ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গানে আর শ্রদ্ধা ভালবাসায় উদযাপিত সন্জীদা খাতুনের জন্মদিন

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৫ এপ্রিল ২০১৮

গানে আর শ্রদ্ধা ভালবাসায় উদযাপিত সন্জীদা খাতুনের জন্মদিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংস্কৃতিপ্রেমীদের জন্য সন্ধ্যাটি ছিল মনোরম। পুরো ছায়ানট ভবনে বুধবার বিকেল থেকে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। ভবনের প্রধান মিলনায়তনকে সাজানো হয়েছে প্রকৃতির সবুজ গাছ-পালা দিয়ে। মঞ্চের পেছন দিকে এমনভাবে আলোর প্রক্ষেপণ, মনে হচ্ছে প্রভাতবেলার সূর্য উঠেছে। একদিকে দেখা যাচ্ছে পাতাবিহীন একটি বৃক্ষ, অন্যদিকে ক্রমান্বয়ে সবুজে সবুজ। ঠিক একটি মানুষের জীবনবোধ, জীবনাচরণ যেন ফুটে উঠেছে মঞ্চে। স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত। সে বাধা ভেঙেছিলেন যারা ড. সন্জীদা খাতুন তাদের অন্যতম। তার জন্মদিনে ছায়ানট আয়োজিত উৎসবের পরিবেশটা ছিল এমনই। সন্ধ্যায় ছায়ানটের শিল্পীদের দলীয় পরিবেশনায় ‘শুকনো পাতার নূপুর পায়ে’ নজরুল সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এ সময় অন্যদের মতো দর্শক সারিতে বসে নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠান উপভোগ করছিলেন সন্জীদা খাতুন। শিল্পী আবু হুরায়রা গেয়ে শোনালেন রবীন্দ্রনাথের গান ‘আমার মন যখন জাগলিনারে’। এরপর মঞ্চে আসলেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী। তিনি বললেন, আজ ছায়ানটের খুবই আনন্দের দিন। বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির অগ্রগণ্য ড. সন্জীদা খাতুনের আজ ৮৫তম জন্মবার্ষিকী। সকলের পক্ষ থেকে এই গুণী ব্যক্তিত্বকে অভিবাদন জানাই। তার পরিচয় তিনি শিল্পী, গবেষক, সমাজসংস্কারক, সর্বোপরি তিনি একজন সংগঠক। যার চেষ্টায় গড়ে উঠেছে ছায়ানট। এ দেশে রবীন্দ্রচর্চার প্রতিটি পর্যায়ে গোড়া থেকেই সম্পৃক্ত হয়ে আছেন তিনি। শিল্পী, প্রশিক্ষক, অধ্যাপক এবং সংগঠনকারী হিসেবে সক্রিয়। পরে শিল্পী মিতা হক একে একে গেয়ে শোনান তিনটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। এগুলো হচ্ছে ‘হেলাফেলা সারাবেলা’, ‘কী সুর বাজে আমার প্রাণে’ ও ‘তোমায় গান শোনাব’। শিল্পী লাইসা আহমদ লিসা পরিবেশন করেন তিনটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। ‘আকাশ হতে আকাশ পথে’ গানটি দিয়ে শুরু হয় তার পরিবেশনা। এরপর পরিবেশন করেন ‘প্রভু আজি তোমার’ ও ‘শুধু তোমার বাণী’। গান দুটি। শিল্পী আবুল কালাম আজাদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় দূরবীন শাহ্’র গান ‘আজ রাধার শুভদিন’ ও জালাল উদ্দীন খাঁ’র গান ‘মানুষ ভজ কোরান খোঁজো’। এরপর শামীমা নাজনীন ও জহিরুল হক খানের দ্বৈতকণ্ঠে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্রুতিকাব্য ‘কর্ণ কুন্তী সংবাদ’। এরপর শিল্পী ইফফাত আরা দেওয়ান একে এতে পরিবেশন করেন তিনটি গান। বেঁচু দত্তের ‘আমারে রেখেছ সোনার স্বপনে’ দিয়ে শুরু হয় তার পরিবেশনা। পরে আঙ্গুর বালার ‘আমার হাত ধরে তুমি’ ও ‘অতুল প্রসাদ সেনের ‘আমি বাঁধিনু তোমার তীরে’ গান দুটি পরিবেশন করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী মহিউজ্জামান চৌধুরী ও খায়রুল আনাম শাকিল। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সন্জীদা খাতুনের জন্মদিনের অনুষ্ঠান। জাতীয় জাদুঘরে শিশুদের বিশেষ মুহূর্তের আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু ॥ তখন বিকেল বেলা; বাইরে একটু কম আলোর চৈত্রের মেঘলা বিকেল। রাজধানীর শাহবাগের বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে এর চেয়ে একটু কম আলো থাকলেও সবকিছু বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। কিন্তু গোল বেঁধে গেল জাদুঘরের নলীনিকান্ত ভট্টশালী গ্যালারির কাছাকাছি গিয়ে; তার প্রবেশ দ্বারের কাছে যেতেই দেখা গেল ভেতরে আলো-আঁধারি পরিবেশ। অথচ-গ্যালারির ভেতরের আলো-আঁধারি পরিবেশেও লোকে লোকারণ্য! সবাই কি যেন সব দেখছে! কি দেখছে তারা? উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে গ্যালারির ভেতরে প্রবেশ করতেই কানে এলো কে যেন বলছেন-কেউ ক্যামেরার ফ্লাস দিয়ে ক্লিক করবেন না! আমাদের মোমবাতি প্রজ্বলনের পরেই আলো জ্বলে উঠবে, তখন সকলেই সবকিছু দেখতে পাবেন। -মোববাতি জ্বলে উঠল; চারদিকের কৃত্রিম আলোকবাতিগুলো জ্বলে উঠল। আলোকিত হলো গ্যালারির চারদিক। সেই আলোয় দেখা মিলল গ্যালারির চারদিকের দেয়াল সাঁটানো সব নানান ধরনের আলোকচিত্র। যাতে কেউ খেলছে, কেউ কেউ ছবি আঁকছে, কেউ উৎফুল্লতার সঙ্গে কি ছবি এঁকেছে তা দেখাচ্ছে, কেউ কেউ উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে কি যেন খুঁজছে, আবার কেউ কেউ বসে ভাবুক দৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে আছে; বিষন্ন বদন ! - ভাবছেন ! এমনই সব দৃশ্যের ছবিগুলো আবার কি করলো? এসব তো হরহামেশায় দেখা যায়। না, এসব ছবি হরহামেশায় দেখা যায় না; কেননা, এসব ছবি যে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু-কিশোরদের যাপিত জীবনের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তের ছবি। বিশেষ শিশু-কিশোরদের (অটিজম) যাপিত জীবনের এমনই সব দৃশ্যের শতাধিক আলোকচিত্র নিয়েই বুধবার সেখানে শুরু হলো বিশেষ চারদিনের বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউর উদ্যোগে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিজঅর্ডার এ্যান্ড অটিজম-ইপনা’ এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। একাদশতম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন উপলক্ষে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী উপলক্ষে বুধবার বিকেল গ্যালারি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় উদ্বোধনী আয়োজন। এই আয়োজনে অটিস্টিক শিশু-কিশোরদের যাপিত জীবনের ছবি নিয়ে শুরু হওয়া এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন আলোকচিত্র শিল্পী শংকর শাওজাল। স্বাগত বক্তব্য দেন ইপনা’র প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ শাহীন আখতার। এতে উপস্থিত ছিলেন- বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান ও প্রদর্শনীর আলোকচিত্রী অংগন রহমান। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, অটিস্টিক শিশুরা হচ্ছে অসাধারণ শিশু। আমি এ শিশুদের দেখি বিস্ময়ের সঙ্গে। তারা যা সৃষ্টি করতে পারে আমরা তা পারি না। তারা যে জগতে বাস করে তা আমাদের কাছে অচেনা। তাই আমরা মনে করি, ওরা স্বাভাবিক নয়। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তার সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বিষয়ে বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অটিস্টিক বাচ্চাদের নিয়ে অভিভাবকদের লজ্জা ও অপরাধবোধ এখনও বিরাজমান। ধীরে ধীরে এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। তবে কিছুটা সময় লাগবে। মন্ত্রী বলেন, অটিস্টিক শিশুদের মানুষ করার পুরোপুরি উপযুক্ত পরিবেশ আমাদের দেশে এখনও তৈরি হয়নি। সামাজিক দায়িত্ব ও মূল্যবোধ থেকে এ পরিবেশ তৈরিতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। সত্যিকার অর্থে এ অসাধারণ শিশুদের সহায়তা করতে পারে এমন প্রতিষ্ঠান এদেশে গড়ে তুলতে হবে যারা পেশাগত দক্ষতা, সততা ও মমত্ববোধ থেকে এ দায়িত্ব পালন করে যাবে। আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের অটিস্টিক শিশু-কিশোরদের যাপিত জীবনের প্রায় ১২৩টি আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। যেগুলো তুলেছেন শংকর সাওজাল এবং অংগন রহমান। সকলের জন্য উন্মুক্ত এ আলোকচিত্র প্রদর্শনী আগামী ৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।
×