ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নৈতিকতা প্রশিক্ষণ!

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৫ এপ্রিল ২০১৮

নৈতিকতা প্রশিক্ষণ!

বাল্যকালে পাঠশালা বা প্রাথমিক স্কুলে শিখতে হতো নীতিকথা। জীবনের শুরুতেই এসব নীতিকথা জীবনের ভিত্তি তৈরি করে দিত। ‘সদা সত্য কথা বলিবে’, ‘গুরুজনদের সম্মান করিবে,’ ‘মিথ্যা বলা মহাপাপ’ ইত্যাদি শিখতে হতো, বুঝতে হতো। শিশুর বেড়ে ওঠার পথ তৈরিতে এসব নীতিকথা প্রণোদনা জাগাত। মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার পথে এসব বাণী যুৎসই ছিল অবশ্য। ‘আদর্শলিপি’ সম্ভবত আদর্শ মানব গড়ে তোলার কারিগর ছিল বলা যায়। পরিবার, বিদ্যালয়, সমাজ জীবন মানুষের মধ্যে নীতি-নৈতিকতাবোধ জাগিয়ে তোলে। নীতিহীন মানুষকে পশুর সমানতুল্য করা হয় যদিও। কিন্তু বিশ্বজুড়ে গণনা করা হলে এদের সংখ্যাই বেশি হবে। কিন্তু নীতিবান ছাড়া সমাজ, রাষ্ট্র পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে পড়তে বাধ্য। এর অনুপস্থিতি রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা-সমাজের স্থিতিশীলতা, ব্যক্তির উদ্যম সবকিছুতেই হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করতে পারে। নীতি-নৈতিকতার যারা ধার ধারে না, তারা আলোর পথের যাত্রী হতে পারে না। বরং পশ্চাদপদ সমাজের ধারক হয়ে উঠতে পারে। রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন যারা, তারা যদি হন নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত, তবে অনাচার, অনিয়ম, অব্যবস্থা, অদক্ষতা, অযোগ্যতা, বিশৃঙ্খলা, বিপর্যয় এবং বিভ্রান্তি প্রাধান্য পায়। এই শব্দগুলো নড়েচড়ে উঠতে পারে এবং সর্বত্র ছড়াতে পারে বিষবাষ্প। বাল্যকালে গড়ে ওঠা নীতি-নৈতিকতার বোধ ক্রমান্বয়ে ব্যাপ্তি পায় শিক্ষা, পরিবার এবং সামাজিক মেলামেশার মাধ্যমে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের সর্বত্র নীতি-নৈতিকার অবক্ষয় ঘটছে। শুধু আজকে নয়, দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের নৈতিকতার অবক্ষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিজের স্বার্থে আইন এবং বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। চাকরি জীবনের শুরু থেকে সংশ্লিষ্টদের নৈতিকতার গুণাবলী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তা করা গেলে চাকরি জীবনে অনৈতিক কাজ করার অভ্যাস থেকে মুক্ত হওয়ার প্রয়াস গ্রহণ করা যায়। চাকরি বা রাজনীতি কিংবা বাণিজ্য যে খাতেই হোক, নৈতিকতা ছাড়া এসব ক্ষেত্রে উত্তরণ দুরূহ। নীতিহীনতার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে আর যাই হোক, প্রতিষ্ঠানগত বা ব্যক্তিগত হোক, উন্নতি ও অগ্রগতির সোপানে ঠাঁই নেয়া যায় না। কর্মজীবনের শুরুতে কর্মীদের মধ্যে নৈতিকতার গুণাবলী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা গড়ে ওঠে না। ফলে অনৈতিকতার পথ তাদের পাড়ি দিতে হয়। যদি ধারণা তৈরি করা যেত, তাহলে নবীন কর্মকর্তারা চাকরি জীবনে অনৈতিক কাজ করার অভ্যাস থেকে মুক্ত হওয়ার প্রয়াস নিতে পারতেন। এসব কার্যকারণ থেকে ব্যাংকিং খাতে শীর্ষ পর্যায়ে নৈতিকতা প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রয়াস এসেছে। বলা হচ্ছে, নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণে ব্যাংকিং খাতে নিজের স্বার্থে আইন, নিয়মনীতি ও বিধিমালা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিচালনা পরিষদ এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের একটি অংশের নৈতিকতার বড় স্খলন হয়েছে। যে কারণে হলমার্ক এবং বেসিক ব্যাংকের মতো ঘটনা ঘটছে। বড় বড় যেসব ঘটনা ঘটছে, সেসব প্রশ্রয় দেয়া হলে ব্যাংকিং খাতে আরও নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটতে বাধ্য। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথভাবে কাজ করার বিকল্প যদিও নেই। এই পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি উপর থেকে নিচে পর্যন্ত নৈতিকতার বিষয়ে আলোচনা ও প্রশিক্ষণ যে জরুরী হয়ে পড়েছে তা ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন। ব্যাংকের নৈতিকতা চর্চা এবং গলদ নিয়ে বিশ্লেষণ হয় না বলেই অনেক বিপর্যয় নামে। প্রয়োজন সব কর্মকর্তাকে বিশেষ করে মধ্য থেকে নিচের দিকের যারা আছেন, তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা হতে পারে। নৈতিকতা সম্পর্কে দেশ-বিদেশের উদাহরণ ভিডিওর মাধ্যমে অবগত করানো যেতে পারে। এতে সৎপথে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার আগ্রহ বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যে অনৈতিক চর্চা চলে আসছে, তার লাগাম টেনে ধরা দরকার। সততা, দেশপ্রেম এবং পেশাদারিত্বের বিস্তার ঘটাতে না পারলে স্রেফ প্রশিক্ষণও কাজে আসবে না। শর্ষে থেকে ভূত নামানো না গেলে ভুতুড়ে অবস্থা হতে উত্তরণ সহজে ঘটবে না। চেতনায় যদি নীতিবোধ জাগ্রত না থাকে, মানসিকতা যদি হয় অনৈতিকতাকে আঁকড়ে থাকা, তবে প্রশিক্ষণে কতটা পরিবর্তন আনতে পারে, সে সময়েই বলে দেবে। তবুও অনৈতিকতার বিপরীতে নীতি নৈতিকতাকে বলিষ্ঠভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশিক্ষণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতেই পারে।
×