ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ছাড়াই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩ এপ্রিল ২০১৮

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ছাড়াই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘদিন পর অবশেষে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ছাড়াই শুরু হলো পাবলিক পরীক্ষা। গেল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অব্যাহত প্রশ্ন ফাঁসের প্রেক্ষাপটে জনমনে মারাত্মক উদ্বেগ থাকলেও সেই উদ্বেগ কাটিয়ে সোমবার থেকে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দফতরের কঠোর সব পদক্ষেপে নির্বিঘেœই প্রথমদিনের পরীক্ষা পার করেছে ১৩ লাখ পরীক্ষার্থী। ফাঁস রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ছাড়াও কঠোর ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা। শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, র‌্যাব মহাপরিচালক কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁসচক্রের মুলোৎপাটন করা হবে। এদিকে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে প্রথমবারের মতো কেন্দ্রে কার্যকর করা হয়েছে বেশ কিছু নতুন নির্দেশনা। ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক ছাড়াও প্রথমবারের মতো ২৫ মিনিট আগে কেন্দ্রীয়ভাবে লটারির মাধ্যমে প্রশ্ন সেট নির্বাচন করে সারাদেশে জানানো হয়েছে। ২৫ মিনিট আগে প্রশ্নের বান্ডিল খোলার কোন সুযোগ রাখা হয়নি। তবে যানজটের কারণে ৩০ মিনিট আগে প্রবেশ করতে না পারায় কিছু কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর আগে গেল কয়েক বছর ধরেই কম বেশি প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে পাবলিক পরীক্ষা ছাড়াও বহু নিয়োগ পরীক্ষাতেও। গেল এসএসসি পরীক্ষায় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রশ্ন ফাঁসের প্রেক্ষাপটে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে জনমনে ছিল উৎকণ্ঠা। পরীক্ষা শুরুর আগেই পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে চাপা উদ্বেগ ছিল। প্রশ্নপত্র ফাঁসের শঙ্কাও ছিল। তবে সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে সোমবার সকাল ১০টায় কোন অভিযোগ ছাড়াই নির্বিঘেœ বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় বসেছে পরীক্ষার্থীরা। কোথাও প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোন খবরও পাওয়া যায়নি। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরীক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকরা। নির্বিঘেœ প্রথমদিনের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় সন্তুষ্ট শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। তারা বলছেন, পরীক্ষা ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি এবং কোথাও কেউ কোন অভিযোগও করেনি। এতে কর্মকর্তারা খুশি। তাদের আশা বাকি পরীক্ষাগুলোও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ শিক্ষার্থী। ১৩ মে পর্যন্ত চলবে তত্ত্বীয় পরীক্ষা। ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৪ থেকে ২৩ মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছয় লাখ ৯২ হাজার ৭৩০ ছাত্র এবং ছয় লাখ ১৮ হাজার ৭২৭ ছাত্রী। মানুষের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, তার সবই করা হয়েছে ॥ নিয়ম মেনে চেকিংয়ের পর পরীক্ষা হলে পরীক্ষার্থীদের ঢুকতে দেয়া হয়েছে। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরীক্ষার্থীদের কলেজে ঢুকতে দেয়া হয়। মাইকে চলেছে পরীক্ষার হলে ঢোকার নিয়মকানুন ঘোষণা। