ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনের বাহিনী প্রধানসহ ২৭ দস্যুর আত্মসমর্পণ

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২ এপ্রিল ২০১৮

সুন্দরবনের  বাহিনী প্রধানসহ  ২৭ দস্যুর আত্মসমর্পণ

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য সুন্দরবনের তিনটি দস্যু বাহিনীর প্রধানসহ ২৭ জন বনদস্যু ২৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল গুলিসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন। রবিবার বিকেলে বাগেরহাট শহরের স্বাধীনতা উদ্যানে ‘সুন্দরবনের দস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রধান অতিথি ছিলেন। খুলনাস্থ র‌্যাব ৬ এর কমান্ডিং অফিসার খন্দকার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে অতিথিদের মধ্যে ছিলেন, বাগেরহাট-৪ আসনের এমপি ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-৩ আসনের এমপি তালুকদার আব্দুল খালেক, বাগেরহাট-২ আসনের এমপি মীর শওকাত আলী বাদশা, সংরক্ষিত মহিলা এমপি হ্যাপি বড়াল, র‌্যাবের মহা-পরিচালক বেনজীর আহমেদ, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিঞা, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় প্রমুখ। ‘ডন বাহিনী’, ‘ছোট সুমন বাহিনী’ ও ‘ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনীর’ সক্রিয় এ সদস্যরা ১৩টি বিদেশী একনালা বন্দুক, ৩টি বিদেশী দোনালা বন্দুক, ৪টি ২২ বোর বিদেশী রাইফেল, ৭টি পাইপগান এবং ১টি বিদেশী ওয়ানশুটারগানসহ সর্বমোট ২৮টি দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র এবং এক হাজার ৮১ রাউন্ড বিভিন্ন প্রকার গুলিসহ আত্মসমর্পন করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আমলে সুন্দরবনের দস্যুদের অত্যাচার এতই বেপরোয় হয়ে ছিল যে, পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষও রাতে ঘুমাতে পারতেন না। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর দৃশ্যপট পাল্টাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ২০ বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে। যারা আত্মসমর্পণ করছে তাদের সকল প্রকার আইনী সহায়তার পাশাপাশি পূনর্বাসন করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে সুন্দরবন দস্যু মুক্ত করা হবে। মাছ ব্যবসার নামে খুলনা কেন্দ্রিক কতিপয় ব্যক্তি বনদস্যুদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা দিয়ে থাকেন বলে সুস্পষ্ট তথ্য রয়েছে। ওই সকল গডফাদারদেরও আটক করার প্রক্রিয়া চলছে। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশের ভূখন্ডে কোন জঙ্গী- কোন বনদস্যু কোন জলদস্যুর ঠাঁই হবে না- তাদের সমূলে উপড়ে ফেলা হবে। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে হুসিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করবেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিব। এবারই প্রথম এ কাজে র‌্যাব নিয়োজিত থাকবে। বনসদ্যুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা সুন্দরবনে কাউকে দস্যুতা করতে দেব না। শুধু সুন্দরবনই নয় গোটা বাংলাদেশের কোথাও কোন দস্যুতা করতে দেয়া হবে না। এখনও যারা সুন্দরবনে দস্যুতা তথা বিপথগামী রয়েছেন তাদের দস্যুতা ছেড়ে আসার আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, মাদক আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের তালিকা আমাদের হাতে রয়েছে। সমাজে যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তারা যদি এই কাজ বন্ধ না করেন তবে তাদের পরিণাম কি তা অচিরেই দেখতে পাবেন। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ২০টি বাহিনীর ২১৭ জন সদস্য এ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেছে। ৫৪৫ জন বনদস্যুকে গ্রেফতার করা হয়েছে এছাড়া ১৩০ জন বনদস্যু বিভিন্ন সময়ে বন্দুকযুদ্ধে বা গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে। মোটকথা সুন্দরবন থেকে ৮৯২ জন বনদস্যুকে আমরা তুলে আনতে সক্ষম হয়েছি। এই কৃতিত্ব শুধু আমাদের নয়, এই কৃতিত্ব এই এলাকার জেলে বাওয়ালীদেরও। সুন্দরবনে বনদস্যুদের সমস্যা ৪০ বছরের। আমরা চাই খুব শীঘ্রই সুন্দরবনকে সম্পূর্ণভাবে শত্রুমুক্ত করতে।
×