ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন ১২৮ পণ্যে শুল্ক আরোপ

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৩ এপ্রিল ২০১৮

মার্কিন ১২৮ পণ্যে শুল্ক আরোপ

চীনের সরকার ১২৮ রকম মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্তের তাৎক্ষণিক জবাবে বেজিং এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেসব মার্কিন পণ্যদ্রব্য টার্গেট করে চীন এই শুল্ক আরোপ করেছে তার মধ্যে শূকরের মাংস থেকে বিভিন্ন রকম ফলমূল রয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট ও বিবিসি। চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ইংরেজিভাষী দৈনিক পিপলস ডেইলি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে টুইট বার্তায় বলেছে, ‘চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ১২৮ রকম পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে শূকর মাংস থেকে বিভিন্ন রকম ফলমূল আছে।’ ট্রাম্প প্রশাসনের ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়ামের পর ওপর আমদানি শুল্ক আরোপের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এটি করা হয়েছে বলে বার্তায় উল্লেখ করা হয়। সোমবার থেকে চীনের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। একে গত মাসে ট্রাম্পের আরোপ করা আমদানি শুল্কের উপযুক্ত জবাব বলেই বেজিং মনে করছে। মার্চের প্রথম দিকে ট্রাম্প তার দেশের শিল্প বাঁচাতে ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়ামের ওপর উচ্চহারে আমদানি শুল্ক আরোপ করেন। এরপর অনেকগুলো দেশকে এই শুল্ক থেকে ছাড় দেয়া হলেও বেজিংকে সে সুবিধা দেয়নি ওয়াশিংটন। মার্চের শেষের দিকে বিশেষ করে চীনা পণ্যের ওপর ৬ হাজার কোটি ডলার শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতে চীনের বিনিয়োগের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এসব সিদ্ধান্ত চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে। ট্রাম্প অভিযোগ করেন আগের সরকারগুলো চীনকে ইচ্ছামতো মার্কিন বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি চুরি করার সুযোগ দিয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, চীন যে ধরনের বাণিজ্য নীতি অনুসরণ করছে তার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ হাজার কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, বেকার হয়ে পড়েছে অন্তত ৬০ লাখ মানুষ। চীনে মার্কিন পণ্য ব্যয়বহুল হয়ে উঠলে চীনা ক্রেতারা ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা বা অন্যান্য অঞ্চলের পণ্যের দিকে ঝুঁকবে। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা অবশ্য বরাবরের মতো এসব আশঙ্কার কথা নাকচ করে দিয়েছেন। চীনের বাণিজ্যিক উচ্চাশা প্রতিহত করার জন্য ট্রাম্প আমদানি শুল্ক করেছেন। কিন্তু চীন যেভাবে পাল্টা জবাব দিতে যাচ্ছে তাতে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর এশিয়ার একটি বড় বাজার হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ কারণে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা দেখার জন্য ট্রাম্পের ওপর চাপ সৃষ্টি হলো বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্পের একতরফা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে অনেক মার্কিন ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন দেশের সরকার আতঙ্কিত। কারণ নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম বছরে তিনি কোন কঠিন পদক্ষেপ নেননি। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় তিনি যে রকম বাগ্যুদ্ধ চালান প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি বাণিজ্য প্রশ্নে তুলনামূলকভাবে সংযত থাকেন। চীন একচেটিয়াভাবে বাণিজ্য সুবিধা নিচ্ছে এরকম অভিযোগ ট্রাম্প কয়েক বছর ধরেই করে এসেছেন। গত বছর ট্রাম্পের প্রধান উপদেষ্টাদের মধ্যে ছিলেন ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর গ্যারি কোহন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। ট্রাম্পের যেন বাণিজ্য ইস্যুতে কোন হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেন সে বিষয়ে তারা উভয়ই সচেতন ছিলেন। তাদের উভয়কেই শেষ পর্যন্ত বিদায় নিতে হয়েছে। ট্রাম্পের আশেপাশে এখন শুধু সংরক্ষণবাদীরাই রয়েছেন। ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়ামের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ সংরক্ষণবাদী চিন্তাভাবনারই প্রতিফলন। গত বছর চীন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করে অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র চীনে রফতানি করে। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধানের পরিমাণটি বেশ বড়। ট্রাম্প চান এই ব্যবধান কমিয়ে আনতে। তবে তার বাণিজ্য নীতি মিত্র দেশগুলোর কাছে স্পষ্ট নয়। তিনি কখন কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা নিয়ে মিত্র দেশগুলোকেও উদ্বেগে থাকতে হয়।
×