ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেড় মাস আগেই মায়ের কাছেই শেষ বিদায় নিয়েছিল তানভীর

প্রকাশিত: ০৭:৫০, ২ এপ্রিল ২০১৮

দেড় মাস আগেই মায়ের কাছেই শেষ বিদায় নিয়েছিল তানভীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেড় মাস আগে মায়ের কাছ থেকে শেষ বিদায় নেয়ার সময় বলেছিলেন,“মা এটাই শেষ দেখা। আর হয়তো দেখা নাও হতে পারে।” মা তখনো কিছুই আঁচ করতে পারেননি এ কথার কি অর্থ। শনিবার রাতে যখন ছেলের আত্মহত্যার খবর পেলেন- তখন মা চিৎকার দিয়ে উঠলেন, এটাই কি বাবা তোর শেষ বিদায় ? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ ভবনের নিচ থেকে তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ বলছে, চাকরি না পেয়ে হতাশা থেকেই এ আত্মহত্যা করেছেন তিনি। বার বার ইন্টারভিউয়ে ভাল করার পরও চাকরি না পাওয়ার হতাশা থেকেই এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্যে, ভবনের নবম তলার বারান্দা থেকে নিচে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তানভীর। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলায়, বাবা মুক্তিযোদ্ধা ফসিউর রহমান। ঢাকায় থাকতেন খালা মেহেন্নেসার বাসায়। সবশেষ চাকরি করতেন উত্তরায় একটি বায়িং হাউসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সিসিটিভির ফুটেজ দেখেছি, সে তার ব্যাগ ও ফোন রেখে নিচে লাফ দেয়। এদিকে একমাত্র পুত্র সন্তানের এমন মৃত্যুতে পাগলপ্রায় ফসিউর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘হতাশা থেকে এমন কাজ করবে ছেলে, জীবনেও কল্পনা করতে পারিনি। মারা যাওয়ার দেড় মাস আগে একবার তানভীর বাড়িতে এসেছিল। কয়েকদিন বাড়িতে থেকে যাওয়ার সময় তার মায়ের পায়ে ধরে সালাম করেছিল। বলেছিল মা তোমাকে সালাম করে যাই। আর কোনদিন দেখা নাও হতে পারে। তানভীর রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তানভীর প্রায় সময়ই তার মায়ের কাছে বলতো, আমার বাবা কিসের মুক্তিযোদ্ধা? আমি বিভিন্ন সরকারী চাকরিতে পরীক্ষা দেয়ার পরও আমার চাকরি হয় না। এ থেকে তার মনে একটা ক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে। কথাগুলো তার মায়ের কাছ থেকে শোনার পর আমি তাকে ঢাকার উত্তরায় একটি বায়িং হাউসে চাকরির ব্যবস্থা করে দেই। তিন দিন কাজ করার পর হঠাৎ তার মাকে ফোন করে বলে, আমাকে তোমরা মাফ করে দিও। এরপর শনিবার রাতে তার এ মৃত্যুর খবর আসে। কিন্তু কোথাও তার চাকরি হচ্ছিল না। এ কারণে সবশেষ উত্তরায় এক বন্ধুর কোম্পানিতে গত বৃহস্পতিবার যোগ দেয় সে। কিন্তু এ চাকরি তার পছন্দ ছিল না। এজন্য হয়ত এমন করতে পারে বলে আমাদের ধারণা। মুহসীনের ভাষ্যে, ‘তার স্বপ্ন ছিল সরকারী চাকরি করবে। সরকারী চাকরিতে নিজের ইচ্ছায় কাজ করা যায় ও মর্যাদাও ভাল, এ কথা সে প্রায়ই বলত। কিন্তু তা পাওয়ার জন্য ‘আর্থিক লেনদেন’ ও ‘রাজনৈতিক পরিচয়ে’র কথা বলে আক্ষেপ করত সে। তানভীর মনে করত, কোন দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকায় তার চাকরি হতো না। তানভীরের বন্ধু সাফায়াত হোসাইন বলেন, সে খুব মেধাবী ছিল। এইচএসসি পরীক্ষার পর সে মানসিকভাবে এলোমেলো হয়ে যায়। তার ও পরিবারের প্রত্যাশা অনেক ওপরে ছিল। কিন্তু হিসাবে মিলছিল না বিধায় হতাশা থেকে এই কাজ করতে পারে সে। তবে তানভীরের সহপাঠীদের কণ্ঠে ভিন্ন কথাও শোনা যায়। ঢাবির এ্যাকাউন্টিং এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থী ইকবাল হাসান বলেন, ‘তানভীরের মাঝে এমন কিছু দেখিনি। সে অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকত। পরীক্ষায় সে পাস মার্ক তুলতে পারলে খুশি থাকত। সবার সঙ্গে সে মজা করত। বেশি উচ্চাশা তার মধ্যে লক্ষ্য করিনি। যদিও বেশি কিছু আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেনি। ঢাবির এ্যাকাউন্টিং এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ আব্দুল হাকিম বলেন, তানভীর ২০১৪-১৫ সেশনে ভর্তি হয়েছিল। দুই বছরের কোর্স হলেও সে মাঝখানে এসিসিএ করেছে। যার কারণে সে কোর্স শেষ করতে পারেনি। কী জন্য আত্মহত্যা করেছে, সেটি দেখছি। তবে তানভীর রহমান যে সরকারী চাকরির জন্য বেশ চেষ্টা করেছিলেন, সেটা তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তৎপরতা দেখলে বোঝা যায়। ২০১৪ সালে ১১ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের পরীক্ষার রেজাল্ট দেখার লিংক শেয়ার করে তিনি ক্যাপশন দেন-আর কতো চাপা মারবেন?’ উল্লেখ্য গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের তরুণ হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীও আত্মহত্যা করেন। বন্ধুদের ভাষ্যে, তিনিও চাকরি না পেয়ে নানারকম হতাশায় ভুগতেন।
×