ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বর্ষবরণ উদযাপনের জোর প্রস্তুতি

১৩০ শিল্পীর কণ্ঠে সম্মেলক, বাঙালিত্বের জয়গান করবে ছায়ানট

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২ এপ্রিল ২০১৮

১৩০ শিল্পীর কণ্ঠে সম্মেলক, বাঙালিত্বের জয়গান করবে ছায়ানট

পহেলা বৈশাখে যত উৎসব অনুষ্ঠানই থাকুক না কেন, শুরুটা ছায়ানটের সঙ্গে হবে। হতেই হবে। না, কোন বিধি-নিষেধ নেই। বাঙালীর প্রাণের চাওয়াটি এ-ই। আর প্রাণের চাওয়া উপেক্ষা করে, সাধ্য কার? ঘুম থেকে ওঠে সকলে তাই রমনার পানে ছুটে যান। এভাবে বর্ষবরণ নয় শুধু, বাঙালিত্বের বোধ বাঁচিয়ে রাখতে, জাগিয়ে তুলতে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখে চলেছে ছায়ানটের আয়োজন। এবারও প্রভাতী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয়া হবে বাংলা নববর্ষকে। ১৪২৫ বঙ্গাব্দ সামনে রেখে এখন চলছে জোর প্রস্তুতি। প্রতিদিনই মহড়া। প্রতিদিন গলা সাধা। নানা বিষয়ে বৈঠক। পর্যালোচনা। সব মিলিয়ে উৎসবের আগে উৎসবমুখর ধানম-ির ছায়ানট ভবন। ছায়ানটের আয়োজন মানেই শুদ্ধ। সুন্দর। এ কারণে অনেক আগেভাগে শুরু হয়ে যায় মহড়া। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রাথমিকভাবে কিছু গান নির্বাচন করে প্রস্তুতি পর্বের সূচনা করা হয়। বর্তমানে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয়ে মহড়া চলছে অনেক রাত পর্যন্ত। প্রতিদিন মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। বিভিন্ন বয়সী ছেলে মেয়েরা মন থেকে গাইছে। প্রস্তুত হচ্ছে। তাদের নিয়মিতভাবে শেখাচ্ছেন বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, রেজাউল করিম, সেমন্তী মঞ্জরীসহ কয়েকজন শিল্পী। সিনিয়ররাও ভুলগুলো ধরিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সন্জীদা খাতুন নিজে সময় দিচ্ছেন। জানা যায়, ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’ গানটি কী করে গাইতে হবে তা বুঝিয়ে দিতে নিজ বাসায় শিল্পীদের ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জানা যায়, পহেলা বৈশাখ রমনা বটমূলে স্থাপিত মঞ্চে সম্মেলক গান করবেন প্রায় ১৩০ জন শিল্পী। একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন খ্যাতিমান গায়িকা মিতা হক, লায়সা আহমেদ লিসা, তানিয়া মান্নান, আবুল কালাম আজাদ, সুমা রায়, সেঁজুতি বড়ুয়া প্রমুখ। গান গাওয়া ছাড়াও অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। তিনি জানান, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের কিছু গান চূড়ান্ত হয়েছে। গানের প্রাথমিক তালিকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’, ‘বাঁধন ছেঁড়ার সাধন হবে’, ‘ওই পোহাইল তিমিররাতি’ ইত্যাদি গান গাওয়ার আয়োজন চলছে। বাঙালীর আরেক আশ্রয় নজরুল। প্রিয় কবির ‘শুভ্র সমুজ্জ্বল, হে চিরনির্মল’, ‘প্রভাত বীণা তব বাজে হে’, ‘এলো এলো রে বৈশাখী ঝড় এলো এলো রে’, ‘মেঘবিহীন খর-বৈশাখে’ গাওয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। দ্বিজেন্দ্র লাল থেকে নেয়া হয়েছে ‘আজি নূতন রতনে ভূষণে যতনে প্রকৃতি সতীরে সাজিয়ে দাও’ গানটি। থাকছেন চারণ কবি মুকুন্দ দাসও। তাঁর ‘বান এসেছে মরা গাঙে খুলতে হবে নাও’ গানটি গাওয়ার কথা রয়েছে অনুষ্ঠানে। গাওয়া হবে কবি সুকান্তের ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন।’ বাংলা নববর্ষের আয়োজনে লোকসঙ্গীতের তুলনা হয় না। বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে থাকবে একাধিক জনপ্রিয় লোক গানের পরিবেশনা। একটি গানের কথা না বললেই নয়, গানটি- ও আমার দরদী আগে জানলে তোর ভাঙ্গা নৌকায় উঠতাম না...। বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে থাকবে আবৃত্তি ও পাঠ। কবিতায় বৈশাখ ও বাঙালীর কথা বলবেন খ্যাতিমান বাচিক শিল্পী হাসান আরিফ ও শামীমা নাজনীন। এর আগে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হবে বাঁশির আলাপে। ভোর সোয়া ৬টায় বাঁশিতে আহির ভাইরো শোনাবেন মর্তুজা কবির মুরাদ। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বক্তব্য রাখবেন ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। জানা যায়, এবার অফ হোয়াইট রঙের জমিন আর বিভিন্ন রঙের পাড় যুক্ত শাড়ি পরে মঞ্চে ওঠবেন নারী শিল্পীরা। পুরুষ শিল্পীরা পরবেন সিদ্ধ জলপাই রঙের পাঞ্জাবী। তবে এখনও অনেক কিছু চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন আয়োজক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও বাঙালীর সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামের পুরোধা সন্জীদা খাতুন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘এবার একটু দেরি করে শুরু করেছিলাম আমরা। এখনও কিছু বিষয় চূড়ান্ত করা যায়নি। তবে দুই এক দিনের মধ্যেই সব ঠিক করা হবে।’ প্রতি বছরই কোন একটি প্রতিপাদ্য সামনে রেখে বর্ষবরন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবার কোন বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার বিশ্বায়নের প্রভাব মেনে নিয়েই শেকড়ে ফেরার আহ্বান জানানো হবে অনুষ্ঠান থেকে। এ কথাটিকেই মূল প্রতিপাদ্য করা হতে পারে বলে জানান তিনি।
×