ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদায় বললেন মরকেল

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ৪ এপ্রিল ২০১৮

বিদায় বললেন মরকেল

যে ইনজুরি ক্যারিয়ারজুড়ে মরনে মরকেলকে ভুগিয়েছে জীবনের শেষ টেস্টেও সেটি তার পিছু ছাড়ল না! জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্টের তৃতীয় দিন লাঞ্চ বিরতির ৪০ মিনিটি আগেই সাইড ¯েœইনের ব্যথা নিয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন ৩৩ বছর বয়সী এ তারকা পেসার। ৯ উইকেট নিয়ে আগের টেস্টে দলের জয়ের নায়ক তিনি, এই সিরিজেই মাত্র পঞ্চম দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে ৩০০ টেস্ট উইকেটের মাইলস্টোন পেরিয়েছেন। সাদা পোশাকে ৮৫ ম্যাচে তার শিকার সংখ্যা ৩০৬। অথচ স্টিভেন স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নারদের বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির কারণে আলোচনার বাইরে থেকে গেছেন মরকেল। ১২.২ ওভার বল করে নিয়েছেন মিচেল মার্শের উইকেট। পরদিন ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকার (সিএসএ) পক্ষ থেকে জানানো হয়, মরকেল আর বোলিং করতে পারবেন না। অর্থাৎ ইনজুরি সঙ্গী করেই অবসের যেতে হলো আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সফল এ পেসারকে। মরকেলের ইনজুরিটা বাঁ দিকে স্ট্রেইনের। এর আগে পচেফস্ট্রমে চলতি গ্রীষ্মের প্রথম ম্যাচে ঠিক এ ধরনের চোটেই পড়েছিলেন এই পেসার, মাঠের বাইরে ছিটকে পড়েছিলেন ছয় সপ্তাহের জন্য। তবে সবমিলিয়ে ঘরোয়া লিগে ফিরতে ফিরতে সেবার ১১ সপ্তাহ লেগে যায়। চোট কাটিয়ে জাতীয় দলে ফেরার পর তো স্বপ্নের ফর্মে ছিলেন মরকেল। আগের সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে একাই ৯ উইকেট (১১০ রানে) নিয়ে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন এই পেসার। এটা আবার ছিল তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। মরকেল নিজেও এটাকে তার ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত বলেছিলেন। একই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার মাত্র পঞ্চম বোলার হিসেবে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন, এই অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শেষেই ইতি টানবেন ক্যারিয়ারের। তবে অবসরের ঘোষণা দিলেও একাদশে তার জায়গা পাকা ছিল না। প্রথম টেস্ট খেলেই দ্বিতীয়টিতে জায়গা হারিয়েছিলেন দুই মাস আগে অভিষিক্ত লুঙ্গি এনগিডির কাছে। ৩ টেস্ট খেলা এনগিডি চোটে পড়াতেই নিউল্যান্ডসের চলতি টেস্টে ফিরে আসেন। ৩৩ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার সুযোগটা কাজে লাগালেন প্রথম ইনিংসের বোলিংয়েই। ৩০০ উইকেট মাইলফলকের বাকি থাকা তিনটি উইকেট তুলে নেন প্রথম দুই স্পেলেই। মরকেলের নাম যোগ হয় শন পোলক, ডেল স্টেইন, মাখায়া এনটিনি ও অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে। মূলত কাউন্টিতে খেলার জন্যই ৩৩ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মরকেল। সব মিলিয়ে টেস্ট ইতিহাসের ৩২তম বোলার হিসেবে ৩০০ উইকেটের মালিক হলেন তিনি। প্রোটিয়া বোলারদের মধ্যে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী শন পোলক। সাবেক এই ডানহাতি ফার্স্ট বোলারের উইকেট সংখ্যা ৪২১টি। ৪১৯ উইকেট নিয়ে তার পরের অবস্থানে ডেল স্টেইন। ২০০৬ সালে ডারবানে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক মরকেলের। ৮৫তম টেস্টে এসে ৩০০ উইকেটের কীর্তি গড়েন তিনি। ২০১০ সাল পর্যন্ত ২৪ টেস্টে তার উইকেট সংখ্যা ছিল ৪৯টি। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহেই জানিয়ে দিয়েছিলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজটাই হবে তার শেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। মরকেল বলেছিলেন, ‘এটা সত্যিই খুব কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। তবে আমার মনে হয়, এখনই সময় নতুন অধ্যায়ে পা রাখার। আমার একটি নতুন পরিবার এবং বিদেশী স্ত্রী আছে। এখনকার ব্যস্ত আন্তর্জাতিক সূচির সঙ্গে মানিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমি তাদের প্রাধান্য দিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন, যুক্তরাজ্যের লিগে কলপাক চুক্তিতে বড় অঙ্কের অর্থের জন্য জাতীয় দল ছাড়তে পারেন মরকেল। সেটাই কি সত্যি হলো? মরকেল কলপাকের ব্যাপারটি অস্বীকার না করলেও এজন্যই দেশের দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন, মানতে চাইলেন না, ‘আমার অন্য অনেক ব্যাপার আছে। এটা সত্য নয়।’ দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে প্রতিটি মুহূর্ত ভীষণ উপভোগ করেছেন জানিয়ে মরকেল বলেন, ‘প্রোটিয়া জার্সিতে আমি যতদিন খেলেছি, প্রতিটি মিনিট উপভোগ করেছি। সতীর্থ, ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা, পরিবার এবং বন্ধুদের আমার প্রতি পুরোটা সময়জুড়ে সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ মরকেলের বিদায়ের জন্যেই সিরিজটা আলোচিত হতে পারত। কিন্তু কেপটাউন টেস্টে বল টেম্পারিংয়ে জড়িয়ে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের ঘটনায় সেটি অনেকটাই চাপা পড়ে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কেপটাউন টেস্টে বল টেম্পারিংয়ের ঘটনায় অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারকে এক বছরের জন্য সকল ধরণের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পরও দু-জন আর কখনোই অধিনায়ক হতে পারবেন না বলেও জানিয়েছে সিএ। আর ঘৃণিত পরিকল্পনা যিনি মাঠে বাস্তবায়ন করে ঝড় তুলেছেন, সেই ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে ৯ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। ওদিকে সিএÑর এই ঘোষণার পর পরই বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া ফ্রাঞ্চাইজি টি২০ টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) থেকেও স্মিথ ও ওয়ার্নারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে পকেট থেকে শিরীষ কাগজ বের করে বল ঘষামাজা করেন ব্যানক্রফট। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে খোদ অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন স্মিথ। সদ্যই সাবেক হয়ে যাওয়া অধিনায়ক তবু দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। একদিন পর ভুল স্বীকার করে ওয়ার্নারও কাঁদলেন, তবে ৩১ বছর বয়সী ন্যাটা ওপেনার তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ দেখতে পাচ্ছেন। স্ত্রী-পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। দেশ-বিদেশের সংবাদ মাধ্যম তাঁকেই ঘটনার ‘নাটের গুরু’ বলে আখ্যায়িত করছে। শনিবার সিডনির প্রেস মিটে প্রশ্নবানে জর্জরিত ওয়ার্নার অনেক কিছুরই জবাব দেননি। ভবিষ্যতের জন্য তুলে রেখেছেন। স্মিথ-ওয়ার্নারের এমন বাঁধভাঙা কান্নায় বিশ্বজুড়ে তাদের প্রতি সমর্থন বাড়ছে। বলা হচ্ছে, তারা তো আর খুন করেননি।
×