ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রূপগঞ্জে সরকারী খাল ও কৃষি জমি দখল

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ২ এপ্রিল ২০১৮

রূপগঞ্জে সরকারী খাল ও  কৃষি জমি দখল

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ১ এপ্রিল ॥ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের কালনি, হিননাল, বঈলদা ও নোয়াগাঁও মৌজার জিন্দা ও নোয়াগাঁও এলাকায় মেরিন সিটি নামে একটি আবাসন প্রকল্প সরকারী খাল ও স্থানীয় কৃষকদের জমি না কিনে জবরদখল করে বালু ভরাট করেছে। ফসলি জমিতে দিনে-রাতে বালু ফেলে ভরাট করে ফেলছে। কৃষকরা প্রতিবাদ বা বাধা দিতে গেলেই মামলা-হামলার শিকার হতে হচ্ছে। এখন কৃষকদের মাঝে চলছে বোবা কান্না। হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকেই। স্থানীয় কৃষকরা জানান, জিন্দা ও নোয়াগাঁও এলাকার বেশির ভাগ মানুষই কৃষি ও সবজি চাষের উপর নির্ভর। ধানের ফসল ও সবজি চাষ করে চলে তাদের সংসার। এখানকরা সবজি এলাকার চাহিদার পাশাপাশি ঢাকাসহ বিদেশেও যায়। কয়েক বছর আগে এ এলাকায় মেরিন সিটি নামে একটি আবাসন প্রকল্পের নামে কিছু জমি ক্রয় করেন মাহাবুবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। আর এ আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে স্থানীয় একটি শক্তিশালী প্রভাবশালী চক্রকে সঙ্গে নিয়ে নেন মাহাবুবুর রহমান। এরপর থেকেই কাগজপত্রে নানা মারপ্যাঁচ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ বেশ কিছু জমি লিখে নেয়। এরপর থেকেই শুরু করেন জবরদখল করে বালু ভরাট কার্যক্রম। দিনে-রাতে মিলিয়ে ধান ও সবজি ফসলি জমি ভরাট করে ফেলছে তারা। আবাসন প্রকল্পের নিয়োজিত সন্ত্রাসী বাহিনীর হুমকির মুখে অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। ভুক্তভোগী কৃষক ও স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, শীতলক্ষ্যা নদী থেকে শিমুলিয়া বাজার হয়ে ব্রাক্ষণখালী, হিরননাল , কুলিয়াদি, কালনি, নোয়াগাঁও, নবগ্রাম, বঈলদা বড় আমদিয়া, আগলা হইয়া কালিগঞ্জ থানার কলিঙ্গা পর্যন্ত একটি প্রায় ৬০ ফুট প্রশস্ত সরকারী খাল ছিল। এ খাল দিয়ে এক সময় ট্রলার (ইঞ্জিনচালিত নৌকা) যোগে এসব এলাকার মানুষ চলাচল করত। এছাড়া এলাকার ধানের ফসল ও সবজি চাষের জন্য পানি সংগ্রহ করা হতো এ খাল থেকেই। বর্তমানে মেরিন সিটি হীরননাল, নোয়াগাঁও, বঈলদা মৌজা অংশের খালটি ভরাট করে নিজেদের দখলে নিয়েছে। এছাড়া ৬০ ফুট প্রশস্ত খালটি এখন ৮ ফুটে পরিণত হয়েছে। সরকারী খালের প্রায় ৫ বিঘা পরিমাণ জমি দখলে নিয়েছে আবাসনটি। আবাসন প্রকল্পটির নিয়োজিত একটি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে, তারা সব সময়ই প্রকল্প এলাকায় ঘোরাফেরা করে থাকে। কেউ বাধা দিতে আসলেই অতর্কিত হামলা চালানো হয়ে থাকে। কৃষকদের অভিযোগ, বীর হাটাবোর ওসমান খানের ২ বিঘা, নোয়াগাঁও এলাকার কৃষক সুরুজ মিয়া ওরফে সামসুদ্দিনের ২ বিঘা, ইছাহাকের ৪৪ শতাংশ, গিয়াস উদ্দিনদের আড়াই বিঘা, আফাজ উদ্দিনের ২০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিনের ২৪ শতাংশ, তরফুন্নেছার ১২ শতাংশ, মোশারফের ৩০ শতাংশ, হাসমত উল্লাহর ২০ শতাংশ, মিয়াজ উদ্দিনের ১২ শতাংশসহ আরও কয়েকজন কৃষকের জমি না কিনেই জোরপূর্বক জবরদখল করে বালু ভরাট করে ফেলছে তারা। ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিন বলেন, বেশ কিছু দিন আগে বিক্ষুব্ধ কৃষকরা ড্রেজারের পাইপ কেটে ফেলেছিল। পরে আবাসন প্রকল্পের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে পাইপ লাগিয়ে অবৈধভাবে বালু ভরাট কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন জিন্দা এলাকার জাহাঙ্গীর মোল্লা, রুহুল মোল্লাসহ আরও অনেকেই। সবজি চাষি সাদিকুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ভাই আমরা গরিব মানুষ। সবজি চাষ করে সংসার চলে। চাষ করা সবজির জমিতে তারা বালু ফেলে ভরাট করে ফেলেছে। ভয়ে কিছুই বলতে পারিনা। প্রতিবাদ করলে হামলা করতে আসে। কৃষক সাইজউদ্দিন বলেন, অনেকেই আসে আমাদের সহযোগিতা করতে, পরে বিভিন্নভাবে আবাসন প্রকল্পের কাছে বিক্রি হয়ে যায়। এ ঘটনায় ২০১৭ সালে জিন্দা এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মোল্লা বাদী হয়ে মহামান্য হাইকোর্টে মেরিন সিটির বিরুদ্ধে ৮১ নম্বর রিট পিটিশন দাখিল করেন। এ রিট পিটিশনের বলে হাইকোর্ট রাজউকের মাধ্যমে মেরিন সিটির কার্যক্রম কালনি মৌজায় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। কৃষকদের আরও অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ডিসি বা উর্ধর্তন কর্মকর্তাদের অবহিত করে কোন লাভ নেই। তাদের বরাবর অভিযোগ দিলে, কোন কাজ হয়না। উল্টো প্রতিবাদীদের মামলা-হামলার শিকার হতে হয়। এ বিষয়ে মেরিন সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহাবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা কারও জমি জোরপূর্বক ভরাট করিনি। ক্রয়কৃত জমিতেই বালু ভরাট করছি। এছাড়া কৃষি জমিতে বালু ভরাট হয়ে গেলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিচ্ছি। আমাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। সরকারী (ভাগ্যবতি) খাল ভরাটের বিষয়টি স্বীকার করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার বলেন, বার বার ওই কোম্পানিকে নিষেধ করা হয়েছিল খালটিকে ভরাট না করতে। এছাড়া খাল ভরাটের কারণে কৃষি জমিতে পানি সেচ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় বার বার বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া কৃষকদের জমিতে অবৈধভাবে বালু ভরাট করার বিষয়টিও সঠিক। হুমকির মুখে অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এসবের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাকেও নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
×