ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ ব্যাংক ঝুঁকি তহবিল কমাচ্ছে ১ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২ এপ্রিল ২০১৮

বাংলাদেশ ব্যাংক ঝুঁকি তহবিল কমাচ্ছে ১ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বা সিআরআর) এক শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে আরও ১০ হাজার কোটি টাকার মতো চলে আসবে। যার মধ্য দিয়ে তারল্য সঙ্কট কমে আসবে। পাশাপাশি ঋণের সুদের হারও সিঙ্গেল ডিজিটে চলে আসবে। তবে এতে মূল্যস্ফীতি কোনভাবেই বাড়বে না বলে জানান অর্থমন্ত্রী। রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক মালিকদের সংগঠন ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) যৌথ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। ব্যাংক উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে এ বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, ডেপুটি গবর্নর এস এম মুনিরুজ্জামান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরী, বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বেসরকারী খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা ও আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ এইচ বি এম ইকবাল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান, ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিস এ খান, আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি শাহ এ সারওয়ারসহ আর্থিক খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সুদের হার কমানোর চেষ্টা করছি আমরা। এরই অংশ হিসেবে বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে সরকারী প্রতিষ্ঠানের আমানত ৫০ শতাংশ রাখা হবে। ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আর বৈঠকে বিএবি দাবি করেছিল সিআরআর হার ৩ শতাংশ কমাতে। কিন্তু আমরা সব কিছু বিবেচনা করে, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে এবং বিভিন্ন মহল থেকে সবার পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর তা হলো সিআরআর হার সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ কমিয়ে আনা হবে। সে অনুযায়ী এখন থেকে সিআরআর হার সাড়ে ৫ শতাংশ সংরক্ষণ করা যাবে। অর্থাৎ এই এক শতাংশ পরিমাণ টাকা ব্যাংকগুলো ব্যবহার করতে পারবে। এর ফলে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যাংকগুলোর হাতে চলে আসবে। এতে তারল্য সঙ্কট কমে গেলে সুদের হারও কমে আসবে। যেটা কার্যকর থাকবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে ডিসেম্বরের আগে জুন মাসে তার প্রভাব পর্যালোচনা করা হবে। এ সময়ে যদি আরও কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করতে হয় তা করা হবে। এত পরিমাণ টাকা বেসরকারী ব্যাংকগুলোর কাছে দেয়া হলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী সে আশঙ্কা উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, নো ইমপসিবল, মুদ্রাস্ফীতি হবেই না। দেশে এমন কিছু হয়নি যে মুদ্রাস্ফীতি হবে। বিএবি সভাপতি ও এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, আপনারা জানেন ব্যাংকগুলো এখন তারল্য সঙ্কটে ভুগছে। এ সঙ্কটর নিরসনে নানা পদক্ষেপ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সিআরআর থেকে কিছু টাকা কমানো যায় কিনা। সে অনুযায়ী আমরা দাবি করেছিলাম ৩ শতাংশ কমানোর। কিন্তু কমানো হয়েছে ১ শতাংশ। এই এক শতাংশ কমানোর ফলে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার মতো তহবিল পাওয়া যাবে। যা ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট দূর করতে সহায়ক হবে। এছাড়া বেসরকারী ব্যাংকগুলোর এ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে রেখে গত ১০ বছরে কোন লাভ হয়নি। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোতে তারল্য সঙ্কটের আরও একটি বড় কারণ হচ্ছে দেশে বিনিয়োগের হার বেড়ে গেছে। বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রয়োজনে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আমদানি করতে চাইলে তো আমরা না বলতে পারি না। তাই বিনিয়োগ হার বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, দেশের একটি ব্যাংক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমানতকারীদের অনেকে টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। সে সঙ্কট আমরা কাটাতে চেষ্টা করেছি। তারপরও সঙ্কট রয়েই গেছে। এ সময় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আগামী এক মাসের মধ্যেই সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, অতি দ্রুত সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসবে। আগামী এক মাসের মধ্যে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অর্থমন্ত্রী বাস্তবসম্মত কথা বলেননি। সুদের হার কমাতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। এর আগে গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশানে ব্যাংকিং খাতের চলমান সঙ্কট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে জরুরী বৈঠকে বসে বিএবি। সেখানে ব্যাংক ঋণের সুদ হার আগামী ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে আবারও এক অঙ্কে (সিঙ্গেল ডিজিট) নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয় বিএবি। এজন্য ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বা সিআরআর) ৩ শতাংশ কমানো এবং ব্যাংকে সরকারী আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারী ব্যাংকে রাখার দাবি জানায় এ্যাসোসিয়েশন। প্রসঙ্গত, বেসরকারী ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে ঝুঁকি মোকাবেলায় মোট তহবিলের সাড়ে ৬ শতাংশ সিআরআর হিসেবে জমা রাখে। নতুন এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ব্যাংকগুলো ওই সিআরআর থেকে এক শতাংশ ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়া সরকারী ব্যাংকগুলোতে এতদিন সরকারী প্রতিষ্ঠানের আমানত ৭৫ শতাংশ রাখা হতো। বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে এ আমানত রাখা হত ২৫ শতাংশ। নতুন এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বেসরকারী ব্যাংকে ৫০ শতাংশ আমানত রাখা হলে সরকারী ব্যাংকগুলোতে সরকারী প্রতিষ্ঠানের আমানত ২৫ শতাংশ কমে যাবে।
×