ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ, অটিজম ও সূচনা ফাউন্ডেশন

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২ এপ্রিল ২০১৮

বাংলাদেশ, অটিজম ও সূচনা ফাউন্ডেশন

আজ ২ এপ্রিল। বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। এই দিবসকে স্মরণে রেখে নিচের গল্পটি বলার পেছনে কারণ হলো- অটিস্টিক শিশুদের কেউ না কেউ কোন না কোন বিষয়ে অতিরিক্ত মেধাবী হতে পারে। আমি তখন মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ১৯৭০-১৯৭৬। আমার মনে পড়ে না সাইকিয়াট্রি, মেডিসিন, শিশুরোগ বিদ্যা এবং নাক কান ও গলা রোগের কোন বিষয়ে অটিজম সম্পর্কে আমি কোন শিক্ষকের মুখ থেকে কিছু শুনেছি এবং পরীক্ষায় পাসের জন্যও অটিজম সম্বন্ধে তেমন কিছু পড়িনি। যেটুকু পড়েছি শুধু ডাউনস সিনড্রোম সম্বন্ধে। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত আমি যখন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে কাজ করি তখনও আমি কোন শিশুকে দেখে অটিজম ডায়গনোসিস লিখিনি। ১৯৮০-৮৩ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে সোভিয়েত ইউনিয়নে অবস্থানকালে তিনটা অটিস্টিক রোগী দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। যার প্রত্যেকটাই ভিন্ন ধরনের। কারও সঙ্গে কারওটা মিল ছিল না। বুদ্ধিমত্তা বা গড়ন দেখে বোঝার কোন উপায় ছিল না তারা অটিজম স্পেকট্রাড ডিজঅর্ডারের রোগী অথবা অস্বাভাবিক। আমার সুপারভাইজার অধ্যাপক দ্রাগোমিরেস্কির সঙ্গে একদিন তো একটি ১৫/১৬ বছরের ছেলের মায়ের একটু কথা কাটাকাটি হয়ে গেল। ছেলেটার মা বারবার অধ্যাপককে অনুরোধ করছিল সিরিয়াল ব্রেক করে তার ছেলেকে দেখার জন্য। যুক্তিও তুলে ধরেছিলেন এ বলে যে, আগে দেখে দিলে সে তার অঙ্ক ক্লাসে যোগ দিতে পারবে এবং মায়ের দাবি ছেলেটা অঙ্কে খুব ভাল। অধ্যাপক ঠাট্টার সুরে জিজ্ঞেস করলেন অঙ্কে খুব ভাল, তাহলে বল দুই যোগ দুই সমান কত? ছেলেটির ঝটপট জবাব ৫। অধ্যাপকের ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দেখে ছেলেটির মা প্রতিবাদের স্বরে বললেন, আমার ছেলে যখন বলেছে ২ +২ =৫ তাহলে সে প্রমাণ করতে পারবে। অধ্যাপক এক টুকরা কাগজ বের করে দিলে ছেলেটি প্রমাণ করে দিল বীজ গণিতের সূত্র ধরে ২+২=৫। অটিজম এক বিশেষ ধরনের মানসিক প্রতিবন্ধকতা, যার শুরু শৈশবে, কিন্তু স্থায়িত্ব প্রায় সারাজীবনের। সাধারণভাবে মানসিক প্রতিবন্ধী বলতে মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়া বা নিম্নমানের বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদেরই বোঝান হয়। কিন্তু অটিজম এমন একটি বিশেষ ধরনের প্রতিবন্ধকতা যা জড়বুদ্ধি বা কম বুদ্ধি থেকে পৃথক। এই শ্রেণীর প্রতিবন্ধকতার বৈশিষ্ট্য হলো শিশুর ইন্দ্রিয়গুলোর গঠনমূলক গুণ অক্ষুণ্ণ থাকলেও কার্যক্ষমতা ক্রমশ কমে যায়। অর্থাৎ ইন্দ্রিয় সচেতনতা কমতে থাকে। যার ফলে বাকি মানসিক এবং সামাজিক গুণগুলোও প্রকাশিত হয় না। যেমন, একজন অটিস্টিক শিশুর শ্রবণযন্ত্র স্বাভাবিক থাকলেও শিশু শ্রবণ সংবেদনের সঠিক ব্যাখ্যা করতে পারে না। তাই শিশুকে ডাকলে সাড়া দেয় না বা শব্দে প্রতিক্রিয়া করে না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যে, শিশুটি বধির। দৃষ্টি সংবেদনেও একই রীতি অনুসরণ করে। সামনে উত্তেজক ব্যক্তি বা বস্তু থাকলেও শিশু প্রতিক্রিয়া করে না। এর ফলে সামাজিক শিক্ষা বা সাধারণ শিক্ষা কোনটাই হয় না বা মাত্রাভেদে নিম্নমানের হয়। ডাঃ মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অটিজম বইতে অটিস্টিক শিশুর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- ১. সকলের মাঝে থেকেও একাকী। ২. অস্বাভাবিক খেলা, যেমন- জড়বস্তু নিয়ে তাৎপর্যহীন খেলা। ৩. যে কোন বস্তু নিয়ে ঘোরানো বা পাক খাওয়ানো, যেমন-খেলনা গাড়ি হাতে পেলে সেটি উল্টে চাকাটা হাত দিয়ে ঘোরানো ইত্যাদি। ৪. অন্য ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি ঔদাসীন্য। ৫. অদ্ভুত গতিবিধি এবং মুদ্রাদোষ, যেমন- অপ্রয়োজনীয় হাঁটা, অপ্রয়োজনীয় ও অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে মুখে শব্দ করা ইত্যাদি। ৬. অস্বাভাবিক শিখন পদ্ধতি আয়ত্ত করতে না পারা। ৭. অস্বাভাবিক সামাজিক আচরণ। ৮. বাক্হীনতা বা বাকস্বল্পতা। ৯. স্থান, কাল বা ব্যবহারের পরিবর্তনে অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া। ১০. দৃষ্টি