ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পানি সঙ্কট এবং পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ৪ এপ্রিল ২০১৮

পানি সঙ্কট এবং পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ

দেশে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট কাটছে না। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় পানির সঙ্কট অত্যন্ত প্রবল। রমজানেও কাটবে না পানি সঙ্কট এমন সংবাদই পত্রিকায় দেখলাম। রাজধানীবাসীর জন্য এটা দুঃসংবাদই বটে! সংবাদে বলা হয়েছে, চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহের পরিমাণ বর্তমানে অনেকটাই কম। ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর আমাদের অধিক নির্ভরশীলতার কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর তিন হতে ১০ মিটার পর্যন্ত নেমে গেছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী পানি পাওয়া যাচ্ছে না। নদ-নদীর দেশ বাংলাদেশে রয়েছে পানির সঙ্কট! ১৬ কোটি মানুষের ৯৭ শতাংশের পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা গেলেও বিশুদ্ধ পানির অভাব এ দেশেও প্রকট। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বাংলাদেশের সাড়ে ৯ কোটি মানুষই বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নদ-নদীর দেশ বাংলাদেশের উজানে ভারতে একের পর এক বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহারের কারণে দেশের নদ-নদীগুলো শ্রী হারাচ্ছে। দেশের বৃহত্তম নদী পদ্মার ৬০ ভাগ এলাকাজুড়ে চর জেগেছে। তিস্তা অববাহিকায় বিরাজ করছে হাহাকার। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। ঢাকা ওয়াসার আওতাধীন এলাকায় দৈনিক পানির চাহিদা ২২৫ কোটি লিটার। এর মধ্যে উৎপাদন হচ্ছে ২১০ কোটি লিটার। এ পানির সবটাই আবার পানযোগ্য নয়। অনেক এলাকায় সরবরাহকৃত পানি ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। যেসব এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ, সেখানে ওয়াসার পানিবাহী গাড়ির মাধ্যমে সমস্যা কিছুটা নিরসনের সুযোগ থাকলেও এক্ষেত্রেও রয়েছে দুঃসংবাদ। ঢাকা ওয়াাসার ৩২টি পানি সরবরাহকারী গাড়ির ১২টিই বিকল। অর্থাৎ রমজানে মাত্র ২০টি গাড়ি দিয়ে চলবে পানি সর্বরাহের কাজ। মূলত সুপেয় পানি সঙ্কট প্রকট হয়েছে। রাজধানীতে কেবল খাবার পানি নয়, ব্যবহারের পানিও মিলছে না কোন কোন এলাকায়। প্রশ্ন হলো কেন এই পানি সঙ্কট? আবর্জনা, কলকারখানার বর্জ্য, মলমূত্র নদীনালায় পড়ে পানীয় জলকে দূষিত করছে। বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার চারপাশে দেখা যায় আবর্জনার স্তূপের পাশাপাশি ও অসংখ্য শৌচাগার। নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষরা গৃহস্থালির বর্জ্য নদীতে ফেলছেন। এসব আবর্জনা পচে অবস্থাকে আরও সঙ্গিন করে তুলছে। এমনকি রাজধানীর লেকগুলোও দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। ওয়াসার পানিতেও ভীষণ দূষণ। পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াসার ওপরও নির্ভর করতে পারছে না মানুষ। পাইপ দিয়ে দুর্গন্ধময় নোংরা পানি ও বর্জ্য আসছে। অনেক ক্ষেত্রে পাইপে ছিদ্র হয়েও এ রকমটি ঘটে থাকে। গ্রীষ্মকালে অবস্থাটা চরমে ওঠে। এই পানি পান বা ব্যবহার করে কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, চর্মরোগ ইত্যাদি অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। হাসপাতালগুলোও সামলাতে পারে না রোগীর চাপ। ঢাকা ওয়াসার পানি দূষিত হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে ৪টি প্রধান কারণ বলা যেতে পারে। তা হলোÑ ১. ভূগর্ভস্থ পানি ছাড়া নদী থেকে সরবরাহ করা পানি সঠিক উপায়ে শোধন না করা, পানির জলাধারগুলো রক্ষণাবেক্ষণ না করা তদুপরি শোধনাগারে পানি শোধনের সময় সঠিক পরিমাণে শোধন কেমিক্যাল না