ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালীর শুদ্ধ সংস্কৃতির কাণ্ডারির আজ ৮৫তম জন্মদিন

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৪ এপ্রিল ২০১৮

বাঙালীর শুদ্ধ সংস্কৃতির কাণ্ডারির আজ ৮৫তম জন্মদিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে যাহা-কিছু সব আছে আছে আছে...। সন্জীদা খাতুন সেই পূর্ণতার নাম। অন্যায় অশুভর বিরুদ্ধে সংগ্রাম তার। সুন্দরকে বুকে বাঁচিয়ে রাখেন। বাঁচিয়ে রেখেছেন এই এখনও। এভাবে অহর্নিশ সংগ্রামী পা রেখেছেন ৮৫ তে। আজ ৪ এপ্রিল বাঙালীর সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামের পুরোধা বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী গবেষক ও ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুনের পৃথিবীতে শুভাগমনের দিন। ১৯৩৩ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জীবনের একেবারে শুরু থেকেই বেছে নিয়েছিলেন প্রগতির পথ। সারাজীবন এই পথে হেঁটে মুক্তির সন্ধান করেছেন। আজ তার দেখানো পথ ধরে চলেছে অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী। সনজীদা খাতুনের জন্মদিন তার নিজেকে যতটা আলোড়িত করে তারও বেশি উদ্বেলিত করে যেন ভক্ত অনুরাগীদের। একদিন আগে থেকে তাই শুরু হয়ে গিয়েছিল জন্মদিনের উৎসব। আজও ভালবাসার মানুষেরা ফুল নিয়ে ছুটে যাবেন তার কাছে। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবেন। দীর্ঘায়ু কামনা করবেন। পাশাপাশি জন্মদিন উপলক্ষে আজ বুধবার সন্ধ্যায় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে ছায়ানট। সন্জীদা খাতুন বাঙালিত্বের বোধ সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সারাজীবন কাজ করেছেন। এরপরও অক্লান্ত তিনি। নিজের বিশ্বাসের প্রতি অবিচল। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির আলোয় পৃথিবীর মুখ দেখার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছেন। কবিগুরুর গানের বরেণ্য শিল্পী ও গবেষক তিনি। সংগঠক হিসেবে পেয়েছেন ঈর্ষণীয় সাফল্য। আর এখন বাঙালিত্ব চর্চার বাতিঘর ছায়ানটের সভাপতি। বার্ধক্যের কারণে বাসায় বেশি সময় কাটান। তবে কাজের মধ্যেই কাটে। জন্মদিনের অনুভূতি জানতে চাইলে সন্জীদা খাতুনের বলাটি এ রকমÑএ পর্যন্ত আমার জীবনে আমি যা দেখলাম, অনেক চলে এসেছি না আমরা! অনেক কিছু করতে পেরেছি। এবং আরও করে যাব। আমাদের সময় আসবে। আমরা তো কোন চটুল লঘু বিষয়ের চর্চা করছি না। আমরা বাঙালীর একেবারে নিহিত যে ভাবটা, যে সৌন্দর্যটা সেটার চর্চা করছি। তাই আমার কোন হতাশা নেই। হতাশার কোন কারণই আমি দেখি না। অনেক রকমের মানুষ দেশে বাস করে। এটা বুঝতে হবে। কাজেই আমরা হেরে যাইনি। শেষ পর্যন্ত হেরে যাব না। সন্জীদা খাতুন ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ অনার্স করেন। ১৯৫৫ সালে বিশ্বভারতী থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্যে এমএ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে তিনি ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ’ গবেষণাপত্রে পিএইচডি লাভ করেন। সন্জীদা খাতুন ১৯৫৭ সাল থেকে ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে প্রফেসর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। কর্মময় জীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার ইত্যাদিতে ভূষিত করা হয়েছে। তবে শুধু এপার বাংলার নন সন্জীদা খাতুন। তার অবদানের কথা জানে ওপার বাংলার সকল বাঙালী। আর তাই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সন্জীদা খাতুনকে সর্বোচ্চ সম্মান ‘দেশিকোত্তম’ প্রদান করেছে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ‘রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার’, কলকাতার ‘টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ থেকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি, বেগম জেবুন্নেছা ও কাজী মাহবুবউল্লাহ জনকল্যাণ ট্রাস্টের স্বর্ণপদক ও সম্মাননা, ‘সা’দত আলী আখন্দ’ পুরস্কার, ‘অনন্যা’ পুরস্কার, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সম্মানজনক ফেলোশিপ, বিজয় দিবস পদক, ২০০৯ বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র-পুরস্কার লাভ করেন তিনি। লেখক ও সম্পাদক হিসেবেও অত্যন্ত সফল সন্জীদা খাতুন। সন্জীদা খাতুনের আরও একটি বড় পরিচয়- তিনি বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনের সুযোগ্য কন্যা। সন্জীদা খাতুনের জন্মদিন উপলক্ষে আজ ধানম-ির ছায়ানট ভবনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও খুব ঘনিষ্ঠরা বাসায় গিয়ে তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবেন। আজকের দিনে জনকণ্ঠের পক্ষ থেকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা তাঁকে। শুভ জন্মদিন প্রিয় সন্জীদা খাতুন।
×