ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের পাল্টা শুল্ক আরোপের জের

মার্কিন শেয়ারবাজারে ধস

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৪ এপ্রিল ২০১৮

মার্কিন শেয়ারবাজারে ধস

চীন অন্যায্যভাবে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে এসেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় থেকে এ অভিযোগ করে এসেছেন। তার অন্যতম নির্বাচনী কৌশল ছিল চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য অভিযোগ। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ট্রাম্প এখন দেশটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন। জবাবে চীনও পাল্টা ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে এখন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অনেক বড় বড় মার্কিন কোম্পানি আর্থিক ঝুঁকিতে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।- নিউইয়র্ক টাইমস জেনারেল ইলেকট্রিক এবং গোল্ডম্যান স্যাকসের মতো কৃষি ভিত্তিক কোম্পানিগুলো এখন হোয়াইট হাউসের কাছে শুল্ক আরোপের প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলেছে, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ও প্রযুক্তিখাতে চীনা বিনিয়োগের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের ফলে সবচেয়ে বড় বাজার হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চীন সোমবার ১শ’য়ের বেশি মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে মার্কিন শূকর পণ্য, ফল এবং ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম পণ্য রয়েছে। এর ফলে বিশ্বের দুটি বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড এ্যান্ড পুর-৫০০ সূচক ২.২৩ শতাংশ নেমে গেছে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সূচক আরও কমেছে। ফেসবুক, টেসলা এবং আমাজনের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর সম্প্রতি কিছুটা পড়ে গিয়েছিল, চীনের পাল্টা শুল্ক আরোপের পর এই ধারা অব্যাহত আছে। মঙ্গলবার এশিয়ার শেয়ারবাজারে দিনের শুরুতে সূচকের মান পড়ে যেতে দেখা গেছে। চীনের কর্মকা- বড় ধরনের বাণিজ্যিক বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের ইস্পাত ও এ্যালুমিমিনিয়ামের পর ওপর আমদানি শুল্ক আরোপের জবাবে চীন পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একথা জানায়। মার্চের শেষের দিকে বিশেষ করে চীনা পণ্যের ওপর ৬ হাজার কোটি ডলার শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতে চীনের বিনিয়োগের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এসব সিদ্ধান্ত চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, আগের সরকারগুলো চীনকে ইচ্ছা মতো মার্কিন বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি চুরি করার সুযোগ দিয়েছে। চীন যে ধরনের বাণিজ্যনীতি অনুসরণ করছে তার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ হাজার কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, অন্তত ৬০ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে বলে ট্রাম্প মনে করেন। চীনের কোন কোন কোম্পানি মার্কিন ট্যারিফের আওতায় আসবে সে বিষয়ে ট্রাম্প চলতি সপ্তাহে ঘোষণা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইনফরমেশন টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিলের গ্লোবাল পলিসি বিষয়ক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জশ কালমার বলেন, তিনি চীনের অন্যায্য বাণিজ্যিক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপকে সমর্থন করেন, কিন্তু শুল্ক আরোপের বিষয়টি সমর্থন করেন না। তার মতে, শুল্কের দায় শেষ পর্যন্ত ক্রেতাদের বহন করতে হবে। শেষ পর্যন্ত এটি হয়ে দাঁড়ায় ভোক্তাদের ওপর করারোপ করার মতো। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন তার উপদেষ্টা, রিপাবলিকান পার্টির সদস্য এবং ব্যবসায়ী নেতারা। চীনের একতরফা বাণিজ্যিক কর্মকা-ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলো কেবল সন্তুষ্ট হয়েছে। মার্কিন কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন অভিযোগ করে আসছিল চীন টেকনোলজি, মিডিয়া ও ফিন্যান্সের মতো খাতগুলোতে তারা যেন ঢুকতে না পারে সে লক্ষ্যে চীন অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করছে। চীন যেভাবে প্রতিবন্ধকতা আরোপ করছে সেটি ডব্লিউটিওতে দেয়া তাদের প্রতিশ্রুতিরও লঙ্ঘন। চীন ২০০১ সালে ডব্লিউটিওতে যোগ দেয়। চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি অভিযোগ তারা সাইবার ওয়ারফেয়ারের মাধ্যমে মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি চুরি করছে।
×