দেয়া, ২. পর্যাপ্ত দূরত্ব রক্ষা না করে সমান্তরালে পানির লাইন ও পয়ঃনিষ্কাশন লাইন স্থাপন, নাগরিক সচেতনতার অভাব এবং ওভারহেড ট্যাঙ্ক নিয়মিত পরিষ্কার না করা। ঢাকা শহরের বহু পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন লাইন যুগ-প্রাচীন। সেই কবে স্থাপন করা হয়েছে। এরপর জোড়াতালি ছাড়া কার্যত কিছু করা হয়নি। তদুপরি অনেক ক্ষেত্রে লাইনগুলো গায়ে গায়ে লাগানো। ফলে কোন কারণে দুটি লাইনের কোন একটি অংশ ফেটে বা ভেঙে গেলে খাবার পানির সঙ্গে ময়লা আবর্জনা মিশে যায়, ৩. অনেক সময় রাস্তার পাশের বাসিন্দা পানি বা সুয়ারেজ লাইন নেয়ার জন্য লোক নিয়োগ করেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা থাকে অদক্ষ। ফলে কোদাল চালাতে গিয়েও পাইপ ফেটে যায়। খাবার পানির সঙ্গে ময়লা মিশ্রিত হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়, ৪. ওভারহেড ট্যাঙ্ক নিয়মিত পরিষ্কার না করাও পানি দূষিত হয়ে পড়ার জন্য কম দায়ী নয়। এর ফলে ট্যাঙ্কে শুধু শেওলা জমা হয় না, ইঁদুর-বিড়াল পড়ে ও পচে-গলে পানি দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত করে। অথচ কি গরম কি শীত! সারাক্ষণই মনে হয় গলাটা যদি একটু ভেজানো যেত। কিন্তু সেখানেই বিপত্তি। যেখানে-সেখানের পানি দিয়ে তো আর তৃষ্ণা মেটানো যায় না। কেননা, পানি বিশুদ্ধ না হলে রয়েছে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়। আর গরমে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব যে সবচেয়ে বেশি তা সবারই জানা। নিজের স্বাস্থ্য রক্ষার খাতিরে দূষিত পানি পান না করে পানির বিশুদ্ধতা রক্ষা করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা দরকার সবার। এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার করণীয় সবচেয়ে বেশি। সার্বিকভাবে ঢাকা শহরের আসন্ন পানি সঙ্কট নিয়ে শীঘ্রই কোন উদ্যোগ না নিলে তা আস্তে আস্তে ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। কথায় আছে দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে আমরা সচেতন হই না। ঢাকার পানি সমস্যার সঙ্গে ওয়াসা তথা সরকারের পদক্ষেপ দেখে কিন্তু তারই প্রমাণ মেলে। কিন্তু আমরা চাই জীবন রক্ষাকারী পানীয় জলের সমস্যার সঠিক সমাধান। পানির সঙ্কট না মিটলে ঢাকাবাসীই অসুস্থ হয়ে পরবে না সমস্যায় পড়বে সরকারও। বাংলাদেশের পানীয় জল-সমস্যার কারণ বিবিধ। কিন্তু প্রায় সব কারণই মানুষের তৈরি। কারণগুলো কি? ১. বাংলাদেশের জনবিস্ফোরণ এই সমস্যার অন্যতম কারণ। বছর-প্রতি বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.০৭%, বছর-প্রতি এই বিপুল হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলেও জলসম্পদ কিন্তু একই থাকছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে প্রচুর মানুষ জলাভাবে পড়বে। ২. সাধারণ মানুষের দায়িত্বহীনটাও জল-সমস্যার অন্যতম কারণ। এই ভোগবাদী সমাজে সকলেই কেবল নিজের স্বার্থ দেখে। আগামী প্রজন্মের দিকে নজর না রেখে নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য জলের ব্যাপারে হয় অমিতব্যয়ী। ফলে জলসম্পদ আজ খাদের কিনারে এসে পৌঁছেছে। ৩. দ্রুত নগরায়ন ঘটানোও এর এক অন্যতম কারণ। কোন নগরে এক সঙ্গে বহু লোক বসবাস করায় সেই অঞ্চলের সীমিত জলের ভাড়ারে টান পড়ে। ফলে জল-সমস্যা দেখা দেয়। ৪. আরও এক অন্যতম কারণ, আমাদের দেশের বেশকিছু অংশে ভূ-পৃষ্ঠ জলরাশি ব্যবহার না করে ভূ-গর্ভের জল ব্যবহার করে পাম্পের সাহায্যে ওপরে এনে জমিতে ব্যবহার করা। প্রশ্ন হলো পানীয় জল-সমস্যার সমাধানের উপায় কি? ১. বৃষ্টির পানির ব্যবহগার বাড়াতে হবে। বৃষ্টির জল সংগ্রহ। আমরা একটা খুব সহজ উপায়ে বৃষ্টির জলকে সংগ্রহ, সঞ্চয় ও পরিশুদ্ধ করে পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। ছাদে জমা বৃষ্টির জল পাইপের মাধ্যমে একটি ট্যাঙ্কে পাঠানো যেতে পারে। ছাদে পড়ে থাকা শুকনো পাতা, ধুলো, ইত্যাদি যাতে মাটির নিচের জলাধারে না ঢোকে, তার জন্য একটি জালি পাইপের মুখে বসাতে হবে। এই জলকে খাওয়ার উপযোগী করে তুলতে পরিশোধন করতে হবে। এক চামচ ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ২০০ লিটার জল বা একটা ০.