ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৫ এপ্রিল ২০১৮

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই

প্রতি মাসে ৫৫ শিশু ধর্ষণের শিকার শীর্ষক সংবাদটি উদ্বেগজনক নিঃসন্দেহে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ১৭৬ জন শিশু শিকার হয়েছে ধর্ষণের। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ২৫ শিশুকে। গত বছর ধর্ষণের শিকার হয়েছিল ১৪৫ শিশু। ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটছে ঢাকা জেলায়। আরও যা অবাক ব্যাপার, তা হলো ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে শিশুরাও। কেন এসব হচ্ছে, তা নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট মহলে। এর আপাত কারণ হতে পারে দুর্বল চার্জশীট, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, সর্বোপরি বিচারহীনতার সংস্কৃতি। নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার শিশুরা অসহায় ও দরিদ্র বিধায় অপরাধীরা ক্ষমতাবান হলে মামলার গতিমুখ থুবড়ে পড়ে। যে কারণে আজ পর্যন্ত প্রায় কোন ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। ফলে ধর্ষণের প্রকোপ বেড়েই চলছে। ধর্ষণকে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। পত্রপত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণ, গণধর্ষণসহ জোরপূর্বক বিয়ের ঘটনা ঘটছে। আর ঘটনাটি এসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষিতাকে হত্যা করা হচ্ছে নির্মমভাবে। অথবা ধর্ষিতা পরিবার সমাজ ও লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করছে। তদুপরি তথাকথিত ফতোয়া বা সামাজিক বিচারের রায়ে ধর্ষকের পরিবর্তে শাস্তি দেয়া হচ্ছে ধর্ষিতাকে। উৎপীড়িত পরিবারটিকে করা হচ্ছে একঘরে। কোথাও যদি ধর্ষকের শাস্তি হয়ও, তবে তা নামমাত্র। অথচ অসহায় ধর্ষিত মেয়েটিকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হয় কলঙ্কের বোঝা। আরও যা ট্র্যাজেডি তা হলো ধর্ষণ, নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন ও নিগ্রহের ঘটনা অনেক সময় আসে না গণমাধ্যমে। পরিবারের মান-সম্মান, মেয়েটির সম্ভ্রম, সামাজিকতা ও লোকলজ্জার ভয়ে চেপে যাওয়া হয় অথবা দেয়া হয় ধামাচাপা। গত বছর সর্বাধিক আলোচিত ছিল সোহাগী জাহান তনুর ঘটনা। আজ পর্যন্ত বিচার তো দূরের কথা, চার্জশীট পর্যন্ত দেয়া হয়নি, যা দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। অবশ্য এর বাইরেও সার্বিকভাবে বেড়েছে নারী নির্যাতন-নিপীড়ন, জোরপূর্বক বিয়ে, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দান এমনকি যৌতুক না পেয়ে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর জিহ্বা ও পায়ের রগ কেটে দেয়ার মতো ঘটনা। অবশ্য নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ইত্যাদি প্রতিরোধে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্নসহ দেশে কঠিন আইন রয়েছে। তবে দুঃখের বিষয়, বিস্তৃত পরিসরে এর প্রয়োগ সীমিত ও সীমাবদ্ধ। অবশ্য এর জন্য নিম্ন আদালতসহ থানা-পুলিশও কম দায়ী নয় কোন অংশে। সেখানে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ আছে বিস্তর। বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর অভিগম্যতা সীমিত। আর সে জন্য শুধু আইন থাকলেই হবে না, এর পাশাপাশি সর্বত্র স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নারী-পুরুষের সমঅধিকারের বিষয়টি সমাজে এখনও অগ্রহণযোগ্য। সে অবস্থায় সহিংসতার শিকার নারীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় অভিগম্যতা বাড়ানো না গেলে সেটার বাস্তবায়ন কঠিন। সরকার ও আদালত সে ক্ষেত্রে নারীর ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে আন্তরিক ও সচেষ্ট হবে বলেই প্রত্যাশা। আমরা হবিগঞ্জের হতভাগিনী আত্মঘাতী স্বপ্না বেগমের ঘটনাটির নিরপেক্ষ তদন্তসহ দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।
×