ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘণ্টায় চলতে পারে পাঁচ কিলোমিটার;###;দিনে ২শ’ যানবাহন নামছে

গতি কমছে ঢাকার যানবাহনের!

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩ এপ্রিল ২০১৮

গতি কমছে ঢাকার যানবাহনের!

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাজধানীর নতুন বাজার থেকে মালিবাগ আসতে সময় লাগে অন্তত আড়াই ঘণ্টা। যানজট। তাই সড়কে হাজারো যানবাহনের সারি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা! এ চিত্র প্রতিদিনের। সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত যারা এ সড়কটি ব্যবহার করেছেন তারাও যানজটের দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু এমন তো কথা ছিল না। মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়ক নির্মাণের পর কথা ছিল ফ্লাইওভার দুর্ভোগ কমিয়ে আনবে। মালিবাগ আবুল হোটেল থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত উড়াল সড়কের লুপও রয়েছে। তবুও যানজট কমেনি। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ফ্লাইওভার নির্মাণের পর সমস্যা বেড়েছে। সমানতালে বেড়েছে জনদুর্ভোগও। এমন চিত্র গোটা শহরের বলা চলে! আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের মতামত বলছে, এক দশক আগেও রাজধানীতে যানবাহনের গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। যানজটের কারণে এখন ঘণ্টায় সর্বোচ্চ পাঁচ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করা সম্ভব একটি চলন্ত গাড়ির। চলমান অবস্থার উন্নতি না হলে ২০২৫ সালে যানবাহনের গতি ঘণ্টায় চার কিলোমিটারের কমে নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে রাজধানীতে নিবন্ধিত পরিবহনের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। অপরিকল্পিত নিবন্ধন চলছেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অযান্ত্রিক আরও অন্তত ১০ লাখ পরিবহন। ঢাকার বাইরে থেকে অন্তত লক্ষাধিক পরিবহন রাজধানীতে প্রবেশ করছে প্রতিদিন। চলমান বাস্তবতায় পরিস্থিতির উন্নতির আশা নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকার ফলে যাত্রীদের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। এই চাপ আবার কাজ করছে অন্যান্য রোগের উৎস হিসেবে। যানজট ৯ ধরনের মানবিক আচরণকে প্রভাবিত করছে। গবেষণায় আরও বলা হচ্ছে, যানজটের কারণে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যানজটের পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে খারাপ হচ্ছে, তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও যে বাড়বে, তা বলাবাহুল্য। সঙ্কট সমাধানে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে দ্রুত গতির ট্রেন সার্ভিস চালু ও প্রাতিষ্ঠানিক বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দেয়ার মতামত আসছে। রাজধানী ঢাকার যানজটের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিশেষজ্ঞরা এমন মতামতই তুলে ধরেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেন, যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর হেঁটেই গাড়ির আগে যেতে পারবে মানুষ। এই শহরে এখন ঘণ্টায় গড়ে প্রায় পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার গতিতে চলছে যানবাহন। যানবাহনের পরিমাণ যদি বাড়তে থাকে তাহলে ২০২৫ সালে এই শহরে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় চার কিলোমিটার, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়ে কম। মানুষের হাঁটার গড় গতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার বলে মনে করা হয়। এমন তথ্য বিশ্বব্যাংকের। আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির মতে, যানজটের পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে খারাপ হচ্ছে, তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও যে বাড়বে, তা বলাবাহুল্য। যানজটের কারণে রাজধানীতে পরিবহন প্রবেশ করতে না পারায় প্রতিদিন বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আয় নষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে যানজটের কারণে দিনে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এছাড়া সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা ১২ ঘণ্টায় রাজধানীতে চলাচলকারী যানবাহনকে যানজটের কারণে প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। এর মধ্যে প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় নামছে প্রায় ২০০ বিভিন্ন ধরনের পরিবহন। ২০৩০ সালে ঢাকায় জনসংখ্যা হবে ৩০ কোটি। এ প্রেক্ষাপটে যানজট নিরসনে উদ্যোগ নেয়ার সময় এখনই। রাজধানী ঢাকাকে সবার জন্য বসবাসের উপযোগী করতে হলে যথাযথ সুদূরপ্রসারী ও সমন্বিত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরী। যানবাহন এবং যানজট যে শহরের সচলতা শুধু কমিয়ে দিচ্ছে তাই নয়, আর্থিক ক্ষেত্রেও অভিঘাত হানছে। এখন যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা শহর সে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে এ শহর অচল হয়ে পড়বে। আর্থিক ক্ষতি বাড়ছে ॥ ২০১৫ সালের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী, ঢাকায় দৈনিক প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ যাত্রা (ট্রিপ) হয়। একজন মানুষ কোন একটি বাহনে উঠে নির্ধারিত গন্তব্যে নামলে একটি যাত্রা বা ট্রিপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে যানজটে দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক ক্ষতি হচ্ছে যানজটের কারণে। এ থেকে বলা যায়, গড়ে বছরে যানজটের কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। তবে সড়ক খাতে বিনিয়োগ, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও যানজট নিরসনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এই ক্ষতির অন্তত ৬০ শতাংশ বা ২২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গত বছর সারাদেশে সাড়ে ছয় হাজার দুর্ঘটনায় উদ্ধার করা ১১ হাজার ৫০০ জনের মধ্যে আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যুর পেছনেও অন্যতম কারণ হিসেবে যানজট দায়ী বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (ঢাকা) দেবাশীষ বর্ধন। অনেক সময় যানজটের কারণে দ্রুত হাসপাতালে না নিতে পারার কারণেও অনেকে মারা গেছেন বলে সেমিনারে উল্লেখ করেন তিনি। স্বাস্থ্যগত সমস্যা ॥ যানজটের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যে বড় প্রভাব পড়ছে। দিন দিন এর মাত্রা বাড়ছে। গবেষণায় বলা হয়, যানজট ৯ ধরনের মানবিক আচরণকে প্রভাবিত করছে। দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব থেকে শুরু করে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মতো বিষয়গুলো যানজটে প্রভাবিত হচ্ছে। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (নিটোর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মুহম্মদ সিরাজ-উল-ইসলাম বলেন, যানজটে বসে থাকলে মানসিক চাপ তৈরি হয়। নানান রকম দুশ্চিন্তা ভর করে। এই মানসিক চাপ সব ধরনের রোগের উৎস। চাপের ফলে নাগরিকদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, যুদ্ধংদেহী মনোভাব চলে আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারাহ্দীবা বলেন, যানজটের কারণে মানসিক অশান্তি তৈরি হয়, যার পভাব পড়ে পরিবারসহ বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্কে। ব্যক্তির কর্মদক্ষতা, কর্মস্পৃহা নষ্ট হয়ে যায়। যে চালকেরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটানা গাড়ি চালান, তাঁদের দুর্ঘটনা ঘটানোর আশঙ্কা বেশি থাকে। আর উচ্চমাত্রার শব্দদূষণের ফলে দীর্ঘস্থায়ী বধিরতা তৈরি হতে পারে। হেঁটেই পৌঁছানো যাবে আগে ॥ ঢাকা শহরের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হলো দিন দিন সড়কে যানবাহনের গতি কমছে। নানা উদ্যোগের পরও যানবাহনের গতি কোন অবস্থাতেই বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এ নিয়ে বারবারই বিশেষজ্ঞরা কথা বলছেন। তুলে ধরছেন নানা রকম পরামর্শ। সঙ্কট সমাধানে সরকারীভাবেই বেশকিছু প্রকল্প চলমান। বলা হচ্ছে, এখন ঘণ্টায় গড়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার গতিতে চলছে যানবাহন। এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর হেঁটেই গাড়ির আগে যেতে পারবে মানুষ। ২০১৬ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গবর্ন্যান্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ‘নগর পরিস্থিতি-২০১৬ : ঢাকা মহানগরে যানজট, শাসন ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, ২০০৪ সালে ঢাকার রাস্তায় প্রতি ঘণ্টায় গাড়ির গতিসীমা ছিল গড়ে ২১ দশমিক ২ কিলোমিটার। যানবাহনের পরিমাণ যদি একই হারে বাড়তে থাকে এবং তা নিরসনের কোন উদ্যোগ না নেয়া হয়, তাহলে ২০২৫ সালে এই শহরে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় চার কিলোমিটার, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়ে কম। ২০১৭ সালে জুলাইয়ে বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়, গত ১০ বছরে ঢাকার যান চলাচলের গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে মাত্র সাত কিলোমিটারে এসেছে। ওই হিসাবে প্রতিদিন ঢাকায় নষ্ট হতো ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। সেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে এক বছরে। মূল প্রবন্ধে এআরআইএর পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘রাজধানীতে যানজটের কারণে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এখন প্রতি ঘণ্টা কয় টাকা করে হিসাব করবেন সেটা আপনাদের ব্যাপার। যানজটের পেছনের কারণ ॥ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় বড় সড়কের সংখ্যা হাতেগোনা। ট্রাফিক মোড়গুলো শহরের বিষফোড়া। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সড়কে অবৈধ পার্কিং, ফুটপাথের অবৈধ দখল, ভাসমান বিক্রেতাদের সড়ক দখল, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো, খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কের প্রশস্ততা কমে যাওয়া অন্যতম। তা ছাড়া দুই শতাধিক কোম্পানির অধীনে শহরের বাস সেবা পরিচালিত হওয়ার ফলে যাত্রী ওঠানো নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর দায়িত্বহীনতাও যানজটের অন্যতম কারণ। অনেকে বলেন, ঢাকা বর্তমানে নাগরিকদের শহর নয়, ‘গডফাদারদের’ শহর। ঢাকার কয়েক লাখ অনিবন্ধিত রিক্সা এবং ফুটপাথের কয়েক হাজার অবৈধ হকারের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন গডফাদাররা। বাস, লঞ্চ টার্মিনালগুলো গডফাদারদের দখলে থাকায় যাত্রীসেবার বদলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। সংকটের বড় কারণ সমন্বয়হীনতা ॥ সরকারী সংস্থাগুলো শহরকে বসবাস উপযোগী করে গড়ে তোলার পরিবর্তে শহরকে ধ্বংসের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সরকারী এক সংস্থার সঙ্গে অন্য সংস্থার কাজে সমন্বয় নেই। এমন অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের। এআরআইয়ের সহকারী অধ্যাপক কাজী মোঃ সাইফুন নেওয়াজ বলেন, সব পেশার, সব বয়সী মানুষ যানজটের ফলে ভুক্তভোগী। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যানজট নিরসনে কাজ করছে। কিন্তু তাদের কার্যক্রমে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। যানজট নিরসন একক কোন সংস্থার পক্ষে সম্ভব নয়। সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, বিভিন্ন সংস্থা সমন্বয়হীনভাবে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করায় যানজট বাড়ছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা একটি সড়ক দিনের বেলায় ভাল দেখে এসেছেন, রাতের বেলায় সে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, শহরে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও অনেককেই যানজটের কারণে সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। যানজট কমানো গেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও কমানো যেত বলেও মনে করেন তিনি। সমাধানের পথ ॥ ঢাকার যানজট কমাতে বাস সেবা আরও বিস্তৃত ও উন্নত করা, রেলে যাত্রী পরিবহন বাড়ানো, ব্যক্তিগত গাড়ি কমানো, ঢাকায় জনসংখ্যার চাপ কমাতে বিকেন্দ্রীকরণসহ বিভিন্ন পরামর্শের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক সরওয়ার জাহান বলেন, ২০১৫ সালে করা আরএসটিপি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হবে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। যারা এ পরিকল্পনা করেছেন, তারা ঢাকার সমস্যা কতটা মাথায় রেখে করেছেন তা ভাবনার বিষয়। ঢাকার যে আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, তাতে বাস সেবা মূল সমাধান। ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত গাড়ি নিষিদ্ধ না করলে এ শহর অকার্যকর হয়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, যানজট সমস্যাটি বহুমাত্রিক। ঢাকায় যদি জনসংখ্যা বাড়তেই থাকে, তাহলে পরিকল্পনা করে সমাধানে পৌঁছানো যাবে না। ঢাকায় জনসংখ্যার চাপ কমাতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থা গড়তে হবে। যানজট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে হবে বলে মনে করেন এআরআইয়ের পরিচালক মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, ফুটপাথ দখলমুক্ত করা, পৃথক বাস লেন তৈরি, ট্রাফিক মোড়গুলোর বিষয়ে পরিকল্পিত ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, ঢাকায় এখন বাস আছে সাড়ে ছয় হাজার যাতে ৩০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করে। কিন্তু এটা বড় আকারে বাস আড়াই হাজার দিলেই এই সংখ্যক যাত্রী পরিবহন সম্ভব। রাজধানীতে মাত্র তিনটি বড় সড়ক আছে। এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। আলোচনায় যানজট মোকাবেলায় বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, যানজট নিরসনে সরকারে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে হকারদের পুনর্বাসন করতে হবে। পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়ন করতে হবে। রাজধানীর ওপর চাপ কমাতে নারায়ণগঞ্জ, সাভার, টঙ্গী, গাজীপুরের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। অফিস সময়ের আগে ও পরে ১০ মিনিট পরপর এসব রুটে ট্রেন ছাড়লে মানুষ রাজধানীর বদলে লাগোয়া জনপদে বেশি থাকবে বলে মনে করেন মোয়াজ্জেম হোসেন। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, রাজধানীতে মোট জমির যে সাত থেকে আট শতাংশ রাস্তা আছে। সেটারও যদি সঠিক ব্যবহার করা যায় তাহলে যানজটের কারণে ক্ষতি হওয়া ২২ হাজার কোটি টাকা রক্ষা করা যাবে।
×