকেই কত ভাবনা... বৈশাখী মেলায় যাব, পান্তা ইলিশ খাব, আনন্দ উল্লাস করব, দেখব সাংস্কৃতিক উৎসব, চরকায় চড়ব- আরও কত কি। বৈশাখী বাতাস বা বৈশাখী ঝড় না হোক তবু চৈত্র শেষ হলে আমরা অনুভব করি, বৈশাখের আগমন, হালখাতা মহরৎ, চড়কপূজা, মহামেলা- ইত্যাদি। বৈশাখী মেলা- উৎসব আমাদের মন রাঙিয়ে দিয়ে যায়। সত্যিই বর্ষবরণ উৎসবটা হয়ে ওঠে মুখ্য। এ দিন বাঙালী বহু বছর ধরে ফুরফুরে মেজাজে সময় পার করত। নববর্ষের আগের দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা শুরু হবে। কোথাও কোথাও শুরু হবে পক্ষকালব্যাপী চড়কপূজা ও মেলা। উৎসবে সবাই এসে আনন্দ উপভোগ করবে... এই তো আমাদের চাওয়া। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বর্ষবরণ উৎসব বিকেল পাঁচটার মধ্যে শেষ করার যে সিদ্ধান্তটি বেঁধে দেয়া আছে তা কোন অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ কতিপয় অপশক্তির ভয়ে ভীত হয়ে আমরা কেন সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান করে ঘরে ফিরব? বর্ষবরণ উৎসব বাঙালীর প্রিয়, বড্ড প্রিয়, বড়ই আনন্দের- তাই আমরা চাই উৎসব হোক গভীর রাত অবধি। নিরাপত্তা বাহিনী উৎসব এলাকা অবশ্য অবশ্যই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেবেন। হাতেগোনা কতিপয় দুর্বৃত্ত আজও বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি। ওই দুর্বৃত্তরাই আবার আমাদের স্বাধীনতার স্লোগান ‘জয় বাংলা’ এবং জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এরা বর্ষবরণ উৎসবকে কটূক্তি করে নানা রকম বাজে মন্তব্যও করে থাকে। ওরা হয়ত ভুলে গেছে কিংবা জানেই না যে, মুঘল স¤্রাট আকবর এবং পরবর্তীকালের সম্রাটগণ বাংলা নববর্ষে নানা রঙের উৎসব আয়োজন করতেন। বিশাল মেলা বসাতেন, সেই মেলা ও বর্ষবরণ উৎসবে দলে দলে হিন্দু-মুসলমানরা আসতেন। বিভিন্ন বাজনাদারের দল ঢোল, বাদ্য ও বাজনা বাজাত। যারা বর্ষবরণবিরোধী কিংবা সাম্প্রদায়িক মনোভাপন্ন, এরা চিহ্নিত প্রয়োজনে এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে এবং অসাম্প্রদায়িক সর্বজনীন উৎসব সফল করার জন্য যা যা করণীয় তাই করা উচিত। তাছাড়া আমরা এ-ও মনে করি, আমরা বাঙালী বীরের জাতি তাই বর্ষবরণ উৎসব তড়িঘড়ি শেষ করে সূর্যাস্তের আগেই ঘরে ফিরে যেতে চাই না। শুধুই বলব ‘ওদের বাঁধন যতই শক্ত হবে ততই বাঁধন টুটবে, মোদের ততই বাঁধন টুটবে। ওদের যতই আঁখি রক্ত হবে মোদের আঁখি ফুটবে, ততই মোদের আঁখি ফুটবে। ... তোরা ভরসা না ছাড়িস কভু, জেগে আছেন জগত-প্রভু... ওরা ধর্ম যতই দলবে ততই ধুলায় ধ্বজা লুটবে, ওদের ধুলায় ধ্বজা লুটবে। ঢাকা থেকে
×