ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

র‌্যাবের হাতে আটক ৭

এইচএসসির ভুয়া প্রশ্নফাঁসের কথা বলে টাকা আদায়

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩ এপ্রিল ২০১৮

এইচএসসির ভুয়া প্রশ্নফাঁসের কথা বলে টাকা আদায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রশ্নফাঁস নিয়ে এবার মুখ খুলেছে র‌্যাব। প্রথমবারের মতো র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন ভুয়া প্রশ্নপত্র পাওয়া গেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সোমবার দুপুরে উত্তরায় র‌্যাব সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। গত তিনদিনে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে আটক করে র‌্যাব। তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আটক সাত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে ভুয়া প্রশ্নফাঁসের কথা বলে অগ্রিম টাকা আদায় করে। তবে তাদের কাছে কোন প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়। র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রশ্নপত্রফাঁস গ্রুপের এক এ্যাডমিনকে আটক করা হয়েছে। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এবার ক্রেতা হিসেবে মাঠে থাকবে র‌্যাব। সঙ্গে সঙ্গে অনলাইন মনিটরিং ও গোয়েন্দা নজরদারিও থাকবে। র‌্যাবের কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকার পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো মনিটরিং করছে। কোন ছাত্র বা অভিভাবকের কাছে প্রশ্ন পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস যাতে না হতে পারে সেজন্য আগে থেকেই দেশের সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। আমরা গত তিনদিনে সাত দফায় আট জনকে নিয়ে আসছি। এদের মধ্যে সাত জনকে গ্রেফতার করেছি। যারা কোন না কোনভাবে প্রশ্নপত্রফাঁসের সঙ্গে জড়িত। একজনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি। সে প্রশ্নপত্র সংক্রান্ত ফেসবুকের একটি পেজের এ্যাডমিন। আমরা তদন্ত করে দেখছি, প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই ঘটনা মূলত অধিকাংশই প্রতারক। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্রফাঁসের কথা বলে টাকা আদায় করছে। এটা তাদের ফাঁদ। আমি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনুরোধ করব, দয়া করে কেউ ফাঁদে পা দেবেন না। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি করছি, আমরা তৎপর রয়েছি। সেই সঙ্গে আমরা বিভিন্নভাবে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছি। অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে র‌্যাব ডিজি বলেন, ‘কোথাও কোন প্রশ্নপত্রফাঁসের তথ্য পেলে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন। আমরা তাদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আমরা পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক ঐক্যবদ্ধ হলে এই চক্র সফল হবে না। তাদের প্রতিরোধ করা যাবে। আমরা এই চক্রকে নিশ্চিহ্ন করতে চাই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘যারা গ্রেফতার হয়েছে, তারা প্রশ্ন এনে দেবে বা ফাঁস করে দেবে এমন তথ্য পেয়েছি। তাদের সাতজনের বিরুদ্ধে আইসিটি এ্যাক্টে মামলা হয়েছে। অপরজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধেও কিছু পাওয়া গেলে, মামলা হবে। বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘গতবার এসএসসি পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্রফাঁসের সঙ্গে জড়িত পরিক্ষার্থীদের অপরাধ পেয়েও ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এবার আর তা হবে না। যদি কোন পরিক্ষার্থীর কাছে বা অভিভাবকের কাছে কোন প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়, সেটি সত্য অথবা মিথ্যা হোক, তাদেরও আমরা আইনের আওতায় আনব। বেনজীর আহমেদ আরও বলেন, অতীতের ঘটনাগুলো আমরা এখনও তদন্ত করছি। তবে থানা পুলিশের মতো করে যেকোন মামলার সরাসরি তদন্ত আমরা করতে পারি না। তারপরও প্রতিটি ঘটনার ছায়াতদন্ত আমরা করি। বিশেষ করে গতবার একটি ছেলে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছিল প্রশ্নফাঁস করব, পারলে ঠেকাও। তার বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ রয়েছে। সে কে? তাকে খুঁজে বের করা হবে। কোন মামলার ছায়াতদন্তে যদি কারও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই, তাহলে সরকারের কাছে আবেদন করে ওই মামলা আমরা আমাদের কাছে নিয়ে আসব।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পেশার মানুষ জড়িত। শিক্ষকরা নিজেরাই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। এটা খুবই লজ্জার যখন দেখি এক শ্রেণীর শিক্ষকও এই ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। এই গুটিকয়েক শিক্ষককে প্রতিরোধ করতে শিক্ষক সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। মঙ্গলবার আমাদের র‌্যাব সদস্যরা বিভিন্ন হলে ভিজিট করবেন। তারা পরীক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। র‌্যাবের কর্মকর্তারও এবার মাঠে রয়েছে, ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কেনার জন্য। এভাবে ফাঁদ পেতেই তাদের ধরা হবে। সোমবার সকাল ১০টা থেকে সারাদেশে একাযোগে শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।
×