বিনিময়ের অভাব- মানুষের সঙ্গে অথবা বস্তুর সঙ্গে। ১১. অর্থহীনভাবে শব্দের প্রতিধ্বনি করা। ১২. বিশৃঙ্খল আচরণ। ১৩. কখনও কখনও কোন বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা, যেমন, গান, অঙ্ক ইত্যাদি। ১৪. বুদ্ধাঙ্ক স্বাভাবিক বা উচ্চমানের হতেও পারে। মনে রাখতে হবে সব লক্ষণই একটি শিশুর মধ্যে থাকবে না। লিও ক্যানারের আবেগজনিত অক্ষমতার তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে অর্থাৎ ‘সর্বাঙ্গসুন্দর শিশু একটি কাচের বক্সের মধ্যে’- এই বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে এবং এই কাচের দেয়াল ভাঙতে হবে এই উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৫০ সাল থেকে পরিচালনা পদ্ধতির গবেষণা শুরু। মনঃশিক্ষণের ওপর ভিত্তি করে বেটেলহেম (১৯৬৭), ভাষাবিজ্ঞানের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে রাটার এবং স্কপলার (১৯৭৮), আচরণ সম্বন্ধীয় চিকিৎসা তত্ত্ব, বৌদ্ধিক তত্ত্ব এবং শিখনের বিভিন্ন তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে লোরনা উইং (১৯৭৬), আইভার লোভাস (১৯৭৭) এবং আরও অনেকে কিছু অত্যন্ত কার্যকরী পরিচালন পদ্ধতির কথা বলে গেছেন। সত্তরের দশকের গবেষকদের ভিত্তি হলো বুদ্ধি ও ভাষা প্রকাশের অক্ষমতা থেকেই আসে আবেগজনিত অক্ষমতা। আইভার লোভাসের পরবর্তী কাজে (১৯৮৭) মূলত বুদ্ধি এবং বিদ্যালয় শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েই পরিচালন পদ্ধতি নির্দেশ করা হয়েছে। এর পরবর্তী অর্থাৎ আশির দশকের শেষ এবং নব্বইয়ের দশকে আবার ক্যানার তত্ত্ব পরিচালন পদ্ধতি প্রাধান্য পেয়েছে। ডয়সন (১৯৮৯) এবং ফ্রিথ (১৯৮৯) অটিজমের এক সামগ্রিক ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করেছেন, যাতে আছে সামাজিক আবেগজনিত এবং বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতার পারস্পরিক সম্বন্ধ। আধুনিক গবেষণায় কোন একটি লক্ষণকে প্রাধান্য না দিয়ে দুটি বা তিনটি মূল লক্ষণের পারস্পরিক সম্বন্ধের ওপর ভিত্তি করে পরিচালন পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে (কোহেন এবং বোল্টন, ১৯৯৩)। সূচনা ফাউন্ডেশন, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার (এনডিডি) এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে এ্যাডভোকেসি, গবেষণা, দক্ষতা বৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত অলাভজনক বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠান। সূচনার লক্ষ্য হচ্ছে এনডিডি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনে কার্যকর সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা। মানসিক স্বাস্থ্য, এনডিডি সংক্রান্ত নীতিমালা ও কার্যক্রমসমূহকে একত্রীভূত এবং বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের প্রচেষ্টায় ২০১১ সালে (অটিজম স্পিকস এবং WHO-এর যৌথ উদ্যোগে) গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ও ২০১২ সালে গ্লোবাল অটিজম বাংলাদেশের জন্ম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত হয় আজকের সূচনা ফাউন্ডেশন। সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের অক্লান্ত চেষ্টার ফলশ্রুতিতে ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজ্যাবিলিটি সুরক্ষা আইন-২০১৩’ পাস হয়। এর পাশাপাশি WHO-এর রেজুলেশন নং-SEA/RC65/R8 & WHA 67.8 গৃহীত হয়। এর ফলে বাংলাদেশের জাতীয় নীতিমালা এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন পরিকল্পনায় মানসিক স্বাস্থ্য, অটিজম ও অন্যান্য এনডিডিযুক্ত ব্যক্তিদের কার্যকর সেবা এবং সহায়তা প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। টঘওঝউজ প্রণীত আন্তর্জাতিক নির্দেশিকাগুলোর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমস্যাগুলোর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মুখপাত্র হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। সম্প্রতি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন WHO-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের অটিজম বিষয়ক শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। সূচনা ফাউন্ডেশনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য এবং নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পথ চলায় সহযোগিতা করা, যেন তারা আর্থিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সমাজের উন্নয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে শুধু তাদের ডিজঅর্ডার বা সমাজ কর্তৃক কোন বৈষম্যের কারণে। সূচনা ফাউন্ডেশন এমন একটি সমাজের কথা চিন্তা করে যেখানে যে কোন ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক এবং উপযুক্ত পরিবেশ বিদ্যমান যেন তারা একটি কার্যক্ষম ও অর্থবহ জীবনযাপন করতে পারে। সূচনার লক্ষ্য হচ্ছে এমন কর্মসূচী গ্রহণ করা যা অভিনব, কার্যকরী ও স্বল্প ব্যয়ের ফলে তা বর্তমান রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোয় সরকারী এবং বেসরকারী পর্যায়ের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। ২০০৯ সালের ৭ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্দেশ পেলাম প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করার। মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার অব এক্সলেন্সের ডিপিপি পাসের পথে। সেদিনের একনেক সভায় কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর একক এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ডিপিপি পাস করল তা আমার কল্পনা, এমনকি ধারণার বাইরে। কি অসাধারণ ব্যক্তিত্ব আর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। যেমনি নির্দেশ ঠিক তেমনি নেমে পড়লাম ঈঘঅঈ অর্থাৎ সেন্টার ফর নিউরো ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেনের কর্মসূচী তৈরিতে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাইফুল ইসলামের আশাতীত সহযোগিতায় ৬ কোটি টাকার এই কর্মসূচী যেমন পাস তেমনি ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক তার উদ্বোধন। শুরু হলো আনুষ্ঠানিকভাবে অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা নিয়ে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা। অপ্রতিরোধ্য তো হবেই, যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, সুদৃষ্টি ও পরামর্শ আছে। তারপরের যাত্রা হলো প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন, যা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং অটিজম স্পীকসের সহায়তায় Conference on Autism Spectrum Disorder & Developmental Disabilities in Bangladesh & South Asia যেখানে ১৪টি দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব, যার মধ্যে ছিলেন ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের চেয়ার মিসেস সোনিয়া গান্ধী এবং শ্রীলঙ্কার ফার্স্ট লেডি, মালদ্বীপের উপরাষ্ট্রপতির পত্নী। এই কংগ্রেসেও সফলতা এসেছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান এবং সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য। এই কংগ্রেস ঐ ধরনের বিশেষ শিশুদের মা-বাবা এবং নিকট আত্মীয়দের মনে ৪.৫ থেকে ৫.৫ রিকটার স্কেলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে অর্থাৎ প্রচন্ডভাবে সচেতন হয়ে ওঠেন এবং বুঝতে পারেন এটা কোন রোগ-ব্যাধি নয়, এদেরকে শিকল দিয়ে বেঁধে না রেখে অথবা লুকিয়ে না রেখে প্রকাশ্যে নিয়ে আসার সময় হয়েছে। তাদেরও সমাজে অনেক কিছু দেয়ার সামর্থ্য আছে, যদি সুযোগ দেয়া হয়। এখান থেকেই স্বাক্ষরিত হয় “Dhaka Declaration” অর্থাৎ ‘ঢাকা ঘোষণা’। ২০১৪ সালের নবেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক মার্গারেট চেনের উপস্থিতিতে SEARO-এর ১১টি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে একদিনের কর্মশালা ও ২টি Side Event-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের এএসডি শিশুদের জন্য কর্মসূচী অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলতে থাকে। যার কৃতিত্ব এবং কর্তৃত্ব বর্তমান সূচনা ফাউ-েশনের চেয়ারপার্সন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের উপদেষ্টা, বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সায়েমা ওয়াজেদ হোসেনের, যিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চ্যাম্পিয়ন অব দি পাবলিক হেলথ। WHO/SEARO Resolution No: SEA RC 65/R8 ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর পাস হয় নিম্নক্ত শিরোনামে Comprehensive and co-ordinated efforts for the management of Autism Spectrum