ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বাংলা ছবির সুদিন ফেরার প্রত্যাশায় জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদ্্যাপিত

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৪ এপ্রিল ২০১৮

বাংলা ছবির সুদিন ফেরার প্রত্যাশায় জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদ্্যাপিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হারিয়ে গেছে বাংলা চলচ্চিত্রের রমরমা সময়। তাই বলে একেবারে থেমেই যায়নি পথচলা। এখনও প্রেক্ষাগৃহের আলো-আঁধারিতে বসে ছবি দেখার আনন্দ উপভোগ করেন অনেকেই। তাই আবার ফিরে আসবে বাংলা ছবির সেই সুদিন-এমন প্রত্যাশায় উদ্্যাপিত হলো জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে ছিল বহুমাত্রিক আয়োজন। মঙ্গলবার সকাল থেকেই উৎসবমুখর হয়ে ওঠে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)। শোভাযাত্রা বের করার পাশাপাশি সকাল থেকে রাত অবধি ছিল নানা আনুষ্ঠানিকতা। বিএফডিসির পাশাপাশি দিবসটি পৃথকভাবে উদ্্যাপন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র কার্নিভাল, প্রীতি সম্মিলনী, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাজান ছিল একাডেমির আয়োজন। এ বছর বিএফডিসিতে বিভেদরেখার মাঝে দুই পৃথক আয়োজনে উদ্্যাপিত হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। সরকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চলচ্চিত্রকর্মীদের একাংশের দ্বন্দ্বের কারণে বিএফডিসির পাশাপাশি দিনটিতে পৃথক অনুষ্ঠান করেছে চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি। বিএফডিসির আয়োজন ॥ চৈতালী সকালে জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে একঝাঁক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে বিএফডিসির অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন হয়। ‘ঐতিহ্যের ভিত্তি ধরি, দেশের ছবি রক্ষা করি’ প্রতিপাদ্যে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ, সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক, বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেন, চলচ্চিত্র পরিচালক জাকির হোসেন রাজু, জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধর আবদুল আজিজ, চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া প্রমুখ। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে বের হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি এফডিসির সামনের সড়ক প্রদক্ষিণ করে। উদ্বোধনী বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপে যেভাবে বাংলাদেশ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়েছে, সেভাবে চলচ্চিত্র অঙ্গনও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চলচ্চিত্র অঙ্গনের সকলের চ্যালেঞ্জ ছিল আধুনিক প্রযুক্তি রপ্ত করা, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিনেমা নির্মাণ ও প্রদর্শন করা। চ্যালেঞ্জ ছিল জঙ্গী-সন্ত্রাস থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রকে উদ্ধার করা। এইসব চ্যালেঞ্জ থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজরে ডিজিটাল এফডিসিতে পরিণত হয়েছে এফডিসি। যেসব সমস্যা আছে তা খুব শিগগিরই সমাধান করা হবে। চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির অনুষ্ঠান ॥ জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উপলক্ষে বিএফডিসির সাউন্ড কমপ্লেক্সের সামনে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি। সকালে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন সৈয়দ হাসান ইমাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান, চিত্রনায়ক ফারুক, ইলিয়াস কাঞ্চন, চিত্রনায়িকা রোজিনা, চিত্রনায়ক জাভেদ, চলচ্চিত্র শিল্পী সংস্থার সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, চিত্রনায়িকা পপি, সাইমন, নাসরিন, মোহাম্মদ হোসেন জেমি, মুশফিকুর রহমান গুলজার, সুজাতা, শাহীন সুমন প্রমুখ। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। প্রয়াত চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের স্মরণে পালন করা হয় এক মিনিটে নীরবতা । এ আয়োজনের উদ্বোধনী বক্তব্যে সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী এফডিসিতে ষাট কোটি টাকা দিয়েছিলেন। এফডিসি কর্তৃপক্ষ সেই টাকা ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেনি। এমনভাবে যদি অপব্যয় হয় তাহলে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প আধুনিকায়ন হবে না, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাবে না। