ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মে মাসে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক পদে নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৫ এপ্রিল ২০১৮

 মে মাসে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক পদে নির্বাচন

এম শাহজাহান ॥ দীর্ঘ ছয় বছর পর আগামী মে মাসে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ রাষ্ট্রায়ত্ত কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে (ডিএমডি) এ পদে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। ব্যাংকটিকে গণমুখী করতে নির্বাচনের পর সুদের হার কমানোর পদক্ষেপ নিবে নতুন পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংকটির সামাজিক দায়বদ্ধতা সিএসআর বাড়াতে ভিক্ষুক পুনর্বাসনে বিনা সুদে ঋণ বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া শিক্ষা ও গৃহনির্মাণ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, ঋণের বিপরীতে উচ্চ হারে সুদ আদায়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকা- নিয়ে সারা বিশ্বে বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এমডি থাকাকালীন গরিবের রক্ত চোষা ব্যাংক হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়। ঋণ বিতরণে অনিয়ম, উচ্চ হারে সুদ আদায়, মুনাফার বণ্টন ও বিনিয়োগ নিয়েও সেই সময় চারদিকে তুমুল বির্তকের ঝড় ওঠে। আইন অনুযায়ী অবসর হলেও ড. ইউনূস এমডি পদে আকড়ে থাকায় পরবর্তীতে তাকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দেয়া হয়। এর পর থেকে পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পর্ষদ ছাড়াই চলছিল গ্রামীণ ব্যাংক। এই সময়ে সুদের হার কমিয়ে ২৭ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। সুদের হার কমানোর পরও গত বছর গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের রেকর্ড করতে সক্ষম হয়। গত ২০১৭ সালে ব্যাংকটি ৩১০ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে, যা আগের বছরের ২৬৬ কোটি টাকার চেয়ে ৪৪ কোটি টাকা, অর্থাৎ ১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যুগ্ম সচিব মোঃ মতিয়ার রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর গত বছর গ্রামীণ ব্যাংক সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে। ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সুদের হার কমিয়ে আনা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পর্ষদ গঠনে আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হওয়ার পর তারা গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। গ্রামীণ ব্যাংককে গণমানুষের ব্যাংক করতে সরকারের উদ্যোগ রয়েছে। আশা করছি, ব্যাংকটি ভবিষ্যতে আরও ভাল পারফরমেন্স করবে। জানা গেছে, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচনের জন্য একটা কমিশন হবে তিন সদস্যের। একজন হবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্য দুজন নির্বাচন কমিশনার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন রাষ্ট্রায়ত্ত কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন ডিএমডি। আর দুই নির্বাচন কমিশনার হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক। গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বেছে নেবেন এই মহাব্যবস্থাপকদের। গ্রামীণ ব্যাংকে পরিচালকের মোট পদ ১২টি। এর মধ্যে চেয়ারম্যানসহ তিনজন পরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার। বাকি ৯টি পদে ব্যাংকটির ঋণগ্রহীতা সদস্যদের মনোনীত করে নিয়োগ দেয়া হতো। ২০১৪ সালে গ্রামীণ ব্যাংক (পরিচালক নির্বাচন) বিধিমালা জারি করে সরকার। ওই বিধিমালা অনুযায়ী ব্যাংকটির সব সদস্যের সরাসরি ভোটে ওই ৯ জন পরিচালক নিয়োগ দেয়া হবে। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১১ মে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে সরে দাঁড়ান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিয়েই চলছে ব্যাংকটি। গ্রামীণ ব্যাংকে বর্তমানে ৯০ লাখ সদস্য রয়েছে। আর কর্মচারীর সংখ্যা ২১ হাজার। কর্মচারীরা গ্রামীণ ব্যাংকের বেতনকাঠামো অনুযায়ী বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বর্তমান ব্যবস্থাপনায় গ্রামীণ ব্যাংক ব্যাপক মুনাফা অর্জন করেছে। পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দেয়া ঋণের সুদের হারও কমানো হয়েছে। দেশের ক্ষুদ্র ঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার সবচেয়ে কম উল্লেখ করে ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন কুমার নাগ সম্প্রতি বলেন, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির বেঁধে দেয়া ঋণের সুদের হার সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ হলেও, বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংক সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ সুদ নিচ্ছে। তিনি বলেন, পাশাপাশি সুদের এই হার বিভিন্ন ক্ষেত্রেও কম। উদাহরণ স্বরূপ, শিক্ষা ঋণের সুদ পাঁচ শতাংশ এবং গৃহনির্মাণ ঋণের সুদ আট শতাংশ। এ ছাড়াও, ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন এবং একটি সুন্দর জীবনের লক্ষ্যে যারা সংগ্রাম করছেন তাদেরকে সুদ বিহীন ঋণ দিচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক। জানা গেছে, শুধুমাত্র সুদের হার কমানই নয়, অধিক সংখ্যক মানুষকে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের আওতায় আনার লক্ষ্যে নতুন নতুন খাতে ঋণদানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্যাংকটি এ পর্যন্ত উচ্চশিক্ষার জন্য ৫২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ঋণ বিতরণ করেছে। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অপেক্ষাকৃত ভাল চিকিৎসাসেবা দেয়ার লক্ষ্যে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েটদের সহযোগিতা করতে তাদেরকে ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জানা গেছে, গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়ে যাচ্ছে। তার আগে মুনাফা বেশি না হওয়ায় লভ্যাংশ দেয়া সম্ভব হতো না বলে জানা গেছে। গ্রামীণ ব্যাংক সর্বশেষ ২০১৭ সালে লভ্যাংশ হিসেবে সরকারকে ৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারদের ১৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এবং ১০ লাখ নতুন সদস্য নেয়া হয়েছে। ব্যাংকটি ২০১৬ সালে ঋণ দিয়েছিল ১৮ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। সেই হিসেবে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত।
×