Disorders & Developmental Disabilities. এখানে উল্লেখ্য, অটিজম আন্দোলনে বিশ্বব্যাপী সায়েমা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের ভূমিকা সার্থক রূপ লাভ করে ১২-১২-১২-১২ তে অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর ২০১২ সালের জাতিসংঘ সময় ১২টা ১২ মিঃ বাংলাদেশে কর্তৃক উত্থাপিত অটিজম বিষয়ক প্রস্তাব পাশের মাধ্যমে। আবারও বাংলাদেশ এবং সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল। ২৪ মে ২০১৪ সাল সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের নেতৃত্বে ও বাংলাদেশের প্রস্তাবনায় এবং ৫০টি দেশের সহপ্রস্তাবনাতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০১২ সালের প্রস্তাবটি পাস করে। আরও একটি অগ্রগতি লাভ হয় গ্লোবাল অটিজমকে দেয়া হয় এডভোকেসির (ওকালতির) কাজ। এখানে জেনে রাখা ভাল এসব ঐশ্বরিক শিশুকে যদি স্বাভাবিক শিশুদের মতো ভালবাসা দিয়ে, যতœ দিয়ে লালন করা হয় তাহলে তারাও অন্যান্য সুস্থ শিশুর মতো হতে পারে। শুধু দরকার গোটা সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ও আন্তরিক চেষ্টা। প্রতিবন্ধীরা একজন নাগরিক। সুস্থ ব্যক্তির মতো প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সমমর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকা এবং বসবাসের অধিকার রয়েছে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ টঘঈজচউ ঘোষণা করে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ ঘোষিত প্রতিবন্ধীদের অধিকার সনদে স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা নিমিত্তে ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন, ২০১৩’ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন ও কল্যাণে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়াও ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের বিধিমালা, ২০১৪’ এবং ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা বিধিমালা, ২০১৪’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ সকল আইন ও বিধিমালা প্রণয়নে সমাজসেবা অধিদফতর মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন, ২০১৩’-এর ১৩ নং ধারা মোতাবেক “নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টি বোর্ড” গঠন করা হয়েছে, যা সরকারের শিশুবান্ধব এবং নাগরিক কল্যাণ ও কল্যাণকর রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার বহির্প্রকাশ। জানি না, ভবিষ্যতে অটিজম আন্দোলনের এই ইতিহাস এদেশের মানুষ সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করবে কিনা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর মাঠ পর্যায়ে গবেষণার মাধ্যমে যুগান্তকারী কাজ সমাধান করেছেন, যা অন্য কোন দেশ অর্থাৎ Developing Countries এর আছে কিনা জানি না। বাংলাদেশে প্রায় ১৬ লাখ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে। অবশ্যই ২য় পর্যায়ে একটি জরিপ করলে আরও সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে। সূচনা ফাউন্ডেশন সচেতনতা (Awareness) সৃষ্টি ছাড়াও বর্তমানে ওকলাতি বা পরামর্শ দান (Advocacy), গবেষণা (Research), জনগণের ক্ষমতা বৃদ্ধির (Capacity Building) প্রয়োজনে সরকারকে সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছে। আজ ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল WAAD অর্থাৎ World Autism Awareness Day-এর স্লোগান হলো “নারী ও বালিকাদের ক্ষমতায়ন, হোক তারা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।” বর্তমান সরকার এসব বিশেষ শিশুর জন্য যা করছে পৃথিবীর অন্যান্য সভ্য ও উন্নত দেশের সঙ্গে তা তুলনীয় তবে শুধু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়, জনগণ ও সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যৌথ প্রচেষ্টায় এ ধরনের কঠিন কাজকেও সহজ করে তোলা যায়। ২১ মার্চ ডাউন সিনড্রোম দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রদত্ত বাণীতে উল্লেখ করেছেন ‘আমি সরকারের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত সকল শিশু ও অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।‘ জয় হোক ঐশ্বরিক শিশুগোষ্ঠীর। লেখক : ভাইস চ্যান্সেলর (সাবেক) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×