ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে নানা আয়োজন

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৩ এপ্রিল ২০১৮

জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে নানা আয়োজন

গৌতম পাণ্ডে ॥ জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস আজ। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) প্রতিষ্ঠা দিবসও। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্প, বাণিজ্য, ত্রাণ ও দুর্যোগ কল্যাণমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি) গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সেই সূত্রে ২০১২ সাল থেকে এই বিশেষ দিনটিকে সরকারীভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় এবারও বর্ণিল আয়োজনে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদ্যাপন করা হবে। এ উপলক্ষে সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বরাবরের মতো বিএফডিসিতেই হবে চলচ্চিত্র দিবেসর মূল অনুষ্ঠান। এবার এ অনুষ্ঠান উদ্্যাপনে চলচ্চিত্র পরিবার ও বিএফডিসির মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভেদ। মতানৈক্যের জেরে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস আলাদাভাবে উদযাপন করছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন ও ১৮টি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর জোট চলচ্চিত্র পরিবার। গত কয়েক বছর ধরেই এফডিসি ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো দিবসটি উদযাপন করলেও এবার যৌথ আয়োজন থেকে সরে এসেছে চলচ্চিত্র পরিবার। জাতীয় চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি ও চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক ফারুক সোমবার জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের মতো করে একটু বড় পরিসরে এবার চলচ্চিত্র দিবসের অনুষ্ঠান করছি। তিনি বলেন, আমি বিএফডিসি কর্তৃপক্ষকে বলেছি, আপনারা আপনাদের মতো করে অনুষ্ঠানটি করেন, আমরা আমাদের মতো করি। বিএফডিসি থেকে সরে আসার কারণ হিসেবে এ অভিনেতা বলেন, এবার আয়োজনে মাত্র ৫০ হাজার টাকা বাজেট করা হয়েছে। এটা দিয়ে এত বড় অনুষ্ঠান করা যায় না। আবার আমরা যদি অন্যের হাতে-পায়ে ধরে, টাকা জোগাড় করে অনুষ্ঠানটা করি তখন তথ্য মন্ত্রণালয় ক্রেডিট নিয়ে নেবেন, এটা আমাদের কাছে ভালো লাগে না। সেকারণে একই সঙ্গে না করে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দিবসটি উদযাপন করবো। অভিনেতা হাসান ইমামকে অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির সভাপতি করা নিয়েও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চলচ্চিত্র পরিবারের বিভক্তি তৈরি হয়। চিত্রনায়ক ফারুক বলেন, হাসান ইমামই আমাদের অনুষ্ঠানের সভাপতি থাকবেন। এখন বিএফডিসি কী করলো সেটা আমাদের জানার উদ্দেশ্য নয়। উনি সম্মানী লোক। উনাকে যদি বিএফডিসির অনুষ্ঠানেরও সভাপতি করা হয় তাহলেও কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা বিএফডিসির আয়োজনে থাকব না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেই আমাদের আয়োজন সাজাবো। বঙ্গবন্ধুর কারণেই চলচ্চিত্র দিবস পেয়েছি আমরা। চলচ্চিত্র স্বাধীনতার অনেক বড় হাতিয়ার। অনেকে এটা বুঝতে পারেননি জানতেও পারেননি। বঙ্গবন্ধু যেটা করে দিয়ে গেছেন সেটা ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদ্যাপন কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ হাসান ইমাম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা প্রতিবছর জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদ্যাপন কমিটির ব্যানারেই পালন করি। এবার জাতীয় চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির ব্যানারে পালন করব। কারণ, আমি নিজেও চলচ্চিত্র পরিবারের অংশ। চলচ্চিত্র পরিবারের সদস্য ও শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, আমরা আমাদের মতো করে নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করব। প্রস্তুতি চলেছে। তবে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদ্যাপন কমিটির সদস্যসচিব এবং বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমির হোসেন ভিন্ন কথা বললেন। তিনি বলেন, এবার এ অনুষ্ঠান উদ্্যাপনে চলচ্চিত্র পরিবার জাতীয় চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির ব্যানরে আলাদাভাবে দিবসটি পালন করবে এ কথা আমাকে জানিয়েছে। কেন করবে এটা স্পস্ট নয়। ২০১২ সাল থেকে যেভাবে হয়ে আসছে, সেভাবেই হবে অনুষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী প্রধান অতিথি থাকবেন। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ্য প্রদানের মধ্যদিয়ে এ দিবসের সূচনা হবে। পরে পায়রা উড়িয়ে চলচ্চিত্র দিবসের উদ্বোধন ঘোষনা করবেন অতিথিরা। এখানে স্বাগত বক্তব্য রাখব আমি। সকাল ১১টায় হবে র‌্যালি। সাড়ে ১১টায় মেলা উদ্বোধন হবে। বেলা ৩টায় সেমিনার। বিকেল ৫টা থেকে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস ২০১৮ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ আয়োজন করেছে দেশব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। অনুষ্ঠান আয়োজনে থাকছে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র কার্নিভাল, সেমিনার, চলচ্চিত্রের আড্ডা, প্রীতি সম্মিলনী, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একাডেমি প্রাঙ্গণ ঢাকায় চলচ্চিত্র কার্নিভাল, সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আলোচনা। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেবেন চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী, মশিহউদ্দিন শাকের, মোরশেদুল ইসলাম ও ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি লাইলুন নাহার স্বেমি। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, অনুপম হায়াত ও বেলায়াত হোসেন মামুন। জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে রাত সোয়া ৮টায় শুরু হবে সঙ্গীতানুষ্ঠান।
×