ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই নাইকো মামলার রায় ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক আদালত

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৫ এপ্রিল ২০১৮

শীঘ্রই নাইকো মামলার রায় ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক আদালত

রশিদ মামুন ॥ আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত (ইকসিড) শীঘ্রই নাইকো মামলার রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে আদালত রায়ের দিন ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি মামলাটিতে বাংলাদেশের পক্ষের আইনজীবী ড্রিক স্মিথ পেট্রোবাংলার কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে মামলাটির অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত করেছেন। মামলার আরেকজন আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈম গনি মামলাটির শীঘ্রই রায় হবে বলে জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের জানানো হয়েছে এই সপ্তাহেই মামলার রায়ের দিন ঘোষণা করবে ইকসিড। মামলাটিতে অগ্নিকা-ে বাংলাদেশের মূল্যবান গ্যাস সম্পদ পুড়ে যাওয়ায় বাপেক্স ক্ষতিপূরণ চেয়েছে। আমরা আশা করছি ইকসিড নাইকোর সকল দুর্নীতির বিষয় বিবেচনা করেই রায় প্রদান করবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষে রায় গেলে নাইকোর এদেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করেই ক্ষতিপূরণ নিতে হবে। একই সঙ্গে তারা ফেনী ক্ষেত্রের গ্যাস বিক্রির জন্য যে অর্থ পাবে তা দিতে হবে না। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোঃ ফায়েজউল্লাহ এনডিসি জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর কাছে পাঠানো চিঠিতে জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে মামলাটিতে বাংলাদেশের পক্ষের আইনজীবী মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানিয়েছেন। আইনজীবী বলছেন গত ১২ মার্চ দুর্নীতি এবং দায় বিষয়ে ইকসিড ট্রাইব্যুনাল খসড়া রুলিং তৈরির কাজ করছে। একই সঙ্গে আশা করেছেন খুব শীঘ্রই মামলাটির কার্যক্রম শেষ হবে। মামলাটিতে কি রায় হতে পারে আইনজীবী সে বিষয়ে তিনটি সম্ভাবনার কথা বলেছেন এক্ষেত্রে সম্ভাবনা-১ এ বলা হয়েছে নাইকোর দুর্নীতির বিষয়টি আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল আরবিট্রেশন কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করতে পারেন। সম্ভাবনা-২ এ বলা হয়েছে ট্রাইব্যুনাল নাইকোর দুর্নীতি খুঁজে পাক না বা পাক নাইকোর দায় এবং ক্ষতি পর্যায় পর্যন্ত আরবিট্রেশন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারেন। সম্ভাবনা-৩ এ বলা হয়েছে অপ্রত্যাশিতভাবে যদি নাইকোর কোন দুর্নীতি এবং ব্লো আউট (অগ্নি উৎপাতের) ক্ষেত্রে কোন দায় খুঁজে না পায় সেক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম শেষ করে দিতে পারে। সালিশি আদালত আইনজীবীর সম্ভাবনা-১ এবং ২ সম্ভাবনাকে বিবেচনায় রেখে রায় দিলে নাইকো মামলার রায় বাংলাদেশের পক্ষে যাবে। অন্যদিকে তিন নাম্বার বিবেচনা করলে নাইকো মামলার রায় বাংলাদেশের বিপক্ষে যাবে। যদিও ব্যারিস্টার গনি বলছেন, কোন কারণে মামলার রায় বাংলাদেশের বিপক্ষে গেলে আপীল করার সযোগ থাকবে। আদালত আপীল গ্রহণ করলেও বাংলাদেশের কাছ থেকে অর্থ নিতে হবে বাংলাদেশের নি¤œ আদালত এবং উচ্চ আদালতে নাইকোকে তাদের পক্ষে রায় পেতে হবে। তিনি জানান ইতোমধ্যে নাইকোর সকল সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। বাংলাদেশের