৫ গ্রাম ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়ে ২০ লিটার জল পরিশুদ্ধ করা যায়। তবে সতর্কতা হিসেবে বৃষ্টির প্রথম ১০-১৫ মিনিটের জল সংগ্রহ না করাই উচিত। তাতে নানা দূষণের সম্ভাবনা থাকে। ২. সেচের কাজে ভূগর্ভের জল ব্যবহার কম করা, যেখানে সম্ভব সেখানে ভূগর্ভের পানীয় জল সেচের কাজে না লাগিয়ে, খাল কেটে নিকটস্থ বিল, নদী বা জলাশয় থেকে জল এনে সেচের কাজে লাগানো যেতে পারে। ৩. বৃষ্টির জলকে ভূগর্ভে পাঠানো,Ñ লোহা-কংক্রিট এ ভরা এই শহরে বৃষ্টির জল মাটির ছোঁয়া পায় না। সেই জল ড্রেনের মাধ্যমে নদী হয়ে সাগরে চলে যায়। ফলে এই জল ভূ-পৃষ্ঠেই থেকে যায়, ভূ-গর্ভে আর যায় না। তাই কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিখাত তৈরি করে সেখানে কুয়ো তৈরি করে দ্রুত বৃষ্টির জলের কিছু অংশ ভূ-গর্ভে চালান করে প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারি। যদিও কাজ জটিল, পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে তা করা জরুরী। ৪. পানির আঁধারগুলো (নদী) দূষিত না করা। নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করতে হবে। নদীর পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এদেশে পানি নিয়ে আলোচনা আর গবেষণা হয় খুব কম। এ ভয়ঙ্কর সমস্যাটির দিকে এখনই আলোকপাত না করলে ভবিষ্যতে এর ফল হবে মারাত্মক। বৃষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ৭টি রাজ্যে ইতোমধ্যে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সেখানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে মানুষ সচেষ্ট হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশেও এ জাতীয় আইন করা যেতে পারে। জল-সমস্যার মুক্তির সহজ পথকে দেশের মানুষের মন থেকে গ্রহণ করতে হবে। পানির সমস্যা যে কেবল বাংলাদেশের তা অবশ্য নয়। বলতে গেলে সমস্যাটি বিশ্বব্যাপী। বলা হয়ে থাকে যে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি কখনও বাঁধে তা হলে তা বাঁধবে পানি নিয়ে। বিশ্ব জুড়ে পানি সঙ্কটের কারণ যতটা না প্রকৃতিগত, তার চাইতে অনেক বেশি মনুষ্যসৃষ্ট। বিশ্বের ২৬০টি দীর্ঘ ও বৃহৎ নদী দুই বা ততোধিক দেশের মধ্য দিয়া প্রবাহিত। নদ-নদীর পানি ব্যবস্থাপনা ছাড়াও পরিবেশ-প্রতিবেশগত আরও নানা কারণে দুনিয়ার দেশে দেশে বিশুদ্ধ পানির সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে এরই মধ্যে। ওয়ার্ল্ড ওয়াটার কাউন্সিলের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ আজ সুপেয় পানির অধিকার হতে বঞ্চিত। পৃথিবীতে প্রতিদিন গড়ে ৩৯ হাজার শিশু মারা যায় পানিবাহিত রোগে। ডায়রিয়ায় মারা যায় ১০ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। বলাবাহুল্য, ডায়রিয়া রোগের প্রধান কারণ দূষিত পানি। ইতোমধ্যে বিশ্বের ৮৯ শতাংশ মানুষ পরিষ্কার পানি পাচ্ছেন। বিশেষ করে চীন ও ভারতে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পানি সরবরাহেরও উন্নতি হয়েছে। ২০১৫ সাল নাগাদ ৯২ শতাংশ মানুষের কাছে পরিষ্কার পানি পৌঁছে দেয়া যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেছিল জাতিসংঘ। কিন্তু সে লক্ষ্যে এখনও পৌঁছা যায়নি। বিশ্বের জনসাধারণের একটা বিরাট অংশ অর্থাৎ ১১ শতাংশ মানুষ বিশুদ্ধ পানি পান থেকে বঞ্চিত। অন্য কথায় পৃথিবীর প্রায় ৮০ কোটি (৭৮৩ মিলিয়ন) মানুষ প্রতিদিন দূষিত পানি পান করছে। জাতিসংঘে সুপেয় পানির অধিকারকে মানবাধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হলেও সেখানে লক্ষ্য করা যায় যে, শুধু