ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জানতে চায় কারা কর্তৃপক্ষ

ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে খালেদার চিকিৎসা সম্ভব কি?

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৪ এপ্রিল ২০১৮

ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে খালেদার চিকিৎসা সম্ভব কি?

মশিউর রহমান খান ॥ কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কারাগারে নিয়োগকৃত ডাক্তারের বাইরের ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব কি না তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাইবে কারা অধিদফতর। সরকারের অনুমতিসাপেক্ষে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে কারা অধিদফতর। একইসঙ্গে মঙ্গলবার সকালে কারা অধিদফতরে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চারজন প্রফেসরের নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। রিপোর্টে খালেদা জিয়া অসুস্থ তবে গুরুতর নয় উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজধানীর বক্সীবাজারে কারা অধিদফতরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীনের কাছে এই রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে বলে কারাসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অপরদিকে দীর্ঘবছর নির্দিষ্ট ডাক্তার কর্তৃক চিকিৎসা গ্রহণ করায় ব্যক্তিগত ডাক্তার ছাড়া সরকারী কোন ডাক্তারের ওপর খালেদা জিয়া ভরসা করতে পারছেন না বলে কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। বন্দীর সুচিকিৎসার স্বার্থে কারা কর্তৃপক্ষও বিকল্প পথ খুঁজছে বলে কারা সূত্রে জানা গেছে। কারাসূত্র জানায়, রিপোর্টে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তার ব্যবহৃত বিছানা বালিশ পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম নিয়মিত করতে সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি ঘাড়ে, বাম হাতে ও পায়ে ব্যথাসহ আর্থাইটিস রোগে ভুগছেন। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে আগের চেয়ে বেশি ব্যথা অনুভব করছেন। তার জন্যই নতুন করে কিছু ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তার। কারাসূত্র জানায়, রিপোর্টে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া আগে থেকেই কিছু রোগে ভোগছেন বর্তমানে তা কিছুটা বেড়েছে তবে অসুস্থ হলেও গুরুতর বা মারাত্মক পর্যায়ে নয়। এছাড়া রক্ত পরীক্ষা ও হাত পাসহ বিভিন্ন স্থানের এক্সরেসহ নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, এসব চিকিৎসা কারাভ্যন্তরের হাসপাতালে প্রদান করা সম্ভব নয়। তাই বিষয়টি নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মতামত চাইবে। সূত্র জানায়, রিপোর্ট প্রাপ্তির পরপরই আরামদায়ক বালিশ ও বিছানা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কারাবিধিতে না থাকায় বাইরের চিকিৎকদের দিয়ে বন্দীর চিকিৎসা প্রদান করা যায় কি না তার জন্য অতি দ্রুত সরকারের অনুমতি চাইবে। কারা সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া তার ব্যক্তিগত পুরনো চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে চান। সরকারী কোন চিকিৎসকদের ওপর খালেদা জিয়ার পরিপূর্ণ আস্থা না থাকায় বন্দীর সুচিকিৎসার স্বার্থে কারা কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। খালেদার ব্যক্তিগত সকল চিকিৎসকই বর্তমানে সরকারী চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত। উক্ত চিকিৎসকগণ ইতোমধ্যে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা প্রদানের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। এমনকি কারা কর্তৃপক্ষ যে কোন সময় তাদেরকে ডাকলে চিকিৎসা প্রদানের জন্য কারাগারে আসতে রাজি রয়েছেন বলে জানা গেছে। কারাবিধি অনুযায়ী কোন বন্দী অসুস্থ হলে কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট চিকিৎসক তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এরপরও বাইরের কোন হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে কারা ডাক্তারের পরামর্শেই সরকারের যে কোন হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদানের জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু কারাগারে আসার আগেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়া দীর্ঘ বছর যাবত ব্যক্তিগত চিকিৎকদের দিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন বলে তাদেরকে দিয়েই বর্তমান অসুস্থতার চিকিৎসা গ্রহণ করতে চান। যা স্বাভাবিকভাবে কারাবিধি অনুযায়ী করা সম্ভব নয়। তাই কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের অনুমতিসাপেক্ষে কারাগারে ডেকে এনে ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা প্রদান করা যায় কি না তার জন্য চিঠি প্রদান করবে বলে জানা গেছে। এর আগে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসিরুদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যে চারজন অধ্যাপক খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দিয়েছিলেন, তারা চিকিৎসার একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। যা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে তারাই ব্যবস্থা নেবেন। সংবাদ সম্মেলনে মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শামছুজ্জামান বলেন, খালেদা জিয়ার ঘাড়, হাত ও পায়ে ব্যথা আছে। এ ব্যথার জন্য তিনি আগে থেকেই কিছু ওষুধ খেতেন। এগুলোর পাশাপাশি আরও কিছু ওষুধ ওই দিনই যোগ করা হয়েছে। রক্ত পরীক্ষা ও এক্স-রে করার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, কারাগারে আটক খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রবিবার দুপুরে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। প্রসঙ্গত গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সশ্রম দ-প্রাপ্ত আসামি হিসেবে পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
×