ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিরপুর স্টেডিয়াম গলিতে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৩ এপ্রিল ২০১৮

মিরপুর স্টেডিয়াম গলিতে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মিরপুর স্টেডিয়াম গলির মুখে কুড়িয়ে পাওয়া ফুটফুটে শিশুটিকে এখন শিশু হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। তাকে বাঁচানো আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নবজাতকের শারীরিক অবস্থা আগের তুলায় ভাল। তবে শঙ্কামুক্ত নয়। এদিকে সব কিছু ফেলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন শিশুটি উদ্ধার করা চিত্রকর ও চ্যানেল আইয়ের আর্টিস্ট নাফিসা ইসলাম ও তার স্বামী ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান আহাদ। এই দম্পতি চিকিৎসার দায়িত্বও নিয়েছেন। সবারই প্রত্যাশা ওকে সুস্থ করে আত্মীয়-স্বজনের সন্ধান পেলে ফিরিয়ে দেয়া। নইলে কোন নিঃসন্তান দম্পতির কোলে তুলে দেয়া। চিত্রকর ও চ্যানেল আইয়ের আর্টিস্ট নাফিসা ইসলাম জানান, গত ২৫ মার্চ রাত সাড়ে আটটার দিকে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনে দাঁড়িয়ে যান। এরপর কাছে গিয়ে ওড়নায় পেঁচানো অবস্থায় নবজাতক শিশুর নড়াচড়া দেখে কোলে তুলে নেন। তিনি জানান, দেখেই বুঝতে পারি বাচ্চাটির জন্ম কিছুক্ষণ আগে। শরীরে তখনও জন্মের আভা স্পষ্ট। নাড়ি দিয়ে পেঁচানো নবজাতক শিশুর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। দ্রুত নিজের পরিচয় দিয়ে মিরপুর এম আর খান শিশু হাসপাতালে পপি নামে ভর্তি করাই। চিকিৎসকরা বাচ্চাটির বাঁচানোর আশা প্রায়ই ছেড়ে দিয়েছিলেন। আমার মধ্যে অদ্ভুত খারাপ লাগা কাজ করছিল। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি। মনে হচ্ছিল বাচ্চাটি আমারই। অনেক অনুরোধের পর আমার জিম্মায় সেখানে ভর্তি করে অক্সিজেন দেয়া হয়। নীল হয়ে যাওয়া বাচ্চাটি ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে সুস্থ হতে থাকে। ২৯ তারিখ রাতে চিকিৎসকরা ভেন্টিলেশন দেয়ার কথা জানান, যা ওই হাসপাতালটিতে (এম আর খান শিশু হাসপাতাল) নেই। পরে এ্যাম্বুলেন্সে করে আসাদগেট সংলগ্ন কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিত্রকর ও চ্যানেল আইয়ের আর্টিস্ট নাফিসা জানান, আমার মধ্যে অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছিল। আমার কাজের শত ব্যস্ততা ফেলে শিশুটিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। ওকে সুস্থ করে আত্মীয়-স্বজনের সন্ধান পেলে ফিরিয়ে দেব। নইলে কোন নিঃসন্তান দম্পতির কোলে তুলে দেব। নাফিসা জানান, বাচ্চাটি উদ্ধার শেষে মিরপুর এম আর খান হাসপাতালে ভর্তির পর মিরপুর মডেল থানায় বিষয়টি জানিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। জিডি নং ১৮৮২। নাফিসা ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নির বোনের মেয়ে। নাফিসার স্বামী ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান আহাদ জানান, নবজাতকটিকে বাঁচানোটাই ছিল আমাদের ইচ্ছে। যে কারণে ছোটাছুটি করেছি। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটে চলেছি। এখনও শান্তি লাগছে। ওকে সুস্থতার করার একটি সঠিক ঠিকানায় পৌঁছাতে পেরে। কেয়ার হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার রুমা পারভীন জানান, শিশুটিকে ভেন্টিলেশনে প্রথমে শতভাগ অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছিল। পরে তা কমিয়ে সি পাইপ দিয়ে ৮০ ভাগ অক্সিজেন যাচ্ছে। ধীরে ধীরে এর পরিমাণ কমিয়ে বাচ্চাটি সার্ভাইভ করতে পারবে। প্রি ম্যাচিউর্ড হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া জন্ডিসের সমস্যাও রয়েছে। মিরপুর মডেল থানার পুলিশ জানায়, শিশুটির চিকিৎসা জরুরী, সেটি গুরুত্বসহ দেখা হচ্ছে। শিশুটিকে উদ্ধারকারী নাফিসার সঙ্গে আমার যোগাযোগ হচ্ছে। সুস্থ হওয়ার পর নাফিসার সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×