ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুষ হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ওপরও ভ্যাট আদায় হচ্ছে!

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৫ এপ্রিল ২০১৮

ঘুষ হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ওপরও ভ্যাট আদায় হচ্ছে!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) আদায়ের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি ঘুষ হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ওপর অনেক সময় ভ্যাট আদায় করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারী। বুধবার সকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কার্যালয়ে আগামী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম এসব কথা বলেন। এনবিআর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে এনবিআরের বিভিন্ন সদস্য, বিকেএমইএ এবং বিজিএপিএমইর নেতারা আলোচনায় অংশ নেন। মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সম্প্রতি গার্মেন্টস মালিকরা ঠিক মতো ভ্যাট দেয় কি না তা খতিয়ে দেখতে অডিট শুরু করেছে এনবিআর। নিয়ম অনুসারে পরিবহন খরচ, প্যাকেজিংসহ অন্যান্য ব্যয়ের ওপর ভ্যাট দিতে হয়। কিন্তু এখন আবার মিসেলিনিয়াস (অন্যান্য) ব্যয়ের ওপরও ভ্যাট দেয়া হচ্ছে কি না দেখা হচ্ছে। এর মানে অন্যান্য খরচের মধ্যে বিভিন্ন কার্য সম্পাদনের জন্য যে ঘুষ দেয়া হয় সেটাও যুক্ত আছে। এজন্য আমাদের (গার্মেন্টস মালিক) ঘুষের ওপরও ভ্যাট দিতে হচ্ছে। অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, দেশের ৮০ শতাংশ গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি লস দিয়ে ব্যবসা করছে। মাত্র ১০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান মুনাফা করছে। কিন্তু সবাইকে ভ্যাট, ট্যাক্স ও উৎসে কর দিতে হচ্ছে। এজন্য লস দিয়ে ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা খুবই কষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, বায়াররা ন্যায্য মূল্য দিচ্ছে না। এর বাইরে উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে কাঁচামালের দাম। এর বাইরে ব্যবসায়ীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। অডিটের নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট সিস্টেম এবং স্থানীয় ও রাজস্ব অধিদফতর ব্যবসায়ীদের ব্যাপক হয়রানি করছে। আলোচনায় রফতানিমুখী গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠানকে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ উৎসে কর কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তব করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমপিএমইএ)। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, রফতানিমুখী গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠানকে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ উৎসে কর দিতে হয়। আসন্ন বাজেটে তা কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করা দরকার। বিদেশী বায়ার নিট পণ্যের ন্যায্য দাম দিচ্ছে না, অন্যদিকে এ শিল্পের কাঁচামালের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় এ শিল্পকে রক্ষা করতে হলে উৎসে কর হার কমানোর বিকল্প নেই। এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আয়করের ওপর ব্যবসায়ী ও সাধারণ পর্যায়ে এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু ভ্যাটের বিষয়ে সেই ধরনের গ্রহণযোগ্যতা এখনও সেই পর্যায়ে নেই। এজন্য অনেক ক্ষেত্রে ভ্যাট আদায় কম হয়। এ কারণে আমাদের অডিট প্রক্রিয়ায় যেতে হয় এবং প্রত্যেকটি অডিটে অনাদায়ী ভ্যাট আদায় হতে দেখা যায়। তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক রোগী-গ্রাহকদের কাছ থেকে ভ্যাট নিচ্ছে কিন্তু তা পরিশোধ করছে না। অডিটে সেটা ধরা পড়ছে। তবে অডিটের নামে যেন কোন হয়রানি না করা হয়, সেটাও দেখা হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অনেক শিল্প কারখানার মালিক বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে বাজার অস্থির হচ্ছে। এর বাইরে অনেকে যে দামে পণ্য রফতানি করছে, তার পুরো মুনাফা দেশে আনছেন না। এজন্য আসন্ন বাজেটে ঘোষিত মূল্যের ওপর উৎসে কর কাটা হবে। এ নিয়ে আরও আলাপ আলোচনা হবে বলেও তিনি জানান। অনুষ্ঠানে নিট খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ এ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাক্র্যাফটের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
×