কাগজে-কলমে আইন করে কাজ হয় না। আমার মনে হয় এটা অত্যন্ত জটিল বিষয়, যার বাস্তবায়নও সহজ নয়। এজন্য প্রয়োজন বিশেষ কলাকৌশলের। পৃথিবীর চার ভাগের মধ্যে তিন ভাগ জল। কিন্তু এই বিশাল পরিমাণ জলের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ জল পান করার যোগ্য। আবার এই পানীয় জলের একটা বড় অংশই রয়েছে বরফ হিসাবে। এই অ-লবণাক্ত পানীয় জলের বাকি অংশ রয়েছে ভূ-পৃষ্ঠে ও ভূ-গর্ভে। আমরা প্রধানত পানীয় জল হিসেবে এই ভূ-গর্ভস্থ জল ব্যবহার করি। এই জলের ৮৩% জল ব্যবহার হয় কৃষিকার্যে ও বাকি ১৭% শিল্প, গৃহস্থালি ও পানীয় জল হিসেবে। তাই পৃথিবীর জলসম্পদ যা অফুরন্ত উৎস হিসাবে গণ্য হতো তা আজ বিরল সম্পদে পরিণত হচ্ছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে গোটা পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ মানুষ পানীয় জলের অভাবের মুখোমুখি হবে। বাংলাদেশের অবস্থা হবে ভয়াবহ। এ বিষয়টি নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। বলা হয়, পানির অপর নাম জীবন যদি সেই পানি বিশুদ্ধ হয়। এই পানি আমরা কি পাচ্ছি? পানি বিশুদ্ধ না হলে তা হয়ে ওঠে রোগ-ব্যাধি এমন কি মৃত্যুর কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবদেহের শতকরা ৭৫ ভাগ রোগের কারণ পানি। বলাবাহুল্য, দূষিত পানি। বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা বিধান করা সম্ভব হলে মানুষ ৭৫ শতাংশ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। বিপুল অঙ্কের চিকিৎসা ব্যয় থেকে রেহাই পেতে পারে। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, পানির প্রাকৃতিক উৎসকে কেন্দ্র করেই মানবসভ্যতাগুলো গড়ে উঠেছে। পানি যেখানে সহজপ্রাপ্য হয়েছে, সেখানেই জনবসতি গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। ইতিহাসবিদদের অনেকের ধারণা, পানির অভাব ও পানির দূষণ কিংবা বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে অনেক সভ্যতা ও বসত বিলীন হয়ে গেছে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য, স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপনের জন্য পানির অপরিহার্যতা প্রশ্নের অতীত। এককালে পানির প্রাকৃতিক উৎসহসমূহ থেকে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির যোগান আসত। এখন সে অবস্থা নেই। নানা কারণে পানির প্রাকৃতিক উৎসের সংখ্যা যেমন হ্রাস পাচ্ছে তেমনি অধিকাংশ ক্ষেত্রে পানির উৎসগুলো দূষণের শিকার হচ্ছে। ফলে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট কেবল আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বজুড়েই বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটা আশঙ্কার ব্যাপার হলো, ভূগর্ভ থেকে নির্বিচারে পানি উত্তোলনের ফলে প্রতিবছর ঢাকায় পানির স্তর তিন ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ফলে সভ্যতা ও বসতি অস্তিতের গভীর সঙ্কটে নিপতিত হতে পারে। সভ্যতা ও বসতির এই সঙ্কট মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরী। বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা বিধানে নানা উদ্যোগ ও কর্মসূচী নেয়া জরুরী। এ ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ মোটেও লক্ষ্যগোচর নয়। বিশুদ্ধ পানির নিরাপত্তা গড়ে তোলার পদক্ষেপও দেখা যাচ্ছে না। এটা আশঙ্কার কথা। ঢাকায় পানি নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে পানির বিকল্প উৎস যেমন সন্ধান ও ব্যবহার করতে হবে তেমনি ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রম আরও বাড়াতে ও গতিশীল করতে হবে। এই মুহূর্তে ঢাকা ওয়াসাকে সরবরাহকৃত পানির বিশুদ্ধতা সংরক্ষণে মনোযোগ দিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যে কোন মূল্যে বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। লেখক : সাংবাদিক
×