ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কামড়ালে মারা পড়বে মশা

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৪ এপ্রিল ২০১৮

কামড়ালে মারা পড়বে মশা

মশার কামড়ে বিভিন্ন রোগে অসুস্থ হয়ে মানুষ মারা যাবার ঘটনা বিরল নয়। কিন্তু আপনাকে কামড়ানোর ফলে মশা মারা গেলে কেমন হয়? কেনিয়ার এক গবেষণায় পাওয়া গেছে এমনই এক ওষুধ, যা খাওয়ার পর ২৮ দিন পর্যন্ত আপনাকে কামড়ালে মারা যাবে মশা। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, এ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধ ইভারমেকটিন খাওয়ার পর ২৮ দিন পর্যন্ত আপনার রক্ত খেয়ে মারা যাবে মশা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয় একটি উদ্ভাবন। ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কমিয়ে আনতে এই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। প্রতি বছর গড়ে ৫ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ার জীবাণু (প্লাজমোডিয়াম প্রোটোজোয়া) আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়ানো রোধ করবে ইভারমেকটিন। অতীতের গবেষণায় দেখা গেছে, ইভারমেকটিন সেবনে মানুষের রক্ত মশার জন্য বিষাক্ত হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশের গবেষকরা কেনিয়ার মানুষের ওপর পরীক্ষা করে দেখেন ঠিক কতটা ইভারমেকটিন ব্যবহারে সুফল পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যেই ম্যালেরিয়া ইনফেকশনে ভুগছেন এমন ১২৮ জন রোগীকে এই গবেষণায় নেয়া হয়। তাদেরকে ৩০০ মাইক্রোগ্রাম/কেজি বা ৬০০ মাইক্রোগ্রাম/কেজি ডোজে ইভারমেকটিন দেয়া হয়। গবেষণা নিখুঁত করার উদ্দেশে প্লাসিবো (নিষ্ক্রিয় ওষুধ) দেয়া হয় কিছু মানুষকে। এর পাশাপাশি তাদেরকে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসাও দেয়া হয়। এরপর ২৮ দিনব্যাপী রোগীদের রক্তের নমুনা নেয়া হয় এবং তা মশাকে পান করানো হয়। এসব মশা ছিল এ্যানোফিলিস গ্যামবি প্রজাতির। তারাই সাধারণত ম্যালেরিয়া ছড়াতে বেশি তৎপর। ফল হিসেবে দেখা যায়, যেসব রোগী সাতদিন ৬০০ মাইক্রোগ্রাম/কেজি ডোজে ইভারমেকটিন সেবন করছিলেন, তাদের রক্ত পান করে দুই সপ্তাহের মাঝে মারা গেছে ৯৭ শতাংশ মশা। ৩০০ মাইক্রোগ্রাম/কেজি ইভারমেকটিন সেবন করা মানুষের রক্ত পান করে মারা যায় ৯৩ শতাংশ মশা। গবেষণা পত্রে লেখা হয়, ম্যালেরিয়ার সাধারণ ওষুধ এবং ইভারমেকটিন দুটোই ব্যবহারের মাধ্যমে রোগের বাহক এবং ম্যালেরিয়ার জীবাণু দুটোরই ব্যবস্থা নেয়া হয়। এতে ম্যালেরিয়া ছড়ানোর সম্ভাবনা কমে। ইভারমেকটিন সাধারণত ২০০ মাইক্রোগ্রাম বা তারও কম ডোজে গ্রহণ করা হয়। তাই ৬০০ মাইক্রোগ্রাম ডোজে তা গ্রহণ করা নিরাপদ কিনা, এটাও দেখা হয় এই গবেষণায়। কিছু কিছু রোগীর মাঝে মৃদু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তিনজন রোগীর ইতোমধ্যেই যকৃতে সমস্যা ছিল বিধায় তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি হয়। গবেষণার ফলাফল আশাজনক হলেও একে নিরাপদ বলে ধরে নেবার আগে আরও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন, মনে করেন গবেষকরা। তবে ইভারমেকটিন যদি নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে ম্যালেরিয়ায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নতুনভাবে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬১ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসতে পারে। -ল্যানসেট জার্নাল
×