ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আপীল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদার জামিন হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৪ এপ্রিল ২০১৮

আপীল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদার জামিন হচ্ছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শীঘ্র জামিন পাচ্ছেন না। সুপ্রীমকোর্টে আপীল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদার জামিন স্থগিতই থাকছে। দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপীল (আপীলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করে আপীল বিভাগের দেয়া আদেশে এমন কথাই বলা হয়েছে। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জনকণ্ঠকে বলেন, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা পেয়ে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে লিভ টু আপীল মঞ্জুরের আদেশের অনুলিপি মঙ্গলবার হাতে পেয়েছি। আশা করছি রবিবারের মধ্যেই আপীলের সারসংক্ষেপ জমা দেব। খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে আপীল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত আদেশ প্রকাশিত হয়। ৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ আদেশের অনুলিপিটি লিখিছেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। এতে একমত হয়ে প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতি স্বাক্ষর করেছেন। অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। এতে বলা হয়, দুদক ও সরকার পক্ষের আইনজীবী যে গ্রাউন্ড দিয়েছেন তাতে আমরা মেরিট খুঁজে পেয়েছি। তাই দুটি আপীলের অনুমতি দেয়া হলো। এবং আপীল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিত করা হলো। আপীলকারীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে মামলার সারসংক্ষেপ জমা দিতে বলা হলো। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী এ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান জনকণ্ঠকে বলেন, আপীল বিভাগ দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে আপীলের সারসংক্ষেপ জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আশা করছি আগামী রবিবার আপীলের সারসংক্ষেপ জমা দেব। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সরকার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেন বিচারিক আদালত। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অপর পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদ- এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা অর্থদ-ও করা হয়। রায়ের পর থেকে বিএনপিপ্রধান নাজিমউদ্দিন রোডের পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। নিম্ন আদালত থেকে ওই মামলার নথি হাইকোর্টে আসার পর তা দেখে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১২ মার্চ খালেদার চার মাসের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে তার আপীল শুনানির জন্য ওই সময়ের মধ্যে সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে পেপারবুক প্রস্তুত করারও নির্দেশ দেন। কিন্তু হাইকোর্টের দেয়া এ জামিন আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার জজের আদালতে আবেদন করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ। চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এই দুটি আবেদনের বিষয়ে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন নির্ধারণ করে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ মার্চ আপীল বিভাগ দুদকের আইনজীবীর আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে তাকে (দুদক আইনজীবীকে) লিভ টু আপীল করার নির্দেশ দেন। এ সময় দুদকের আরেক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ মার্চ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত করেন এবং একইদিনে (১৮ মার্চ) দুদকের লিভ টু আপীলের শুনানির দিন ধার্য করেন। আপীল বিভাগের দেয়া হাইকোর্টের জামিন স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে ওইদিন (১৪ মার্চ) দুপুরে চেম্বার আদালতে যান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এই (প্রত্যাহার) আবেদনটি ১৮ মার্চ আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে দুদকের লিভ টু আপীলের সঙ্গে শুনানির দিন ধার্য করেন। পরদিন (১৫ মার্চ) সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দুদকের পক্ষ থেকে লিভ টু আপীল দায়ের করা হয়। সেই সঙ্গে ওই লিভ টু আপীলের আরেকটি প্রার্থনা চায় দুদক। খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত চেয়ে দুদকের লিভ টু আপীল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ যেন স্থগিত থাকে সেজন্য আরেকটি পৃথক প্রার্থনা করে দুদক। এদিকে দুদকের পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপীল দায়ের করা হয়। একইসঙ্গে এই লিভ টু আপীলের শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত রাখতে দুদকের মতো পৃথক আরেকটি প্রার্থনাও জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দুদক এবং রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা দুটি লিভ টু আপীল শুনানিকালে আপীল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশের ওপর যে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন তা প্রত্যাহার চেয়ে পৃথক দুটি (দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে) আবেদন করেন। গত ১৯ মার্চ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দ-িত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে আপীলের অনুমতি দেন আপীল বিভাগ। দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে এবং পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে আসামিপক্ষকে আপীলের সারসংক্ষেপ জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে এ আপীল শুনানির জন্য ৮ মে দিন ধার্য করে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আপীল বিভাগ।
×