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে প্রশ্নপত্রের বান্ডিল খুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেইনসহ কলেজের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষাকে নকলমুক্ত ও প্রশ্নফাঁসমুক্ত করতে মানুষের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, তার সবই করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পরীক্ষার প্রথমদিন সকালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নানাভাবে প্রতিদিনই নতুন নতুন সমস্যা হয়ত যুক্ত হচ্ছে। আমাদের জানার মধ্যে যা যা আছে বা আপনারা (সাংবাদিকরা) আমাদের যা জানিয়েছেন, এ সবকিছু মোকাবেলা করে পরীক্ষা নকলমুক্ত বা প্রশ্নফাঁসমুক্ত বা যে কোন ধরনের সমস্যামুক্ত করবার জন্য মানুষের পক্ষে যা করা সম্ভব, আমাদের এই বাস্তবতায় সবই করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কড়াকড়ির মাত্রা বাড়িয়েছে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষার হলে বসতে হচ্ছে। কেউ পাঁচ-দশ মিনিট দেরি করলে তার দেরির কারণসহ নাম, রোল, রেজিস্ট্রেশন নম্বর নথিভুক্ত করে রাখার নিয়ম হয়েছে। প্রশ্নপত্রের সেট নির্ধারণ করা হচ্ছে পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে লটারির মাধ্যমে। এসএমএসের মাধ্যমে সেই তথ্য জানানো হচ্ছে কেন্দ্র সচিবকে। তারপর সিকিউরিটি টেপ ও সিলগালা ভেঙ্গে খোলা হচ্ছে প্রশ্নের প্যাকেট। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য সবার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন বা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে আগের মতোই। পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরা বাদে অন্যদের ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। পরে তার উপস্থিতিতে সিকিউরিটি টেপ খুলে প্রশ্ন বের করা হয়। সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরুর পর বারান্দা দিয়ে ঘুরে বিভিন্ন কক্ষের পরিস্থিতি দেখেন মন্ত্রী। পরে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এত কড়াকড়ির পরও যদি প্রশ্নফাঁস হয় তাহলে দায় কে নেবে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি প্রশ্নফাঁস হবে না। যদি হয়, যিনি করবেন তাকেই দোষী করব। ক্রিমিনালরা কত ধরনের পথ বের করতে পারে সে তো আমরা এখনও জানি না। তবে যা ব্যবস্থা নিয়েছি তাতে সম্ভব হবে না। এসএসসি পরীক্ষার সময় সক্রিয় ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ এখনও বন্ধ করা হয়নি কেন? জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা বিটিআরসিকে সঙ্গে সঙ্গে তথ্যগুলো জানিয়ে দিই। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিশেষভাবে কাজ করছে এগুলা নিয়ে, আমরাও সব জানি না, জানার দরকারও নেই। এ ধরনের প্রশ্নফাঁসের কাজে যারা নিয়োজিত আছেন তাদের ধরার জন্য সকলের সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা দরকার। প্রশ্নফাঁসের তথ্য পাওয়া গেলে সরকার এবার কতটা কঠোর হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠতেই পারে। যে কেউ চাইলেই অভিযোগ করতে পারেন। আমাদের কাজ গোড়ায় গিয়ে দেখা এটা সত্য কি সত্য না। শাস্তির ব্যবস্থা আইনানুসারে যেখানে যা প্রযোজ্য তাই গ্রহণ করব। এতে কোন সন্দেহ নাই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার কথা বললেও তা হয়নি জানালে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোচিং সেন্টার বন্ধ করার জন্য যে আইন প্রয়োগ দরকার সে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আমার না। এখানে অনেক মন্ত্রণালয় জড়িত। আইন প্রয়োগ করা, ক্রিমিনালদের ধরা এগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এমসিকিউ প্রশ্ন পদ্ধতি এবং প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন আনা হবে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখানে জনমতের ব্যাপার আছে। শিক্ষাবিদ, অভিভাবক সবার মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। এখন পর্যন্ত যে কয়জন অভিভাবকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে তারা বলেছেন এমসিকিউ যাতে তুলে না দেই। আমাদের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে, আরও অনেক জিনিস দেখে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এদিকে পরীক্ষায় শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক, কারও কাছে ফাঁস হওয়া ভুয়া প্রশ্নপত্র পাওয়া গেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁসচক্রের মুলোৎপাটন করা হবে। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে সাইবার টহল ॥ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে সক্রিয় এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। গত ১৫ দিন ধরেই পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ ফেসবুক, ভাইবার, ইমো, হোয়াটসএ্যাপসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার টহল চালিয়ে আসছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। প্রশ্নফাঁসকারী চক্রকে ধরতে পুলিশ, সিআইডি ও র‌্যাব কর্মকর্তারা নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। নজরদারির মধ্যে নেয়া হয়েছে দেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও। ছাপাখানা থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সবখানেই রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি। শুধু এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বিশেষ পাঁচটি টিম গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোচিং সেন্টার বন্ধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) এবং পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং কমিটির অন্যতম সদস্য শেখ নাজমুল আলম বলেছেন, এইচএসসি ও সমমানের প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এবার আগেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও হয়েছে। এসব বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবারের পরীক্ষায় সব সেটের প্রশ্ন এক ব্যাগেজে কেন্দ্রে যাবে। ব্যাগেজটি বিশেষ নিরাপত্তা কাগজে মোড়ানো থাকবে। যেটি একবার খুললে আর লাগানো সম্ভব নয়। ৩০ মিনিট আগে প্রবেশে ব্যর্থতার কারণ যানজট ॥ এসএসসির মতো এইচএসসিতেও পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা কক্ষে আসন গ্রহণের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু প্রথমদিনই অনেক শিক্ষার্থী দেরি করেন। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে ১০ শিক্ষার্থীকে দেখা যায় দেরিতে প্রবেশ করতে। কারণ হিসেবে তাদের বেশির ভাগই যানজটকে দায়ী করেন। এই শিক্ষার্থীদের নাম খাতায় এন্ট্রি করে কারণ উল্লেখ করে তারপর কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে প্রবেশের কথা থাকলেও অনেক শিক্ষার্থীকে ৯টা ৪০ মিনিটের পরেও প্রবেশ করতে দেখা যায়। যেসব শিক্ষার্থী দেরি করেন তাদের মধ্যে জান্নাতুল ফেরদৌস রাজধানীল ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজের ছাত্রী তিনি দেরির কারণ হিসেবে যানজট ও রিক্সা থেকে পড়ে যাওয়াকে উল্লেখ করেছেন। একই কলেজের মেহেদী হাসান যানজটকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। মহানগর মহিলা কলেজের মারজান জাহানও দেরির জন্য যানজটকেই দায়ী করেন। দায়িত্বরত শিক্ষক ইসমত আরা দেরিতে আসা শিক্ষার্থীদের নাম ও দেরিতে আসার কারণ লিখে তাদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেন। রাজধানীর মতিঝিল মডেল কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়া একাধিক পরীক্ষার্থী জানান, পরীক্ষার হলে অনেক কড়াকড়ি ছিল। কিন্তু কোন রকম ঝামেলা হয়নি। তাদের আশা বাকি পরীক্ষাগুলোও নির্বিঘেœ দিতে পারবে। পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে অবস্থানকারী অভিভাবকরাও বলছেন, আগের পাবলিক পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নপত্রফাঁসের যেসব ঘটনা ঘটত এবারের এইচএসসি পরীক্ষার প্রথমদিনে তেমন কিছু না হওয়ায় তারা সন্তুষ্ট। নিজেদের সন্তান-সন্তুতির ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে পরীক্ষাগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে যেকোনভাবেই প্রশ্নপত্রফাঁস ঠেকানো জরুরী। তাদের আশা শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে আরও জোরালো ভূমিকা রাখবেন। তবে অনেক কেন্দ্রে যানজটের কারণে কেন্দ্রে আসতে দেরি হলে বিড়ম্বনায় পরতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। রাজধানীর মোহম্মদপুর মহিলা কলেজ কেন্দ্রে কিছু শিক্ষার্থী সামান্য দেরিতে আসলেও প্রথমে প্রবেশে আপত্তি তোলা হয়। এরপর তল্লাশির নামে রীতিমতো হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো নাম ও দেরির কারণ লিখেই সহসা ঢুকতে দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে বোর্ডে নাম, রোল নম্বর পাঠাও। পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে এমন তৎপরতায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পরে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে। নবাবগঞ্জে মোবাইলসহ এক শিক্ষক আটক ॥ ঢাকার পাশে দোহার থেকে জনকণ্ঠের নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছেন, নবাবগঞ্জ উপজেলায় দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজ কেন্দ্রের ভেন্যু নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এ্যান্ড কলেজ থেকে মোবাইলসহ নজরুল ইসলাম নামে এক শিক্ষককে আটক করেছে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ। ওই শিক্ষক উপজেলার জালারপুর গ্রামের শামসুদ্দিনের ছেলে এবং নবাবগঞ্জের পিকেবি স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। চট্টগ্রাম অফিস থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে পরীক্ষা। তবে রবিবার রাতে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সীতাকুন্ডের ভাটিয়ারীর পূর্ব হাসনাবাদ এলাকা থেকে ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের তিনজনকে আটক করেছে। এরা হলোÑ মোঃ আব্দুল্লা আল জামান (২০), মোঃ আল আমিন (১৯) এবং মোঃ আরিফ হোসেন (২০)। এরা ফেসবুকে প্রচার চালিয়ে প্রশ্নপত্র দেয়ার কথা বলে সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ আদায় করছিল। গোপন তথ্যে খবর পেয়ে জেলা পুলিশের টিম তাদের গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বগুরায় প্রতারক চক্রের এক সদস্য গ্রেফতার ॥ বগুড়া অফিস থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন, বগুড়ায় পরীক্ষায় ভুয়া প্রশ্নপত্রফাঁসের নামে প্রতারণাকারী সামিউল ইসলাম (১৬) নামে এক যুবককে র‌্যাব রবিবার রাতে গ্রেফতার করেছে। সে একটি প্রতারণাকারী চক্রের সদস্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই প্রতারণাকারী চক্র প্রশ্নপত্রফাঁসের নামে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া করছিল বলে র‌্যাব জানায়। অনুপস্থিত প্রায় ১৪ হাজার, বহিষ্কার ৭ পরিদর্শকসহ ৯৬ ॥ প্রথমদিন সারাদেশে ১৩ হাজার ৭১৮ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল, বহিষ্কার হয়েছেন ৭ পরিদর্শক ও ৮৯ পরীক্ষার্থী। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপ-কমিটির আহ্বায়ক তপন কুমার সরকার জানান, এইচএসসিতে দুই বিষয়ে (সর্বোচ্চ চার পত্র) ফেল করলে পরের বছর শুধু ওইসব বিষয়ে পরীক্ষা দেয়া যায়। কালকিনিতে ভুল প্রশ্নে এইচএসসি পরীক্ষা ॥ সারাদেশে এ বাংলা পরীক্ষা খ সেটে নেয়া হলেও মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় খ সেটের পরিবর্তে ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমথ রঞ্জন ঘটকের গাফিলতির কারণে খ সেটের প্রশ্নে পরীক্ষা না নিয়ে নেয়া হয়েছে ক সেটের মাধ্যমে। এতে করে চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। এদিকে বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে উপজেলায় বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষের মাঝে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। তবে প্রশাসনের দাবি বিষয়টি ভুলক্রমে হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী বলেন, ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার কারণে আমরা খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছি। সারাদেশে খ সেটে পরীক্ষা নেয়া হলেও আমাদের কালকিনিতে শুধু ক সেটে নেয়া হয়েছে। এখন এই ভুলের খেসারত কে দেবে। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত ইউএনও প্রমথ রঞ্জন ঘটক বলেন, আমাকে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যে ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে তা আমি না বুঝেই ক সেটের প্রশ্নে পরীক্ষা নিয়েছি। তবে আমি এ বিষয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা আমাদের পরীক্ষার্থীদের খাতা আলাদাভাবে পাঠাতে বলেছেন।
×