স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালিবাগে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হসপিটাল লিমিটেডে চিকিৎসাধীন মাদারীপুরের তের বছরের কিশোর আব্বাস শেখ ‘উইল্ড সিনড্রোম’ রোগে আক্রান্ত। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে আব্বাস শেখসহ মাত্র তিনজন রোগী পাওয়া গেছে। রবিবার বেলা এগারোটায় ডাঃ সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সম্মেলন কক্ষে আব্বাস শেখের চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড সভা শেষে এ রোগের নাম প্রকাশ করা হয়।
এমএ আজিজের সঞ্চালনায় মেডিক্যাল বোর্ড সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ সাজ্জাদ খোন্দকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ রুহুল আমিন, ডাঃ সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হসপিটালের এনেস্থেসিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মেহতাব আল ওয়াদুদ প্রমুখ।
বোর্ড সভা শেষে সাংবাদিকদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ সাজ্জাদ খোন্দকার বলেন, ‘আব্বাস শেখ একটি বিরল রোগে আক্রান্ত। আব্বাস শেখের রোগের বিষয়ে ডাঃ সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হসপিটাল দীর্ঘ দেড় মাস বিভিন্ন পরীক্ষা সুন্দরভাবে করেছে। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে বোর্ড এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে আব্বাস শেখ ‘উইল্ড সিন্ড্রোম রোগে আক্রান্ত। বিশ্বে এ ধরনের কেস খুব কম। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে আব্বাস শেখসহ মাত্র তিনজন রোগী পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আব্বাস শেখের চিকিৎসায় আমরা এখন দ্রুত এগুতো পারব। সিঙ্গাপুরের সাতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির ওপর এ সপ্তাহে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেবে। আমরা আগামীকাল (সোমবার) সেই টিমের প্রধান ডাঃ সিজেকে উইল্ড সিন্ড্রোমে আক্রান্ত আব্বাস শেখকে দেখাব। আশা করি আব্বাস শেখের চিকিৎসা আরও অনেকদূর এগিয়ে নেয়া হবে।
জানা গেছে, আব্বাস জন্ম নেয়ার একমাস পর ওর ডান পা একটু একটু ফুলতে শুরু করে। একটা পা একটু মোটা আর একটা পা একটু চিকন। ৩ বছর বয়সে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) তার পরিবার চিকিৎসার জন্য নেয়। তখন চিকিৎসকরা ৬ মাস পরপর আনতে বলেন। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ‘ছোট মানুষ এখন ওর অপারেশন করা যাবে না। বড় হোক তখন দেখব।’ আস্তে আস্তে আব্বাসের ডান পা ফুলে বিশালাকৃতির হয়ে গেছে। এতে করে সে চলাফেরা করতে পারছে না, এমনকি তার স্কুলে যাওয়াও বন্ধ। তার পা দিয়ে এক ধরনের আঠালো পদার্থ বের হওয়া শুরু। এছাড়াও তার সারা শরীরে উঠেছে আঁচিল। সব মিলে করুণ যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছিল এ কিশোর।
উল্লেখ্য, ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি বিরল রোগে আক্রান্ত মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আব্বাস শেখকে নিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিষ্ঠানটির চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ এম এ আজিজের নজরে আসে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডাঃ রুবাইত ইসলাম মন্টির পরামর্শে আব্বাসকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এ্যান্ড হসপিটালের পক্ষ থেকে চিকিৎসার দায়িত্ব ভার নেন। ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে আব্বাস শেখ ডাঃ সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজে এ্যান্ড হসপিটালের সার্জারি বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল (অব) অধ্যাপক ডাঃ এম এ বাকির অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: