ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইমপ্যাক্ট হাসপাতালের ডাঃ শাহীনসহ ১০ জনকে জবাব দিতে বলেছে হাইকোর্ট

চুয়াডাঙ্গার ‘চোখ হারানো’ ২০ জনকে কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২ এপ্রিল ২০১৮

চুয়াডাঙ্গার ‘চোখ হারানো’ ২০ জনকে কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চুয়াডাঙ্গা শহরের ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল হাসপাতালে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিয়ে ‘চোখ হারানো’ ২০ জনের প্রত্যেককে এক কোটি টাকা করে কেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই চিকিৎসা কেন্দ্রে অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে কার্যকর, উপযুক্ত ও নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে দায় সারাভাবে অস্ত্রোপচার করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং অস্ত্রোপাচারকারী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। রবিবার হাইকোর্টের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। রুলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন, ডিসি ও এসপি, ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ডাঃ মোহাম্মদ শাহীনসহ সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। রিটকারী অমিত আদালতে নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান। আদেশের পর এ্যাডভোকেট অমিত দাসগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, ‘রিট আবেদনে যেভাবে রুল চাওয়া হয়েছিল, আদালত সেভাবেই দিয়েছেন। আদালতের গ্রীষ্মকালীন অবকাশের পর ৬ মে বিষয়টি পরবর্তী শুনানির জন্য আসবে।’ গত ২৯ মার্চ একটি দৈনিকে ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রীমকোর্টের আইজীবী অমিত দাসগুপ্ত এই রিট আবেদন করেন। গত ৪ মার্চ থেকে চুয়াডাঙ্গার ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে তিনদিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয় দিনে ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি (ফ্যাকো) কাটা হয়। ওই অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরদিন বাসায় ফেরার পর ওই রোগীদের চোখে সংক্রমণ দেখা দেয়। চোখে জ্বালা-পোড়া নিয়ে তারা যোগাযোগ করেন ইমপ্যাক্ট হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব না দিলেও পরে কয়েকজন রোগীকে স্থানীয় এক চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ওই চক্ষু বিশেষজ্ঞ তাদের জরুরী ভিত্তিতে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। এদের মধ্যে চারজন রোগী নিজেদের উদ্যোগে স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইমপ্যাক্ট থেকে ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু ততদিনে দেরি হয়ে যাওয়ায় ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়। আরেক নারীর অপারেশন করা বাম চোখের অবস্থাও ভাল নয়। ঢাকায় দ্বিতীয় দফায় অপারেশন করলেও দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসেনি তার। এই ২০ রোগীর সবাই দরিদ্র। কেউ স্বজনের কাছে ধারদেনা করে, কেউ বাড়ির ছাগল-মুরগি বিক্রি করে, কেউ এনজিও থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ইমপ্যাক্ট হাসপাতালে গিয়েছিলেন চোখ সারাতে। সেখানে অপারেশনের পরই তাদের চোখে ইনফেকশন হয়। পরে অপারেশন হওয়া চোখ তুলে ফেলতে হয়। তবে ঢাকার হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা ব্যয় দিয়েই নিজেদের দায় সেরেছে ইমপ্যাক্ট। যদিও সংশ্লিষ্টদের বিচার ও চিরদিনের জন্য অন্ধত্বের ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। তদন্ত কমিটি গঠন ॥ চুয়াডাঙ্গায় একটি বেসরকারী আই ক্যাম্পে বিশ জনের চক্ষুহানির ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে রবিবার পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১২ এপ্রিলের মধ্যে ঘটনার তদন্ত করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। রবিবার পাঠানো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটির অপর সদস্যরা হলেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একজন পরিচালক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের একজন সহযোগী অধ্যাপক এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন উপ-পরিচালক (হাসপাতাল কমিটির) সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করবেন। উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গার একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের চক্ষু শিবিরে অস্ত্রোপচারের পর সংক্রমণে ২০ জনের চোখ হারানোর অভিযোগ উঠে।
×