ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কেন এগুলো ঘটছে, কেন আবার জজ মিয়া ফিরে আসছে? -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৫ এপ্রিল ২০১৮

কেন এগুলো ঘটছে, কেন আবার জজ মিয়া ফিরে আসছে? -স্বদেশ রায়

রাতটা আমার ভাল লাগে। কোন রাত আমার ঘুমিয়ে নষ্ট করতে ইচ্ছে করে না। বন্ধু, ছোট ভাই-বোনেরা যারা ডাক্তার সকলে নিষেধ করেন। বলেন, এটা এ বয়সে মানায় না। যে কোন বিপদ ঘটতে পারে। তারা বলেন, হার্টে সমস্যা হতে পারে। তাদের হেসে উত্তর দেই, হার্টে সমস্যা হোক, হৃদয়ে সমস্যা না হলেই হলো। হার্টে হয়ত মরিচা ধরেছে। হৃদয়ে তো মরিচা ধরেনি। আমি জানি না, ড. জাফর ইকবালের কাছেও শুনিনি, তাঁকে তাঁর বন্ধুরা দিনের বেলা সাবধান থাকতে বলতেন কি-না? সুহৃদ হিসেবে আমি কোনদিন তাকে বলিনি। কারণ, আমি জানি কোন কিছুর ভয়ে পালানো জীবন নয়। সে জীবন দোয়েল বা ফড়িংয়ের হতে পারে, মানুষের নয়। মানুষের জীবন মানেই সেখানে সংগ্রাম থাকবে, উত্থান পতন থাকবে- থাকবে মৃত্যুর সম্ভাবনা। হিমালয়ে উঠব আবার পা ফসকানোর ভয় থাকবে না, তা তো হতে পারে না। মানুষের সভ্যতার কথা বলা হবে আর সেখানে অসভ্য বর্বর এসে আঘাত করবে না, এমনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মানুষের জীবন আর রাষ্ট্র এক নয়। মানুষের জীবন- মানুষের ভাল লাগার, ইচ্ছার অবারিত দুয়ার খুলে দিয়ে চলা। অন্যদিকে রাষ্ট্রকে চলতে হয় নিয়মের বিধিতে। কারণ, রাষ্ট্রের কোন প্রাণ নেই, রাষ্ট্র একটি সিস্টেম। তাই রাষ্ট্রের নিয়মে রাষ্ট্রের ডাক্তার যা বলবে, তাই তাকে করতে হবে। জাফর ইকবাল তাঁর হৃদয় দিয়ে তাঁর হত্যাচেষ্টাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। এ অধিকার তাঁর আকাশছোঁয়া। তবে রাষ্ট্রের একবিন্দু সুযোগ নেই জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টাকারীদের মূলোৎপাটন থেকে বিরত থাকার। এমনকি রাষ্ট্রের এখানে মনে করার কোন সুযোগ নেই যে, জাফর ইকবালের মতো এত বড় মাপের ব্যক্তির গায়ে পুলিশের উপস্থিতিতে যে আঘাত করা হয়েছিল, সেই আঘাতকারী একাÑ তার পেছনে কোন বড় শক্তি নেই। অপরাধ বিজ্ঞানের কোন ছাত্র বিবেকের সঙ্গে প্রতারণা না করলে তা বলবেন না। এর পেছনে অনেক বড় শক্তি থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতারের পরে যদি জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টার তদন্তের গতি থমকে থাকে তাহলে রাষ্ট্র তার নীতির বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে, এটাই ধরে নিতে হবে। আমাদের পুলিশ প্রধান কোনরূপ তদন্ত ছাড়াই প্রথমে বলে দিলেন, এটা সেলফ মোটিভেটেড বিষয়। তার কথার ফলও এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। শুরুতে র‌্যাব বিষয়টি তদন্ত করার কাজে হাত দিয়েছিল। তারা বলেছিলও, এর সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একটা যোগ তারা পাচ্ছে। হত্যাচেষ্টার ধরনও একই। তবে তারা কেউ তো আর পুলিশ প্রধানের ওপরে নন। তাই যা ঘটার সেটাই ঘটেছে। তদন্ত থেমে গেছে। গ্রেফতারচেষ্টা থেমে গেছে। পরিবারের বাইরে কেউ গ্রেফতার হয়নি। জানি না বিষয়টি পরিবারের ভেতর রাখার উদ্দেশ্য শুধু ‘সেলফ মোটিভেটেড’ তত্ত্বকে বাস্তবায়িত করার জন্য কিনা? যদি তা হয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি ভয়ঙ্কর। এই অবস্থান থেকে অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে। কারণ, কারও একজনের মুখ ফসকে (এখনও আমরা বিশ্বাস করতে চাচ্ছি এটা মুখ ফসকে বলা হয়ে গেছে, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়) বলা একটি কথাকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য তদন্ত বা গ্রেফতারসহ সামগ্রিক বিষয়টি যেন সেদিকে না যায়। কারণ, সকলেরই ভেবে দেখা উচিত, জাফর ইকবালের গায়ে হাত দেয়ার পরে দেশের কতটুকু জায়গা আর বাকি থাকে? তাই এ হত্যাচেষ্টার যদি দ্রুত সঠিক তদন্ত না হয়, আর হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনাকারীদের যদি বের না করা হয়, তাহলে তার পরিণাম অনেক খারাপ হবে। ওই অশুভ শক্তি প্রকারান্তরে অনেক বড় প্রশ্রয় পেয়ে যাবে। একটি বিষয় এখন রাষ্ট্র পরিচালকদের দেখতে হবে যে, পুলিশ প্রধান বলার পরে পুলিশের অধীনের কোন তদন্ত সংস্থা ওই সেলফ মোটিভেটেড তদন্তের বাইরে যাবে না। তাই এখন বিষয়টি অবশ্যই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে খেয়াল করেছেন, জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টার পরে মুক্তচিন্তার পক্ষে সাহস করে কথা বলা কতটা কমে গেছে। আর যদি এই হত্যাচেষ্টার প্রকৃত তদন্ত না হয়, যদি এর মূল পরিকল্পনাকারীদের ধরা না হয়, তাহলে এ দেশে মুক্তচিন্তা আরও কমে যাবে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই বিষয়টি নজরে নিতে হবে। তিনি যখনই নজরে নেবেন তখনই পুলিশের আওতাধীন যাবতীয় সংস্থা সাহস পাবে। তারা তখন সত্য উদ্ঘাটনে নেমে পড়বে। আর সেলফ মোটিভেটেড তত্ত্বের ভয়ে আটকে থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী হাত দিলে যে কাজ হয় তার প্রমাণ এই লেখা যখন লিখছি তখন এইচএসসি পরীক্ষার দুই সাবজেক্টের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। এবার প্রধানমন্ত্রী নিজে নজর দিয়েছেন। এবার কাজ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে সব কাজ করতে হবে এ কথা বলতে শুধু খারাপ শোনায় না, বিষয়টি অমানবিকও মনে হয়। তবে দেশের বাস্তবতা যেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তাতে সব ভারই ক্রমে তাঁর কাঁধে গিয়েই পড়ছে। জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টাকারীদের খুঁজে বের করার বিষয়টি এখন ওই প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতোই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যতক্ষণ নজর না দেবেন ততক্ষণ এটা কোন মতেই এগোবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই দেখা যাবে, র‌্যাব, সিআইডি, এনএসআইসহ যারা তদন্ত শুরু করেছিল, তারা ঠিকই প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করতে সমর্থ হবে। সে সক্ষমতা তাদের আছে। যেমন এখন দেখা যাচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া বন্ধ করার সক্ষমতা সরকারের আছে। মন্ত্রী বা মন্ত্রীর অনুসঙ্গীদের অযোগ্যতা বা অন্য কোন কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। প্রধানমন্ত্রী যেই সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছেন, অমনি সেটা সফল হয়েছে। এখানেও সে দৃষ্টি দরকার। কারণ, জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টাটি এ দেশের কত ভয়াবহ ঘটনা ছিল, তা নিশ্চয়ই তাৎক্ষণিক দেশজোড়া প্রতিবাদ থেকে বোঝা যায়। তাই এই হত্যাচেষ্টার মূল পরিকল্পনাকারীদের না ধরলে, এই ভাবে তদন্ত বিশেষ কারণে শেষ করে দিলে, সারাদেশের তরুণ সমাজের মধ্যে হতাশা নামবে। সরকারের প্রতি তাদের আস্থা কমে যাবে। অন্যদিকে সাহসী হবে জঙ্গীরা। এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন, রংপুরে রথীশ অপহরণের পরেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের মধ্য থেকে গোপনে এটাকে জজ মিয়া নাটকের থেকে খারাপ অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। অপহরণের পরের দিনেই সেখানকার পুলিশ প্রশাসনের একজন সাংবাদিকদের সংবাদ সরবরাহ করেছিলেন, রথীশ স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছেন। এটা তার জমাজমি সংক্রান্ত বিষয়। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা এসব বিষয়ে কম-বেশি অভিজ্ঞ। তাই এ চেষ্টা হালে পানি পায়নি। কিন্তু চেষ্টাটি কত বড় ভয়ঙ্কর ছিল, তা একবার ভাবলেই বোঝা যায়। আবার রথীশ অপহরণ ও হত্যার কারণ দ্রুত উদ্ঘাটনের ভেতর দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে আমাদের র‌্যাব ও পুলিশের সক্ষমতা। বিশেষ করে র‌্যাবের সক্ষমতা। তাই জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টার ঘটনা র‌্যাব যেভাবে তদন্ত শুরু করেছিল, সেটা যেন আবার শুরু করে। প্রধানমন্ত্রীকে এ নির্দেশ র‌্যাবকে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে এ উদ্যোগ এলে নিঃসন্দেহে জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টার মূল রহস্য র‌্যাব ও পুলিশ দ্রুত বের করে ফেলতে পারবে। অন্যদিকে জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টার পরে প্রতিবাদ গড়ে তোলার অন্যতম তরুণ ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী মাহিদ আল সালামকে ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ যেন বিএনপি আমলের সেই জজ মিয়া নাটক। এ নাটক যেন না হয়। এরও অবসান ঘটাতে হবে। আর এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, ঘটনাগুলোর শিকড় কত গভীরে। যার ফলে প্রধানমন্ত্রীকে এখনই সজাগ হওয়া ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। অন্যদিকে, যে সব ছোটখাটো তথ্য আমাদের মতো সাংবাদিকদের কাছে আসে, তাতে আমরা জানতে পারছি, এ ধরনের ঘটনা মে-জুন থেকে আরও বেশি ঘটবে। অপরাধীরা সেভাবেই তাদের অস্ত্রশস্ত্র যোগাড় করার চেষ্টা করছে। সেভাবেই দেশের নানা স্থানে তাদের ট্রেনিং হচ্ছে। এমনকি ল্যান্ড বর্ডার দিয়ে অস্ত্র আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে তারা নৌপথ খুঁজছে। যা হোক, কেন এগুলো ঘটছে তা কেউ না বুঝলেও প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারছেন। এ কারণে এগুলো তাকেই সামলাতে হবে। [email protected]
×