ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাইছুতাল জান্নাত

স্বতঃস্ফূর্ত নববর্ষ উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৫ এপ্রিল ২০১৮

স্বতঃস্ফূর্ত নববর্ষ উৎসব

বাংলা নববর্ষ শুরু হয় বাংলা পঞ্জিকার (ক্যালেন্ডার) প্রথম মাসের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ থেকে। এতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করে। তাই বাংলা নববর্ষ সর্বজনীন একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব। সাধারণত বাঙালীর প্রাণের স্পন্দন অসাম্প্রদায়িক উৎসবগুলো সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর জন্য সবসময়ই অস্বস্তিকর এবং সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কতিপয় সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ভয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নববর্ষ উদযাপনে সময় নির্দিষ্ট করে দেয়ার মাধ্যমে বাধা সৃষ্টি করার কোন যৌক্তিকতা আছে বলে মনে হয় না। বাংলা নববর্ষ হচ্ছে মূলত বাঙালী জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং গৌরব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। বাঙালী তার হাজার বছরের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য প্রকাশ করবে সানন্দে, গর্বের সঙ্গে। সর্বজনীন এ উৎসবটি উদযাপনে সময়ের কাটছাট করা বাঙালীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে কাটছাট করারই নামান্তর। কারণ, এ উৎসবটির মধ্য দিয়ে বাঙালী তাঁর স্বকীয়তাই শুধু প্রকাশ করে না; সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক ঐতিহ্যও প্রকাশ করে। নববর্ষ উদযাপনের মধ্য দিয়ে আমাদের গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন কৃষ্টি-কালচার যেমনÑ লোকগীতি, পল্লীগীতি, বৈশাখী মেলা, বিভিন্ন আয়োজনে বিচিত্র বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। এসবের মধ্য দিয়ে আমাদের পারস্পরিক এবং সামাজিক সম্পর্কের এক নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়। আমাদের বাঙালীদের হাজার বছরের যে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি এসব কিছু পহেলা বৈশাখে আবার নতুন রূপ পায়। কাজেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নববর্ষ উদযাপনে বাধা সৃষ্টি করা হলে বাঙালী তাঁর স্বকীয়তা হারাতে থাকবে। এবং সংস্কৃতি ও নিজস্ব লোক ঐতিহ্য একদিন লোপ পেয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশ এবং এদেশের মানুষের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অপশক্তি ছিল পশ্চিমা পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী। এ অপশক্তিকে বাঙালী মাত্র নয় মাসে দমন করেছিল। মহান স্বাধীতার ৪৭ বছর পরও কিছু অপশক্তি এদেশে এখনও আগাছার মতো রয়ে গেছে। তারা এদেশের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। সাম্প্রদায়িক এ অপশক্তিকে প্রতিহত না করে তাদের ভয়ে ভীত হয়ে নববর্ষের মতো একটি সর্বজনীন উৎসব উদযাপনে সময় নির্দিষ্ট করে দেয়ার সিদ্ধান্ত ১৬ কোটি মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া খুবই দুঃখজনক। বাঙালীর হাজার বছরের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য বিভিন্ন পালা-পার্বণের মধ্য দিয়েই পালিত হয়ে আসছে। এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বাঙালী জাতিকে আবদ্ধ করেছে এক অভিন্ন আত্মার বন্ধনে। বাংলাদেশে নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস তেমন প্রাচীন না হলেও নববর্ষের মাধ্যমে যে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারণ করা হয় তার ইতিহাস হাজার বছরের। বাঙালীর এ ইতিহাস, ঐতিহ্য, ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করা এবং পালা-পার্বণের মধ্য দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদযাপনের অধিকার প্রতিটি বাঙালীর রয়েছে। তাই অপশক্তির ভয়ে নববর্ষ উদযাপনের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে না দিয়ে বরং যে কোন অপশক্তিকে প্রতিহত করার মাধ্যমে নববর্ষ উদযাপনের সময় অবাধ করে দেয়া হোক। বাংলা নববর্ষ সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ আর শান্তি। শান্তিময় বাসযোগ্য একটি পৃথিবী গড়তে সবাই এক সঙ্গে কাজ করে যা সেটিই হোক এবারের নববর্ষে আমাদের প্রত্যাশা। চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে
×