ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠক এ মাসের শেষ দিকে

মিয়ানমারের অসহযোগিতায় রোহিঙ্গা ইস্যু চাপা পড়ে যাওয়ার শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৫ এপ্রিল ২০১৮

মিয়ানমারের অসহযোগিতায় রোহিঙ্গা ইস্যু চাপা পড়ে যাওয়ার শঙ্কা

মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের নিয়ে সৃষ্ট ইস্যুটি ভয়ঙ্কর এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ হলেও মিয়ানমার সরকারের সুপরিকল্পিত অসহযোগিতার কারণে বিষয়টি ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যাওয়ার দিকেই এগোচ্ছে বলে প্রতীয়মান। অতীতেও মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর দফায় দফায় বর্বর আচরণ করে এক ধরনের রেহাই পেয়ে গেছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বারো লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আদৌ সুফল হবে কিনা তা এখন বড় ধরনের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপরও চলতি মাসের শেষের দিকে, দু’দেশের পক্ষে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। প্রথম বৈঠকটি হয়েছিল মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে আগামী ১১ এপ্রিল সে দেশের সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের কথাও রয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আগামীতে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য দু’দেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠকে ১০ হাজার রোহিঙ্গার দ্বিতীয় তালিকা হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। ইতোপূর্বে ৮ হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা দেয়া হয়েছিল, যা থেকে প্রথম দফায় ৩৭৪ ও পরবর্তীতে ১৮৫ জনকে রাখাইনের অধিবাসী বলে মিয়ানমার পক্ষ জানান দিয়েছে। কিন্তু প্রত্যাবাসনে গত জানুয়ারি মাসে শুরু করার কথা থাকলেও তা আগামীতে কখন হবে এ নিয়ে কোন বার্তা তাদের পক্ষে দেয়া হচ্ছে না। এদিকে, টেকনাফ উপকূল দিয়ে ইঞ্জিন নৌকাযোগে ৫৬ রোহিঙ্গার একটি দল ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে গেছে। পৌঁছার আগে গত ১ এপ্রিল ঝড়ের কবলে পড়ে থাই সীমান্ত উপকূলে ভিড়েছিল নৌকাটি। থাই নৌবাহিনী তাদের প্রথমে তাড়া করে। কিন্তু পরে নৌকাটি অদূরে গিয়ে আবারও নোঙ্গর করে। এ অবস্থায় থাই নৌবাহিনী তাদের আটক করলেও ছেড়ে দেয়া হয়। পরে নৌকাটি মালয়েশিয়ার লঙ্কাভি দ্বীপে পৌঁছে। মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ এসব রোহিঙ্গাকে মানবিক সহায়তা দিয়ে আশ্রয় দিয়েছে। অপরদিকে, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ভিটাবাড়ি পুড়িয়ে ও বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়ার পর ওই গ্রামগুলোতে এবার পুলিশের স্থাপনা নির্মাণ করছে মিয়ানমার সরকার। সেখানে মোট ৪টি পুলিশের স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মংডু এলাকায় তিনটি এবং বুচিদং এলাকায় ১টি স্থাপনা নির্মাণ কাজ চলছে জোরেশোরে। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা দেশটির গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছে, মংডু বা এর আশপাশের এলাকায় হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা থাকায় ওসব স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। রাখাইনের মংডুর অন্য এলাকার রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা ভিটাবাড়িতে স্থাপনা নির্মাণ শেষে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া মারমা ম্রো গোষ্ঠীদের সেখানে ঘরবাড়ি বুঝিয়ে দিয়ে নাগরিকত্ব দিচ্ছে মিয়ানমার সরকার। এতে করে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরা নিয়ে আরও জটিলতা তৈরি হচ্ছে বলে জানান সচেতন মহল। রোহিঙ্গা শিশু ডাম্পার চাপায় নিহত ॥ টেকনাফে মিনি ট্রাকের ধাক্কায় এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত হয়েছে। টেকনাফ হ্নীলা মোছনী আদর্শ বিদ্যাপীঠ স্কুলের সামনে বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে গাড়িটি মোছনী ক্যাম্পের পুলিশ জব্দ করেছে। নিহত শিশু উসমত আরা (৪) রোহিঙ্গা মোঃ লালুর কন্যা। গত সেপ্টেম্বরে মিয়ানমার থেকে এদেশে পালিয়ে এসে তারা মোছনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করে আসছিল। জানা যায়, রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু সকাল সন্ধ্যা এভাবে যে রাস্তার উপর ও আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকে, এতে গাড়ি চালকরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই রাজু কান্তি দাস জানান, ডাম্পার গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে যাওয়ায় আটক করা যায়নি। রোহিঙ্গা নারী আটক ॥ কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে কড়াকড়ি তদন্ত থাকায় রোহিঙ্গারা উত্তরবঙ্গে গিয়ে ভুয়া তথ্য দিয়ে অবৈধভাবে পাসপোর্ট তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিছু রোহিঙ্গা। রাজশাহীতে পাসপোর্ট করতে যাওয়া এক রোহিঙ্গা তরুণীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পাসপোর্ট অফিসের তিন দালালকেও আটক করা হয়েছে।
×