ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ব্যর্থতার বৃত্তে পাকিস্তানের সন্ত্রাস দমন অভিযান

প্রকাশিত: ০৭:১১, ৪ এপ্রিল ২০১৮

ব্যর্থতার বৃত্তে পাকিস্তানের সন্ত্রাস দমন অভিযান

কুবরামে যারা ঘাঁটি গেড়ে আছে তাদের মধ্যে আফগান তালেবানদের মিত্র হাক্কানী নেটওয়ার্কও আছে। আমেরিকার মতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই নেটওয়ার্কটিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। ২০১৮ সালে তার প্রথম টুইটে ডোনাল্ড ট্রাম্প মিথ্যাচার ও প্রতারণার জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেছিলেন। কাবুলের এক হোটেলে হাক্কানীদের পরিচালিত এক প্রাণঘাতী হামলার এক দিন পর গত মাসে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় এক হাক্কানী কমান্ডার ও তার দুই সহযোগী নিহত হয়। আমেরিকা পাকিস্তানকে ২শ’ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্যও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তানে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস এত তীব্র আকার ধারণ করেছে যে সেনাবাহিনী সেই সন্ত্রাস দমনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা কোমর বেঁধে অভিযানে নেমে পড়েছে। সেনাবাহিনী আগেও বহুবার এমন অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু কোনবারই সন্ত্রাসের মূলোৎপাটন করতে পারেনি। এবারও তার অন্যথা হবে বলে কেউ মনে করেন না। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এখন দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ওয়াজিরিস্তানে বেশ তৎপর। এটা এক অরাজকতাপূর্ণ এলাকা যা একদা জিহাদীদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। বারাক ওবামা এক সময় এই অঞ্চলটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকা বলে উল্লেখ করেছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী উত্তর ওয়াজিরিস্তান থেকে জঙ্গী উচ্ছেদে ২০১৪ সাল থেকে ২২ মাসব্যাপী অভিযান চালায়। সেই অভিযানে প্রায় ৫শ’ সৈন্য ও ৩৪০০ জঙ্গী নিহত হয়। অনেক জঙ্গী সীমান্তের ওপারে আফগানিস্তানে পালিয়ে যায়। জঙ্গী উচ্ছেদের পাশাপাশি সেনাবাহিনী এ অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে মনোনিবেশ করে। বাস্তাঘাট ও স্কুল তৈরি হয়। অবহেলিত, অনুন্নত ও বন্ধুর এই এলাকায় পানি ও বিদ্যুত সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তার পরও এখানকার নিরাত্তা পরিস্থিতি যে কত নাজুক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই তো কিছুদিন আগে সন্ত্রাসী হামলায় দু’জন সৈন্য নিহত ও আরও ৩ জন আহত হয়। উত্তর ওয়াজিরিস্তানসহ ফেডারেল শাসিত উপজাতীয় এলাকায় (ফাতা) জিহাদীদের হামলায় নিহদের সংখ্যা ২০১৬ সালে ছিল ৮৬ জন। ২০১৭ সালে তা বেড়ে ১৩৮-এ দাঁড়ায়। এটা ঠিক যে সেনা অভিযানের পর উত্তর ওয়াজিরিস্তান বেশ শান্ত রয়েছে। তাই বলে আশপাশের এলাকা তো নয়। যেমন উত্তর ওয়াজিরিস্তানের প্রশাসনিক কেন্দ্র মিরান শাহের পার্শ্ববর্তী জেলা কুবরামে অবস্থা বেশ খারাপ। এতদঞ্চলে যত হতাহত হয়েছে তার ৭৬ শতাংশই হয়েছে কুবরামে। তা থেকে বোঝা যায় যে উত্তর ওয়াজিরিস্তান থেকে উৎখাত হওয়া জঙ্গীদের কিছু অংশ এখনও কাছাকাছি এলাকায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করে চলেছে। কুবরামে যারা ঘাঁটি গেড়ে আছে তাদের মধ্যে আফগান তালেবানদের মিত্র হাক্কানী নেটওয়ার্কও আছে। আমেরিকার মতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই নেটওয়ার্কটিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। ২০১৮ সালে তাঁর প্রথম টুইটে ডোনাল্ড ট্রাম্প মিথ্যাচার ও প্রতারণার জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেছিলেন। কাবুলের এক হোটেলে হাক্কানীদের পরিচালিত এক প্রাণঘাতী হামলার এক দিন পর গত মাসে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় এক হাক্কানী কমান্ডার ও তার দুই সহযোগী নিহত হয়। আমেরিকা পাকিস্তানকে ২শ’ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্যও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। হাক্কানীদের প্রতি পাক বাহিনীর যে দুর্বলতা আছে তা বুঝতে কারোর বেগ পেতে হয় না। ২০১৭ সালে সেনাবাহিনী ফাতা অঞ্চলে এক নতুন সন্ত্রাস দমন অভিমান চালায়। জিহাদীদের বিশেষ করে তালেবানদের পাকিস্তানী শাঙ্কা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপিকে টার্গেট করে গোয়েন্দা বাহিনীর নেৃতত্বে ১৬৪টি অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু একটিও হাক্কানীদের বিরুদ্ধে হয়নি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন সুলিভান সম্প্রতি সিনেট পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটির কাছে বলেন যে, স্বদেশে তৎপর জঙ্গীদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালানোর যে দাবি জানানো হয়েছিল পাকিস্তানের দিক থেকে তা পূরণ হওয়ার কোন প্রমাণ এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, জঙ্গীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় প্রদানের জন্য আমরা তাই পাকিস্তানকে দায়ী করি। ওদিকে গত ১৫ মার্চ আফগান সীমান্তের কাছে পাকিস্তানের প্রত্যন্ত শহর কিল্লা সাইফুল্লাহয় তালেবানের সঙ্গে যুক্ত একজন ইমামের বাড়িতে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে ইমামসহ ৭ ব্যক্তি নিহত ও ১০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও ছিল। ইমাম ছিল তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপির সদস্য। ১৪ মার্চ পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের কাছে রাইউইন্ডো একটি চেকপয়েন্টের কাছে পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে তিন পুলিশ অফিসার ও একজন পথচারী নিহত হয়। আহত হয় ২০ জন। সূত্র : ইকোনমিস্ট ও ইন্টারনেট
×