ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভিবাদন শেখ হাসিনা ॥ এদের দমন করতেই হবে

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২ এপ্রিল ২০১৮

অভিবাদন শেখ হাসিনা ॥ এদের  দমন করতেই হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ওদের ঠেকাতে হবে’। তাঁর এই কথা হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। তিনি দেশ চালান। তিনি এদেশ এ সমাজকে যেভাবে জানেন আমরা কেউই তা জানি না। ফলে মানতে হবে তিনি বিশ্বাস না করলে এ কথা বলতেন না। কাদের ঠেকাতে হবে সেটা বলতেও দ্বিধা করেননি তিনি। এই শক্তিটি আজ নয় দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে অরাজকতা আর অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। তাদের মূল কাজ বাংলাদেশ শাসন করা। আর এই কাজে তারা তাদের পেয়েছে এবং পাবে যারা কোন না কোনভাবে বাংলাদেশের আসল চেহারা পছন্দ করে না। আসল বলতে মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক উদার দেশ এদের দু’চোখের দুশমন। কারণ, এদের ওপরে যাই থাক ভেতরে পাকিপ্রেম। এ কথাগুলো লিখতে বা বলতে এখন লজ্জা হয়। ৪৭ বছর পরও এদেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসানো প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হয়, এদের ঠেকাতে হবে। দিনের পর দিন গদি আঁকড়ে থাকা এরশাদ বা পরবর্তীকালের খালেদা জিয়া সরকারকে ইতিহাস বিকৃতি ও দেশ জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য দোষারোপ করে আমরা মনে করেছিলাম দায়িত্ব শেষ। আওয়ামী লীগ কখনও সরকারে এলে সব ঠিক হয়ে যাবে বা ঠিক করে ফেলবে। সেটা হয়নি। না হওয়ার দুটো কারণ, প্রথমত এ দেশের মানুষ আজ পরিবর্তিত। শেষত আওয়ামী লীগও এখন আর আগের জায়গায় নেই। মানুষের পরিবর্তন বড় অদ্ভুত ধরনের। তারা জীবনে ভোগবাদী আচরণে আধুনিক অথচ অন্তরে মৌলবাদের প্রতি অনুগত। এ কথা এখন অস্বীকার করলে চলবে না বেশিরভাগ মানুষ এখন এমন। এই পরিবর্তন দেশের মানুষের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশও বদলে দিয়েছে। বিশেষত রাজনীতিকে এমনভাবে পাল্টে দিয়েছে যেখানে আদর্শ বা মুক্তিযুদ্ধ মূলত কথার কথা। মুখে বললেও অন্তরে ধারণ করার মানুষ বড় কম। যে কারণে দশ বছরের কাছাকাছি সরকারে থাকার পরও এদের ঠেকানোর দরকার বা কথা উঠছে। আজ অনেকদিন বিএনপি রাজপথে নেই। নেই আন্দোলনে। যারা বলেন তারা সরকার বা প্রশাসনের কারণে পারছে না আমি তাদের দলে না। প্রশাসন ছাড় দিলে ভাঙচুর আর হানাহানি ছাড়া কিছুই করতে পারবে না তারা। কারণ তাদের ইতিহাসে সংগ্রাম বা আন্দোলন বলে কিছু নেই। সরকারে থেকে জোর করে দল গঠন করার পর মানুষের সমর্থন পাবার পেছনে নেগেটিভ কারণ সমৃদ্ধ বিএনপি কখনও আন্দোলন করেনি। যারা বলেন, এরশাদ আমলে করেছিল তাদের বলব অতীত ঘেঁটে দেখুন। জানুন, দেখবেন তারা নিয়মমাফিক রাস্তায় নেমে আসা আর বক্তৃতা দেয়ার বাইরে আর কি করেছিল? যেটুকু সাহসিকতা বা সংগ্রাম তার পেছনে ছিল ছাত্রদল। সেটাও নেগেটিভিটি। এককালে এনএসএফ বা ছাত্র সংঘ যা করত তারই পুনরাবৃত্তি। যখন সে প্রয়োজন ফুরাল যখন দেশে নতুন রক্ত নবীন তারুণ্যের আগমন ঘটল ছাত্রদল ও আস্তে আস্তে উধাও হয়ে গেল। বিদেশে এসে দেখেছি একদা এসব দলের নেতারা আজ বাইরে মূলত হতাশ জীবনযাপন করেন। যার মূল কারণ বিএনপির ইতিহাস বিরোধিতা আর স্ববিরোধী অবস্থান। যারা বলেন তাদের নেতা স্বাধীনতার ঘোষক তারা কিভাবে রাজাকারদের সঙ্গে আঁতাত করে চলেন? জিয়াউর রহমানের সেক্টর কমান্ডার পরিচয়টি সম্ভবত সে কারণেই দলে গুরুত্ব পায়নি। আজ তারা