ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশী প্রতারক চক্র

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৩ এপ্রিল ২০১৮

বিদেশী  প্রতারক চক্র

দেশী প্রতারক চক্রের পাশাপাশি এবার একাধিক বিদেশী প্রতারক চক্রের হদিস পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ কর্তৃক তাদের গ্রেফতারের খবরও আছে। বিদেশী প্রতারক চক্রের সর্বশেষ শিকার হলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এক ই-মেইলের মাধ্যমে উক্ত অধ্যাপককে আমন্ত্রণ জানানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য। এর পর দফায় দফায় নানা অজুহাতে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় কয়েক হাজার ডলার। এর পরিমাণও কম নয়, প্রায় ছয় হাজার ডলার। সর্বশেষ তাকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডেকে এনে হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় একটি ব্যাগ। যার মধ্যে ছিল তথাকথিত জাল ডলার তৈরির মেশিন। অধ্যাপক বিষয়টি পুলিশকে জানালে ফাঁস হয় প্রতারণার বিষয়টি। পরে সঁটকে পড়া নাইজিরীয় এক প্রতারককে গ্রেফতার করা হয় হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে। প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ, এই প্রতারকের বাংলাদেশের হিসাব নম্বরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দফায় দফায় জমা পড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা। তার মানে দাঁড়ায়, নাইজিরীয় এই প্রতারক একা নন, তার পেছনে রয়েছে সংঘবদ্ধ শক্তিশালী চক্র, যাদের রয়েছে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। এই ঘটনা এই প্রথম বা নতুন নয়। বরং দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই প্রক্রিয়া। তারা নানা ছলে নানা কায়দায় প্রতারণা করে যাচ্ছে এ দেশীয় নাগরিকদের। কখনও মূল্যবান জিনিসপত্র, ওষুধবিষুধ, গ্রহরতœ বিক্রির কথা বলে, কখনওবা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে, কখনও বিদেশ যাত্রার প্রলোভন দেখিয়ে, আবার কখনও লটারি জেতার কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা ও ডলার। এই চক্রের মধ্যে আবার নারী সদস্যও আছে। এরা শুধু জাল টাকা বা ডলারই নয়, মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। পেটের ভেতরে বা পায়ুপথে মাদক ঢুকিয়ে পাচারের অভিযোগও আছে। তাদের সঙ্গে এ দেশীয় এক শ্রেণীর প্রতারকের সংশ্লিষ্টতাও ওপেন সিক্রেট। এই চক্র এমনকি ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড স্কিমিং ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে দফায় দফায় হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। মাঝে মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ-র‌্যাব বিভিন্ন হোটেল-রেস্তরাঁ ও বাসাবাড়িতে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু সংখ্যক বিদেশীকে গ্রেফতারও করেছে। তবে অধিকাংশই থেকে যাচ্ছে অধরা। কেননা, প্রতারক চক্রের সদস্যরা ঘন ঘন হোটেল ও বাসাবাড়ি পরিবর্তন করে। প্রতারণার ধরন পাল্টায়। সর্বোপরি অধিকাংশের কাছে বাংলাদেশে আসার এবং থাকার বৈধ কাগজপত্র নেই বা থাকলেও অধিকাংশ আসে শিক্ষার্থীর বেশে, পরে থেকে যায় অবৈধভাবে। প্রতারক চক্রের অধিকাংশই আফ্রিকার অধিবাসী। তবে কালেভদ্রে জার্মানি, লন্ডন, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের নাগরিকের নামও এসেছে প্রতারক চক্রের তালিকায়। আফ্রিকার অধিকাংশ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ বিধায় ভাগ্যান্বেষণে অনেকেই ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এখানে উল্লেখ্য, তারা প্রথম বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সুযোগ পায় ফুটবল খেলোয়াড়ের আবরণে অথবা শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে। পরে কিছু করতে না পেরে বেছে নেয় প্রতারণা তথা লোক ঠকানোর পেশা। নিয়মিত নজরদারিসহ পুলিশী তৎপরতার অভাবে গত কয়েক বছরে প্রতারণার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র। এটি প্রতিরোধ করতে হলে ব্যাপক জনসচেতনতার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা অবশ্যই বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে সাইবার নিরাপত্তা। বাড়ি ও হোটেল বিদেশীদের ভাড়া দেয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রত্যাশিত। সর্বোপরি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে, বিশেষ করে আফ্রিকায় ভিসা দেয়ার ব্যাপারে আরও কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। সময় থাকতে সাবধান হওয়া বাঞ্ছনীয়।
×