ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আট দিন পর কক্ষপথে স্থাপন হবে, শুরু হবে কার্যক্রম- মিলবে ৪০ ধরনের সেবা

২৪ এপ্রিলই মহাকাশে উড়বে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩ এপ্রিল ২০১৮

২৪ এপ্রিলই মহাকাশে উড়বে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

ফিরোজ মান্না ॥ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের সিডিউল চূড়ান্ত করেছে উৎক্ষেপণকারী প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২৪ এপ্রিলই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে উড়বে। মহাকাশে আট দিন উড়ার পর নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্যাটেলাইটটি স্থাপন করা হবে। কক্ষপথে স্থাপনের পর থেকেই স্যাটেলাইটটি কার্যক্রম শুরু করবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০ ট্রান্সপন্ডার থাকবে। এরমধ্যে বিশটি বাংলাদেশ ব্যবহার করবে। বাকি বিশটি বিদেশী বা প্রতিবেশী দেশের কাছে ভাড়া দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭তম দেশে যুক্ত হবে। স্যাটেলাইটটি টেলিযোগাযোগসহ ৪০ ধরনের সেবা নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। বিটিআরসি জানিয়েছে, স্যাটেলাইটটি নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস এ্যালেনিয়া স্পেসের বরাত দিয়ে স্যাটেলাইট ও প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম আমেরিকা স্পেসএক্স ২৪ এপ্রিল উৎক্ষেপণের তারিখ নিশ্চিত করেছে। প্রতিষ্ঠানটির গত ২৭ মার্চ ওয়েবসাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের সিডিউল ঘোষণা করা হয়। এতে উৎক্ষেপণের তারিখ ২৪ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয়েছে। একই মাসে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ও বিভিন্ন দেশের আরও ১৩ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে স্পেসএক্স। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) এক কর্মকর্তা বলেন, বিটিআরসি এখনও আনুষ্ঠানিক কোন চিঠি পায়নি। তবে স্যাটেলাইট নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস এ্যালেনিয়া স্পেস টুইট বার্তায় বলছে, সম্প্রতি কানের থ্যালেস এ্যালেনিয়া স্পেস প্ল্যান্ট ত্যাগ করবে স্যাটেলাইটটি। পরে স্যাটেলাইট বহনকারী কার্গো বিমান এ্যানতোনোভ নাইস বিমানবন্দর থেকে আমেরিকার ফ্লোরিডায় যাবে। বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের স্থানীয় সময় সকাল ছয়টা থেকে আটটার মধ্যে বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে উড্ডয়ন করবে। ২৯ মার্চ বস্টনে যাত্রাবিরতির পর ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ বহনকারী কার্গোবিমানটি ফ্লোরিডার কেপ কার্নিভালে পৌঁছে ৩০ মার্চ। স্পেসএক্সে লঞ্চ ফ্যাসিলিটিতে লঞ্চ ভেহিকল ফ্যালকন ৯-র ইন্ট্রিগ্রেশনসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শুরু হবে কেপ কার্নিভালেই। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এটি মহাকাশের উদ্দেশে উৎক্ষেপণ করা হবে। টুইটে আমেরিকা স্পেস বলছে, উৎপাদন ও লঞ্চার মেনিফেস্ট বিলম্বের কারণে আগামী ২৪ এপ্রিল উৎক্ষেপণ হবে। তবে স্পেসএক্স বলছে, প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না হলে নির্ধারিত সময়েই স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সে ‘ফ্যালকন-৯’ রকেট স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠাবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বের ৫৭তম স্যাটেলাইট ক্ষমতাধর দেশের তালিকায় নাম লেখা হবে বাংলাদেশের। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বিষয়ে বিটিআরসি জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিক চিঠি এখনও দেয়া হয়নি বিটিআরসিকে। তবে ২৪ এপ্রিল স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে এটা স্পেসএক্স তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। এ জন্য বিটিআরসির পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা বাংলাদেশের অনেক বড় অর্জন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের জন্য রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনা হয়েছে। মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমায় প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় ১৫ বছরের জন্য এই কক্ষপথ কেনা হয়েছে। স্যাটেলাইট পাঠানোর কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এজন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটি নিয়ন্ত্রণে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের যন্ত্রপাতিও আমদানি করেছে বিটিআরসি। কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তন হলেও স্যাটেলাইট নির্মাণ ব্যয় বাড়েনি। বিটিআরসি জানিয়েছে, সঠিকভাবে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করলে আটদিন পর এটি মহাকাশে বরাদ্দ পাওয়া ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছবে। কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তনের পর এবার চূড়ান্তভাবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সম্ভব হবে। উৎক্ষেপণের পর মহাকাশে নিজ কক্ষপথে পৌঁছানোর পর সেখান থেকেই স্যাটেলাইটটি কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। দেশের প্রায় ৩৭ স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের কাছে ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ১২৫ কোটি ডলার আয় হবে। এ সব চ্যানেল এখন বিদেশের বিভিন্ন স্যাটেলাইট থেকে ফ্রিকোয়েন্সি কিনে অনুষ্ঠান প্রচার করছে। এতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। তবে এ টিভি চ্যানেলগুলো এখনকার প্রচলিত কেবলভিত্তিক প্রচারের পরিবর্তে ছোট ডিস এ্যান্টেনার ডাইরেক্ট টিভি সিগন্যাল পাবে। গাজীপুরে প্রায় ১৩ একর জায়গার ৫ একর জায়গা জুড়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানে বিদেশী প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০ ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশ ব্যবহার করবে। বাকি ২০টি বিদেশী বা প্রতিবেশী দেশের কাছে ভাড়া দেয়া হবে। উৎক্ষেপণের পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত এর তদারক করবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। এটি আগামী ১৮ বছর পর্যন্ত মহাকাশে থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি এবং কাজ করতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। স্যাটেলাইট প্রকল্পের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে ৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। সেখানে আরও উপস্থিত থাকবেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদসহ এ প্রকল্পের পরিচালক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার ও বিটিআরসির কর্মকর্তারা। বিটিআরসি জানিয়েছে, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ উপলক্ষে সারাদেশে যেন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে সেজন্য সেমিনার, সিম্পোজিয়ামসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠান বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করবেন।
×