ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়োগ্যাস প্লান্ট অব্যবহৃত ॥ বিদ্যুত উৎপাদন বন্ধ

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৩ এপ্রিল ২০১৮

বায়োগ্যাস প্লান্ট অব্যবহৃত ॥ বিদ্যুত উৎপাদন বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অর্থাৎ খড়খুটার অভাবে বিদ্যুত উৎপাদনে যেতে পারছে না দেশের একমাত্র বায়োগ্যাস প্লান্ট। পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার চরবাঁশবাড়িয়া গ্রামে সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বায়োগ্যাস প্লান্টটি প্রায় দুই বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। একই সঙ্গে উৎপাদন হচ্ছে না উন্নতমানের জৈব সার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাঁচামালের অভাব ছাড়াও দক্ষ জনবল সঙ্কটকেও এজন্য দায়ী করেছেন। ফলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে, তা প্রায় ব্যর্থ হতে বসেছে। দশমিনা উপজেলার চরশাহজালালে রয়েছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ বীজবর্ধন খামার। তিনটি চরকে সংযুক্ত করে ১ হাজার ৪৪ একর জমির ওপর ২৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এ বীজবর্ধন খামার প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকার পরিবেশ উপযোগী বিভিন্ন ধরনের শস্যবীজ উৎপাদন করে তা কৃষকদের হাতে তুলে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে এ বীজবর্ধন খামার স্থাপন করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপচরের খামারের উৎপাদিত বীজ প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাতকরণ, গুদাম, ভবন, ডরমিটরি, লেবার সেট, যন্ত্রপাতি মেরামতের ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন কাজে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তায় এখানে বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর এ বায়োগ্যাস প্লান্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় গাজীপুরের বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেডকে। খামারের ভেতরে ৪০ হাজার ৮০৪ বর্গফুট আয়তনের জমির ওপর এ প্রকল্পে ৫০০ ঘনমিটার বায়োগ্যাস উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্লান্ট স্থাপন এবং বিদ্যুত উৎপাদনের যাবতীয় যন্ত্রপাতি প্রতিষ্ঠানটি যথাসময়ে স্থাপন করে। এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ কোটি ৪৯ লাখ ৬৩ হাজার ৭৪৩ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তাসির হিসমী জানান, চীনের ‘বসিমা’ কোম্পানির সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে বাংলাদেশে এ প্রথম খড়খুটা দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এ জন্য চীন থেকে ৬ প্রকৌশলী এখানে তিন মাস কাজ করেছেন। ২০১৬ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্লান্টে প্রথমে প্রসেসিং ইউনিটে খড়খুটা দেয়া হবে। যা ছোট ছোট টুকরো হয়ে অপর একটি চেম্বারের ডাইজেস্টারের মাধ্যমে গ্যাস হয়ে অপর দুটি চেম্বারে জমা হবে। সেখান থেকে গ্যাস শোধনাগার চেম্বারে জমা হবে। পরে গ্যাস শোধন হয়ে পিওর গ্যাস চেম্বারে যাবে। সর্বশেষ পিওর গ্যাস দিয়ে জেনারেটর চালু হবে। প্লান্টে দুটি জেনারেটর রয়েছে। এর একটি থেকে ৫০ কিলোওয়াট ও অপরটি থেকে ৩০ কিলোওয়াট অর্থাৎ মোট ৮০ কিলোওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হবে। উৎপাদিত এ বিদ্যুত দিয়ে পুরো খামারের চাহিদা পূরণ হবে। এছাড়াও নিরবছিন্ন বিদ্যুতের জন্য প্লান্টের চেম্ব^ারে সবসময় ৩০০ ঘনমিটার পিওর গ্যাস জমা থাকবে। প্লান্টটি চালু রাখার জন্য প্রতিদিন দেড় টন খড়খুটার প্রয়োজন। খামারে বীজ উৎপাদনের পর পরিত্যক্ত খড়খুটা দিয়েই বায়োগ্যাস প্লান্ট সচল রাখা যাবে। এছাড়া, গ্যাস উৎপাদনের প্রসেসিং হওয়া খড়খুটা পরবর্তীতে উন্নতমানের জৈবসার হিসেবে খামারের জমিতে ব্যবহার করা যাবে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার দুই বছরেও প্লান্টটি বিদ্যুত ও জৈবসার উৎপাদনে যেতে পারেনি। কর্তৃপক্ষ এজন্য প্রয়োজনীয় মানসম্পন্ন কাঁচামাল অর্থাৎ খড়খুটার অভাব ও দক্ষ জনবল সঙ্কটকে দায়ী করেছেন। এ বিষয়ে দশমিনা বীজ উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার বিশ্বাস জানান, খড়খুটা ভিত্তিক বায়োগ্যাস প্লান্টে বিদ্যুত উৎপাদনের উদ্যোগ দেশে এটাই প্রথম। কিন্তু খামারের খড়খুটা কিছুদিন সংরক্ষিত থাকলে এর গুণাগুণ হারিয়ে যায়। যা দিয়ে গ্যাস উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বিদ্যুত উৎপাদনও হচ্ছে না। খামারে পর্যাপ্ত গরুর গোবর এবং দক্ষ জনবলেরও সঙ্কট রয়েছে। যা কর্তৃপক্ষকে জানান হয়েছে। মানসম্পন্ন প্রয়োজনীয় খড়খুটার সংস্থান করা গেলেই প্রকল্পটি চালু করা সম্ভব হবে।
×