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী, কলাকুশলী ও কর্মীদের তরফ থেকে সবার সামনে আমি শপথ নিয়ে বলছি, এই চলচ্চিত্র বাঁচাতে প্রয়োজনে জীবন দেব। তবুও এই শিল্প ধ্বংস হতে দেব না। এ টি এম শামসুজ্জামান বলেন, চলচ্চিত্র বানাতে টাকা লাগে। সরকার ছবি বানানোর জন্য টাকা নানানভাবে ভাগ করে দিচ্ছেন। তাতে ভাল মানের চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে না। এটাকে আমার কাছে চলচ্চিত্রের ফিতরা মনে হয়। ঈদের ফিতরা যেমন হয়, এটা তেমনি চলচ্চিত্রের ফিতরা। এই টাকায় কী ছবি বানান যায় না কি? কাজেই এই চলচ্চিত্র দিবসে আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, ৪-৫ কোটি টাকা যাই বরাদ্দ থাকুক সেটা যেন দুজনের মধ্যে দেয়া যায়। যারা ভাল ছবি বানাতে পারেন। দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে টক শো, সেমিনার, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সম্মাননা প্রদানের আয়োজন করেছে চলচ্চিত্র পরিবার। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন রোজিনা, সাইফ খান, নিপুন, পপি, জায়েদ খান, সাইমন সাদিক, মাহিয়া মাহি, জয় চৌধুরী, রোমানা নীড়, সানজু জন, বিপাশা কবির, আসিফ নূর, মিষ্টি জান্নাত, শিপন মিত্র, শিরিন শিলাসহ এ প্রজন্মের নায়ক-নায়িকারা। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজন ॥ দিবসটি উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ দেশব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। আয়োজনে ছিল ঢাকা ও ৬৪ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র কার্নিভাল, সেমিনার, চলচ্চিত্রের আড্ডা, প্রীতি সম্মিলনী, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ছিল চলচ্চিত্র কার্নিভাল। জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আলোচনা। আলোচনা পর্বে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রনির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী, মশিহউদ্দিন শাকের, মোরশেদুল ইসলাম ও ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি লাইলুন নাহার স্বেমি। এতে ড. মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন ‘হীরালাল সেন - উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের উপেক্ষিত জনক’, অনুপম হায়াত ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র’ এবং বেলায়াত হোসেন মামুন ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র - আগামীর ভাবনা’ শিরেনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সবশেষে ছিল সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং প্রীতি সম্মিলনী ও চলচ্চিত্রের আড্ডা। দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়ন ও জাতীয় জীবনে সর্বস্তরের মানুষকে নিজেদের চলচ্চিত্র সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে ৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদ্যাপিত হয়ে আসছে। কাল থেকে সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন স্মৃতি নাট্যোৎসব ॥ পদাতিক নাট্য সংসদ (টিএসসি)- এর আয়োজনে কাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন স্মৃতি নাট্যৎসব ও স্মারক সম্মাননা ২০১৮’। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত হবে এই আয়োজন। শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালার মূল হল ও এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে পাঁচ দিনের এই নাট্যোৎসব। এ বছরের ‘সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন স্মারক সম্মাননার জন্য মনোনীত হয়েছেন নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন (মরণোত্তর) এবং অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। উৎসব উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন নাট্যসংগঠনটির সহ-সভাপতি শেখ মোসলেহ উদ্দীন, কে এম আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক দীপু, অনুষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক সৈয়দা শামছি আরা, সাংগঠনিক ও অর্থ সম্পাদক হামিদুর রহমান পাপ্পু, প্রচার ও গণযোগাযোগ সম্পাদক মোঃ শাখাওয়াত হোসেন শিমুল প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়, এবারের উৎসবে দেশের নয়টি এবং ভারতের একটি নাট্যদল অংশ নিচ্ছে। নাট্যদলগুলো হলোÑ পদাতিক নাট্য সংসদ, আরণ্যক নাট্যদল, প্রাচ্যনাট, পালাকার, দেশ নাটক, মনিপুরি থিয়েটার, অন্বেষা থিয়েটার, আগন্তক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ এবং ভারতের নাট্যদল ‘নাট্যজন’। শিল্পকলার দু’টি হলে প্রতিদিন দু’টি দলের নাটক পরিবেশনের পাশাপাশি নাট্যশালার সম্মুখের উন্মুক্ত মঞ্চে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টা পর্যন্ত থাকবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দলের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
×