হতদ্যম হলেও হাল ছাড়েনি। খবরে দেখলাম বেগম জিয়া নাকি স্বাধীনতার দিন কারাপ্রহরীদের কাছে জানতে চেয়েছেন, শেখ হাসিনা কি তাঁকে মানুষের মন থেকে চিরতরে মুছে দেবেন? কতটা নার্ভাস আর নাজুক হলে তিনি এই প্রশ্ন করতে পারেন। আর যদি না করেনও আমরা বুঝতে পারি এটাই ঘুরছে তাদের মনে। শেখ হাসিনা কি পারেন আর কি পারেন না সেটা বিএনপি জামায়াতের চেয়ে ভাল কেউ জানে না। তাই তারা আজ মরিয়া। তাদের চিন্তায় আওয়ামী লীগ যতটা তারচেয়ে বেশি শেখ হাসিনা। কারণ তিনি একা এক হাতে তাদের খারাপ কাজ ও ষড়যন্ত্র দমন করে চলেছেন। আমরা জানি তিনি পারবেন এবং পেরেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাঁর নিজের দলেও অনেক কিছু দমন করতে হবে এখন। মানুষ রাজনীতিতে আগের মতো আগ্রহী না। তারা ভাল আছে। তাদের হাতে টাকা-পয়সা আছে তারা এখন চায় নিরাপত্তা। ১৬-১৭ কোটি মানুষের দেশে যতটা ভাল থাকা সম্ভব ততটা আছেন তারা। কিন্তু লীগের কিছু নেতা আর সদ্য গজিয়ে ওঠা সুবিধাবাদীদের কারণে অনেক অর্জনই এখন তোপের মুখে। বিশেষত সামাজিক মিডিয়ার কারণে তাদের বদ কাজগুলো গোপন থাকছে না। খাই খাই স্বভাবের নেতাদের দমন করতে হবে। সঙ্গে আছে ধর্ষণ হত্যার মতো নারকীয় অত্যাচার। এর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করা অনুচিত। মানুষ তা করছেও না। তারা চাইছে সরকারের কঠোর অবস্থান। যা মাঝে মাঝে দেখা গেলেও ধারাবাহিকভাবে দেখা যায় না। একেকটা ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তির ওপর কালিমালেপন করে। তাই আমরা চাই সরকার এ বিষয়ে কঠোর হোক। তবে শেখ হাসিনা যা বলতে চেয়েছেন তার আশু অনুধাবন জরুরী। আমাদের সমাজে ভারতবিরোধিতা আর সাম্প্রদায়িকতার কারণে বিএনপি রাজনীতি ছাড়াই টিকে আছে। আর এই টেকার পেছনে ছিল কালোটাকা, পাকি মদদ ও বদলে যাওয়া মানুষের মনোভাব। এখনও তা শেষ হয়ে যায়নি। লন্ডনকে কেন্দ্র করে যে ষড়যন্ত্র আর টাকার খেলা তা দমন করতে হবে সবার আগে। সঙ্গে দেশের ভেতর যে ষড়যন্ত্র তার সমূলে উৎপাটন প্রয়োজন। যে কোন দল রাজনীতি করবে রাজনীতি করে সরকারে আসবে এটাই নিয়ম। সে প্রক্রিয়া চালু থাক। বিএনপি যদি সে প্রক্রিয়ায় আসতে পারে আসবে। কিন্তু রাজনীতির নামে ধ্বংস মানুষ মারা আর বিভেদকামিতা মানুষ নেয়নি নেবেও না। তবে ভয় আছে। প্রান্তিক নামে পরিচিত দরিদ্রশ্রেণীর মানুষকে আপনি বাড়ি বানিয়ে হাতে টাকা দিয়ে স্বাভাবিক সুন্দর জীবন দিলেও তার আগ্রহ অপপ্রচার আর মানসিকতার নোংরামিতে এটা তাদের দোষ নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার বিশ্বাস তার আচরণ তার ধর্মবিষয়ক জটিলতা। সে জায়গাটা আগে সংস্কৃতি পরিষ্কার করত। এখন আর করে না। করে না বলেই মানুষের মনের ময়লা বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী হয়ত জানেন না তাঁর বিশ্বাসের অনেক মানুষই মুখ ও মুখোশে ঝাপসা। এই জায়গাটা দেখভাল করার জন্য সংস্কৃতির জয় ও অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে হবে। শেখ হাসিনা স্পষ্টভাষী। আমরা বিদেশে থেকেও দেখতে পাচ্ছি সন্তর্পণে ছোবল মারার জন্য তৈরি হচ্ছে তারা। একবার যদি তা পারে আমাদের দেশ ও সমাজ আজকের জায়গায় থাকবে না। এটা জানার পর বোঝার পরও যারা সরকার এবং গদি নিশ্চিত ভাবছেন তাদের হয়ত কিছু হবে না। কিন্তু দেশ আর মানুষ ডুবে যাবে হতাশা আর অন্ধকারের তলায়। শেখ হাসিনা তাঁর প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে সেটা বুঝেছেন বলেই এদের দমন করতে বলেছেন। তিনি একা তো তা পারবেন না। পারতে হবে সবাই মিলে। আমরা সবাই তৈরি তো?
×