ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৩ এপ্রিল ২০১৮

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ

সারাদেশের প্রায় ২১ হাজার ৫০০ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই শীর্ষক সংবাদটি রীতিমতো উদ্বেগজনক বৈকি। গত পাঁচ বছরেও এ বিষয়ে কোন কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের গাফিলতিও সমান দায়ী। প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দান নিয়ে সরকারী কর্ম কমিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে টানাপোড়েনও চলছে। পিএসসি বলছে, প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিশেষ বিসিএসের উদ্যোগ নেয়া হবে। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর নিজেরাই কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি দিয়ে বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে ইচ্ছুক। তবে এতে শিক্ষার মান কমবে নিঃসন্দেহে। কেননা বর্তমানে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পাসসহ অনেক স্নাতক শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত। অন্যদিকে দেশে বিপুলসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত বেকার রয়েছেন। দেশে ৬৪ হাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০ হাজার ৫১৬টি প্রধান শিক্ষক এবং প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। প্রধানত অবসরে যাওয়ার কারণেই এই সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। ফলে স্বভাবতই দৈনন্দিন শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়াসহ নানামুখী সমস্যা-সঙ্কট তৈরি হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে। আর এর জন্য সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক শ্রেণী। অবশ্য অনুরূপ অবস্থা যে শিক্ষাঙ্গনগুলোতেই বিরাজ করছে তা নয়। বরং প্রায় সর্বত্রই সরকারী অফিস-আদালতগুলোতে দিন দিন বাড়ছে শূন্য পদের সংখ্যা। সরকারী মালিকানাধীন শিল্প কারখানা এবং কর্পোরেশনগুলোতেও অনুরূপ চিত্র প্রত্যক্ষ করা যায়। আর সরকারী-আধা সরকারী প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে নিয়োগ সবসময়ই জটিল, সময়সাপেক্ষ, ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মে ভরপুর, সর্বোপরি স্বজনপ্রীতি ও কোটানির্ভর। অনেক ক্ষেত্রে বিপুল আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও এক রকম ওপেন সিক্রেট। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগও প্রশ্নাতীত নয়, দীর্ঘসূত্রতা তো আছেই। দেশে বেকারত্বের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ বললেও বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারী সংস্থায় শূন্য পদের সংখ্যা বাড়ছে। তবে মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশই কর্মক্ষম শীর্ষক বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আরও যা আশার কথা তা হলো, দিনে দিনে বাড়ছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা পৌঁছাবে ৭০ শতাংশে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার এহেন অগ্রগতির খবর প্রকাশিত হয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) প্রতিবেদনে। এতে জনসংখ্যার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগানোর মতো উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভিন্নধর্মী কাজ, কারিগরি দক্ষতা, সৃজনশীল জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ বাংলাদেশের গড়ে তুলতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা হবে এর অন্যতম ভিত্তি। সেটা অর্জন করতে হলে ইউএনডিপি উল্লিখিত ৬৬ শতাংশ কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। অদক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তরিত করতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে। জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের ওপর। বাড়াতে হবে শিক্ষার মান। জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের দিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য জোর দিতে হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ওপর। একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরি বর্তমান সময়ের দাবি। পরিহার করতে হবে ধর্মীয় কূপম-ূকতা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন এবং তা অব্যাহত রাখতে হলে সুশাসনসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। সেক্ষেত্রে এই দিকটির দিকেও নজর দিতে হবে সরকারকে। এর পাশাপাশি কর্মদক্ষতা বাড়াতে শূন্য পদ পূরণে পিএসসিসহ সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরুরী উদ্যোগ নিতে হবে। সে অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকদের শূন্য পদ পূরণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর জরুরী উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলেই প্রত্যাশা।
×