ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আলোকচিত্রে আরেক ভুবন

অসাধারণ শিশুদের নিজের জগত বিশ্বভরা প্রাণ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৫ এপ্রিল ২০১৮

অসাধারণ শিশুদের নিজের জগত বিশ্বভরা প্রাণ

মোরসালিন মিজান ॥ ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে বেশ বড় একটি আয়োজন। শতাধিক ছবির প্রদর্শনী। জাতীয় জাদুঘরে আয়োজিত প্রদর্শনীতে অটিস্টিক শিশু। তাদের প্রতিদিনের জীবন। এভাবে মুখ করো, ওভাবে তাকাও বলার সুযোগ ছিল না। সে চেষ্টাও করেননি আলোকচিত্রীরা। বরং ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। ক্যামেরা হাতে অনুসরণ করেছেন তাদের। এভাবে দুই মাসের মতো সময়। ফলাফল? নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারির দেয়াল। ছবি নয় শুধু, প্রতিনিয়ত এড়িয়ে যাওয়া মুখগুলোর দিকে গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকানোর সুযোগ। সামাজিক দায় আর মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার এ্যান্ড অটিজম (ইপনা) এই আহ্বান নিয়ে সামনে এসেছে। কাজ করছে। ধারাবাহিক কাজের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর। উদ্বোধনী আয়োজনটি ছিল অন্ধকার মিলনায়তনে। প্রদীপ জ্বালিয়ে সে অন্ধকার দূর করেন অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়া ও ইপনার প্রকল্প পরিচালক ডাঃ শাহীন আখতার। প্রদীপ জ্বলে উঠতেই কানে আসে সেই প্রিয় সুরÑ আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ,/তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান/বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান...। হ্যাঁ, বিশ্বভরা প্রাণ। সেই প্রাণের সন্ধান দিচ্ছে আলোকচিত্র। অনুষ্ঠানে যাদের নিয়ে প্রদর্শনী তাদের অটিস্টিক নয়, অসাধারণ শিশু বলে সংবোধন করেন সংস্কৃতি মন্ত্রী। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বলেন, তারা তাদের মতো করে যা সৃষ্টি করে আমরা তা পারি না। তাই আমরা সাধারণ। অসাধারণ ওরা। ওরা নিজেদের জগতে থাকে। এই দেখে আমরা ভেবে নেই ছেলে মেয়েগুলো স্বাভাবিক নয়। অথচ এটি ভুল ধারণা। আত্মসমালোচনার মতো করে তিনি বলেন, আমাদের জ্ঞানের অভাব বলেই আমরা তাদের চিনতে পারি না। যতটুকু দেখেছি, আমার মনে হয়েছে, এই বাচ্চাদের ভেতরে এক ধরনের ক্ষমতা আছে। সেই ক্ষমতা সেই শক্তিকে উৎসাহিত করতে হবে। এগিয়ে নিতে হবে। অটিস্টিক শিশু প্রসঙ্গে বারবারই উঠে আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের কথা। মন্ত্রীও প্রসঙ্গটি তুলেন। বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তার কন্যা অনেকের চোখ খুলে দিয়েছেন। অসাধারণ শিশুদের কীভাবে দেখতে হবে, তাদের কাছ থেকে জেনেছে মানুষ। এখন শিশুদের আমরা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখি না। তাদের ভালর জন্য কিছু করতে প্রয়াসী হই। তবে এ ইস্যুতে আরও কাজ করার আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এখনও বিশেষ বাচ্চাদের সমাজ একঘরে করে রাখতে চায়। পরিত্যাগ করতে চায়। এমনকি অনেক পিতা-মাতা বাচ্চাদের সবার সামনে আনতে লজ্জা পান। অপরাধ বোধ কাজ করে তাদের মাঝে। বাধাগুলো অতিক্রম করতে হবে। ঢাকায় অটিস্টিক শিশুদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থাকলেও, প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেই। সুযোগগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ জন্য সামাজিক দায় মানবিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে সকলকে কাজ করার আহ্বান ছিল প্রধান অতিথির বক্তব্যে। এর আগে বক্তব্য রাখেন ইপনার প্রকল্প পরিচালক ডাঃ শাহীন আখতার। অটিস্টিক শিশুদের বড় ভালবেসে আগলে রেখেছেন তিনি। আলোকচিত্রের ভাষায় তাদের কথা বলার মূল উদ্যোগটিও তার। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, অনেকেই অটিস্টিক শিশুদের করুণার চোখে দেখেন। এটিও ঠিক নয়। আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আলোকচিত্র প্রদর্শনী এ কাজেরই অংশ। প্রদর্শনীর ছবিগুলো তোলেন অভিনেতা শঙ্কর শাঁওজাল ও অংগন রহমান। অনুষ্ঠানে ছবি তোলার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন শঙ্কর শাঁওজাল। আবেগঘন কণ্ঠে তিনি বলেন, দীর্ঘ জীবনে আমি অনেক কিছুই তো দেখেছি। কিন্তু অটিস্টিক ছেলে মেয়েদের কাছে থেকে দেখার পর বিগত দিনের দেখা সবকিছুই কেমন যেন ফিকে হয়ে গেছে। অটিস্টিক শিশুদের অনুসরণ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, এদের কেউ পর্বতের মতো ধ্যানে বসে যাচ্ছে। কখনও দূরন্ত। ছুটছে শুধু। ফেরানোই যাচ্ছে না। এভাবে তাদের ভেতরে ভরপুর প্রাণ, নানা বৈচিত্র্যময় জগৎ দেখেছি আমি। বিশেষ এই প্রদর্শনী চলবে শনিবার পর্যন্ত।
×