উচ্চ আদালত নাইকোর সম্পদ বিক্রি করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে। তবে যেহেতু মামলাটি আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে চলছে তাই এখনই তা করা সম্ভব হচ্ছে না। নাইকো মামলা যথাযথভাবে না পরিচালনা করায় ইকসিড বাংলাদেশকে ফেনী গ্যাস ক্ষেত্রে নাইকোর প্রাপ্ত অর্থ পরিশোধের আদেশ দেন। দেশের একজন প্রবীণ আইনজীবী নাইকো মামলাটি বাংলাদেশের পক্ষে পরিচালনা করতেন। ২০০৯ সালে সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর একজন সাবেক মন্ত্রীর স্বামীকে নাইকো মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই আইজীবীর সময়ে মামলাটি পরিচালনায় গাফিলতিতে ইকসিডে বাংলাদেশের স্বার্থ প্রতিফলিত হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে বাংলাদেশে ব্লো আউটের বিষয়টি মামলায় উঠে আসেনি। উল্টো ফেনী গ্যাস ক্ষেত্রের অর্থ দিতে নির্দেশ দেয় ইকসিড। ইকসিডে বাংলাদেশের বিপক্ষে রায় গেলে সাবেক মন্ত্রীর স্বামীকে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। সরকার টেংরাটিলা, ফেনী ও কামতা গ্যাসক্ষেত্রকে ‘প্রান্তিক’ (যে ক্ষেত্র থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলনের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে) দেখিয়ে সেখান থেকে গ্যাস তোলার জন্য ১৯৯৯ সালে নাইকো-বাপেক্স যৌথ উদ্যোগের সঙ্গে চুক্তি করে। ওই চুক্তির অধীনে নাইকোর অদক্ষ কূপ খনন প্রক্রিয়ার কারণে ২০০৫ সালে দুবার (৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন) সুনামগঞ্জের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটে। এর ফলে ওই গ্যাসক্ষেত্র ও সন্নিহিত এলাকায় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পেট্রোবাংলা প্রথমে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করে। কিন্তু তা সফল না হওয়ায় ২০০৮ সালে ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ৭৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করে। অপর দিকে ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে নাইকো-বাপেক্সের যৌথ চুক্তির অধীনে গ্যাস তুলে জাতীয় গ্রিড দেয়া হচ্ছিল। টেংরাটিলা বিস্ফোরণের পর পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) হাইকোর্টে একটি মামলা করে। তাতে টেংরাটিলার ক্ষতিপূরণ দাবি করা ছাড়াও বলা হয়, নাইকোর সঙ্গে সরকার অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় চুক্তিটি করেছে। তাই চুক্তি বাতিল করা দরকার। কিন্তু হাইকোর্ট চুক্তি বাতিলের কোন নির্দেশনা দেননি। তবে টেংরাটিলার ক্ষতিপূরণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত নাইকোকে ফেনীর গ্যাসের দাম পরিশোধ না করার আদেশ দেয়। ফলে পেট্রোবাংলা নাইকোকে গ্যাসের দাম দেয়া বন্ধ করে দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা রয়েছে তার সময়ই নাইকোকে গ্যাস ক্ষেত্রে ইজারা দেয়া হয়। যে গ্যাস ক্ষেত্রে কোন দিন কূপই খনন করা হয়নি তা কিভাবে প্রান্তিক হয় দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের করা মামলায় সেই প্রশ্ন উত্থাপন করে বলছে এতে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এর আগে বিএনপির সময়কার মন্ত্রী কে এম মোশারফ হোসেন নাইকোর কাছ থেকে অর্থ এবং গাড়ি ঘুষ নিলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এতে তাকে ওই সময় মন্ত্রিত্বও ছাড়তে হয়। প্রসঙ্গত নাইকো কানাডার আদালতে দুর্নীতির বিষয়টি ইতোমধ্যে স্বীকারও করেছে।
×