ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাহারি রং ও ডিজাইনের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত ফ্যাশন হাউস

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৪ এপ্রিল ২০১৮

বাহারি রং ও ডিজাইনের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত ফ্যাশন হাউস

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ‘পয়লা বৈশাখ আইতাছে। তাই আমাগো খুব ব্যস্ততা। দিন রাত এক করে বিভিন্ন কাপড়ের ওপর ব্লক-বাটিক ডিজাইনে রাঙাচ্ছি। নারী-পুরুষ সবার জন্যই এবারের পয়লা বৈশাখে কাপড়ের ওপর নিত্যনতুন ডিজাইনের ব্লক-বাটিক করা হচ্ছে।’ কথাগুলো বলছিলেন জোছনা ব্লক প্রিন্ট ও বুটিক দোকানের এক কারিগর। তার নাম আজমত। বিগত ৩ বছর ধরে তিনি এই দোকানে কাজ করছেন। রং নিয়ে খেলাই যেন তার কাজ! তার দু’হাতে বিভিন্ন রঙের সংমিশ্রণ। এক একটি করে ব্লকের ডাইস রঙে ডুবিয়ে তা নির্দিষ্ট কাপড়ের ওপর ছাপ দিয়ে চলেছেন আজমত। তার মতো অনেক কারিগর এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্লক-বাটিকের কাজ করে। নববর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমরা। আর নববর্ষকে বরণ করে নিতে বছরের পর বছর বাঙালীয়ানার সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে ব্লক-বাটিক প্রিন্টের শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, থ্রি-পিছ। বৈশাখ উপলক্ষে প্রতিবছর ঋতুকে প্রাধান্য দিয়ে পোশাকে আসে বৈচিত্র্য। এ বছরেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছে রাজধানীর ফ্যাশন হাউসগুলো এবং নিউ মার্কেটের বুটিক হাউসগুলোতে তৈরি হচ্ছে মানানসই নক্সায় বাহারি রঙের পোশাক। সবচাইতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্লক নিয়ে যারা কাজ করেন তারা। রঙবেরঙ ফ্যাশন হাউসের কর্ণধার ইকবাল আহমেদ জানান, এখন আমরা অনেক ব্যস্ত। বছরের অন্য যেকোন উৎসবের সময় থেকে পহেলা বৈশাখে আমরা বেশি ব্যস্ত থাকি। কারণ এই একটি উৎসবই সব ধর্মের লোক পালন করে থাকে। তাই এই সময় বেচাকেনার চাহিদাও বেশি থাকে। তিনি আরও জানান, এই শেষ সময়ে হয়ে তো আপনি আপনার মনের মতো বা ইচ্ছা মতো ডিজাইন দিয়ে কিছু করতে চাইলে নাও করতে পারেন। কারণ এই সময় ব্লক দোকানিরা আগের নেয়া অর্র্ডার পূরণ করা নিয়েই ব্যস্ত। তবে আপনি চাইলে এখান থেকে পছন্দ মতো ফতুয়া, টপ, কামিজ, শার্ট, প্যান্ট, আফগানী প্যান্ট, পাকিস্তানী ফতুয়া, ধুতি ইত্যাদি কিনে নিতে পারবেন। কারণ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আমরা অনেক পোশাক তৈরি করেই রাখি। আর এখানে দাম খুব বেশি পড়বে না। বৈশাখ মানে নানা রঙের সমাহার। আগের মতো তা কেবল লাল-সাদায় সীমাবদ্ধ থাকে না। ডিজাইনাররাও তাদের ডিজাইনে নতুন কিছু আনার চেষ্টা করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হচ্ছে সবকিছু। নানা রঙের নানা ঢংয়ের পোশাক।’ সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর নিউমার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে ব্লক ও বাটিকের দোকান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুতি কাপড় বেছে নেয়া হয় ব্লক ও বাটিকের জন্য। তাই গরমেও বেশ স্বস্তি পাওয়া যায়। অর্ডারের পাশাপাশি এসব ব্লক-বাটিকের দোকান থেকে কেনা যাবে পছন্দসই শাড়ি, থ্রি-পিস ও চাদর। নিউমার্কেটের তৃতীয় তলায় এমআর ব্লক এ্যান্ড বাটিক দোকানের কারিগর ও বিক্রেতা মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, এখানে ব্লকের কামিজের দাম সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা এবং আফসান ব্লকের দাম পরবে ৭শ’ টাকা। বাটিকের থ্রি-পিসের দাম সাড়ে ৫শ’ টাকা। হ্যান্ডপেইন্টের থ্রি-পিস ৭শ’ টাকা। শাড়ির দাম ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা। তবে কাজ ভেদে দামের পার্থক্য হবেই। জোছনা ব্লক প্রিন্ট ও বুটিক দোকানের বিক্রেতা পায়েল বলেন, এখানে ব্লকের থ্রি-পিস পাওয়া যাবে সাড়ে ৪শ’ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকায়। বাটিকের কামিজে সুতার কাজ করা এবং জর্জেটের ওড়না এমন থ্রি-পিস মিলবে সাড়ে ৬শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকায়। বাটিকের থ্রি-পিস ৫শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকা। মিতু ব্লক প্রিন্ট ও বুটিক দোকানে পাওয়া যাবে চুমকি বসানো বাটিকের থ্রি-পিস দাম ৭শ’ টাকা এবং সাধারণ বাটিকের থ্রি-পিস ৫শ’ টাকা। এছাড়াও এইসব দোকানে পাওয়া যাবে কলার লাগান ব্লক ও বাটিকের থ্রি-পিস, দাম ৮শ’ টাকা। এছাড়াও এখানে পাওয়া যাবে ব্লক ও বাটিকের শাড়ি। সাধারণ বাটিকের শাড়ির দাম ৭শ’ টাকা এবং চুমকি বসানো শাড়ির দাম ৯শ’ টাকা। অর্ডার দিতে চাইলে কমপক্ষে ১০ পিসের অর্ডার দিতে হবে। দাম প্রতিপিস ৭শ’ টাকা। সময় লাগবে ১৫ দিন। ব্লকের কামিজ এক বা দুই পিস অর্ডার দেয়া যাবে এতে ১৫ দিন সময় লাগবে এবং খরচ পরবে ৭শ’ টাকা। দ্বিতীয় তলায় সিঁড়ি প্রান্তে পাওয়া যাবে বাটিকের গজ কাপড়। প্রতিগজ কাপড়ের দাম পরবে ১শ’ থেকে ১২০ টাকা, জানালেন বিক্রেতা শরীফ। নিউমার্কেটের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে পুরুষদের জন্য বাটিকের পসরা। এখানে পাওয়া যাবে বাটিকের পাঞ্জাবি, ফতুয়া ও শার্ট এবং ছোটদের জন্য ফতুয়া। দাম ও মাপ ভেদে ১শ’ থেকে দেড় শ’ টাকা। বড়দের ফতুয়ার দাম ৩শ’ টাকা বলে জানান তাসনিয়া এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা। নিউমার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ছাড়াও নিচ তলায় ও গাউছিয়া মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যাবে ব্লক, বাটিক ও হ্যান্ড পেইন্টের থ্রি-পিস, গজ কাপড়, শাড়ি ও চাদর। তবে নিজ পছন্দ অনুযায়ী অর্ডার দিতে হলে যোগাযোগ করতে হবে ওই সব দোকানে। মোহাম্মদপুর থেকে আগত এক ক্রেতা নীলা রহমান বলেন, ‘গরমে বাটিক আরামদায়ক। বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাকে পরিবর্তন আসলেও ব্লক-বাটিক নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বিভিন্ন উৎসবে এমনকি সব সময় ব্যবহারের জন্য বাটিকের থ্রি-পিসের জুড়ি নেই। এছাড়া আমরা বাটিকে বিভিন্ন পোশাক কম দামে পেয়ে থাকি। এজন্য তিনি নিয়মিত বাটিক প্রিন্টের কাপড় ব্যবহার করে থাকেন বলে জানান নীলা। আরেক ক্রেতা তামান্না আশরাফ জানান, তিনি দেশীয় পণ্য ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করেন। সেই দিক থেকে বাটিক তার পছন্দের তালিকায় সবার আগে। বাটিকের রং, আরামদায়কতা ও নানারকমের নক্সা তাকে বেশ আকর্ষণ করে। তিনি মনে করেন বাটিকের একটি আলাদা স্বকীয়তা আছে যা ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে। আর এর সব কিছুর পাশাপাশি বোনাস হিসেবে ব্লক-বাটিকের নক্সার করা পোশাকের তুলনামূলক দাম কম।
×