ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রহস্যজনক নিখোঁজের তালিকায় যুক্ত হলো আরেকজন

রংপুরের রথীশ অপহরণে জঙ্গী কানেকশন!

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২ এপ্রিল ২০১৮

রংপুরের রথীশ অপহরণে জঙ্গী কানেকশন!

শংকর কুমার দে ॥ এবার রহস্যজনকভাবে নিখোঁজের তালিকায় যুক্ত হয়েছে যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষী ও রংপুরে জাপানী নাগরিক হোসি কোনিও এবং মাজারের খাদেম হত্যা মামলার সরকারী আইনজীবী (পিপি) রথীশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে বাবু সোনার নাম। অপহরণ, গুম ও গুপ্তহত্যার পাশাপাশি রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনাগুলো আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। সারাদেশে গত বছর নিখোঁজ হয়েছে ৯১ জন। এর মধ্যে ২৬ জন ফিরে এসেছেন। এখনও ৬৫ জন নিখোঁজ। এদিকে রংপুরের আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সন্দেহের তীর জামায়াত-শিবিরের যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী ও জঙ্গী সংগঠনের দিকে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিককে প্রলোভনের টোপে ফেলে অপহরণ করে নিয়ে গেছে তার পূর্ব পরিচিত ব্যক্তিরা। এই অপহরণের ঘটনায় যুদ্ধাপরাধীর মামলার সাক্ষী হওয়া, জঙ্গীদের হাতে খুন হওয়া জাপানী নাগরিক ও মাজারের খাদেম হত্যার পিপি হিসেবে ভূমিকা রাখা ও তার ব্যক্তিগত কারণে শত্রুতা উদ্ধারের ঘটনাসহ নানা দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে যেভাবেই হোক জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়াই হচ্ছে এখন উদ্দেশ্য। বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছে এমন সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর ২০১৭ সালে সারাদেশে ৯১ জন নিখোঁজ হওয়ার পর ২৬ জন ফিরে এলেও ৬৫ জন এখনও ফিরে আসেনি। এই সংস্থাটির প্রতিবেদনে নিখোঁজের বিষয়ে অপহরণ, গুম, গুপ্তহত্যার পাশাপাশি নিখোঁজের ঘটনাগুলোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ের দিকেই সন্দেহের তীর। তবে রংপুরের আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটির বিষয়ে সন্দেহের তীর যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে নয় এটা স্পষ্ট। শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে পাজামা-পাঞ্জাবি এক ব্যক্তির সঙ্গে লাল রঙের মোটরসাইকেলে করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এরপর থেকে রবিবার সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় তিন দিনেও তার কোন সন্ধান মিলেনি। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের নিখোঁজের সঙ্গে কোন জঙ্গী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা জামায়াত-শিবির চক্র কিংবা জমি বিক্রির সঙ্গে যারা জড়িত তারাও টাকার লোভে প্রলোভনে ফেলে বাবু সোনাকে কৌশলে অপহরণ করা হয়েছে কিনা সেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের রংপুর বিভাগের ট্রাস্টি এ্যাডভোকেট ও তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। এ কারণে ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকার বিষয়টিও তদন্তের সামনে আনা হয়েছে। নিখোঁজের পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তার নিখোঁজের ঘটনায় পুলিশ বেশ কিছু সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জনিকে গ্রেফতার ও পরবর্তীতে সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে তার নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এই পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে জাপানী নাগরিক হোসি কোনিও হত্যা ও মাজারের খাদেম হত্যা মামলায় ৮ জেএমবি সদস্যের মৃত্যুদ-াদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়াও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলামের মামলার সাক্ষী। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এটিএম আজাহারুল ইসলামের মৃত্যুদ-াদেশ প্রদান করে। বর্তমানে মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। এসব ঘটনায় কোন জঙ্গী সংগঠন অথবা জামায়াত-শিবিরের নেতা বা যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর কর্মীরা তাকে অপহরণ করতে পারে। নিখোঁজ করার পেছনে বাবু সোনার বাসায় থাকা নগদ ৪০ লাখ টাকার কোন যোগসূত্র আছে কিনা তাও গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোন জঙ্গী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা জামায়াত-শিবির চক্র বা জমি বিক্রির সঙ্গে যারা জড়িত তারাও টাকার লোভে প্রলোভনে ফেলে বাবু সোনাকে কৌশলে অপহরণ করতে পারে এমন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অপহরণ, গুম, গুপ্তহত্যা, নিখোঁজের বিষয়ে উদ্ধার ও রহস্য উদ্ঘাটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুবই তৎপর। কারণ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চে সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোকলেসুর রহমান জনির নিখোঁজের বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পক্ষে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক কাউকে গ্রেফতার করা হলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কর্তব্য যথাসময়ে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা। আর নিখোঁজের এ কাজটি কোন অপরাধী চক্রের হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব আরও বেশি। যাতে ভিকটিম ও অপরাধী চক্র উভয়কে খুঁজে বের করে আদালতে উপস্থাপন করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। মানুষ নিখোঁজের অভিযোগ অস্বীকার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার দায় এড়াতে পারে না। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশী-বিদেশী অশুভ মহল নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে। দেশে অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ফায়দা লোটার চেষ্টার অংশ হিসেবে পর্দার অন্তরালের কুট কৌশলের চাল দেয়া হবে। এসব ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অংশ হিসেবে রংপুরের আইনজীবীকে কৌশলে অপহরণ করে নিখোঁজ করা হয়েছে কিনা সেই বিষয়টিও তদন্তের মধ্যে আনা হয়েছে।
×