ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নুরুল মতিন মেমোরিয়াল লেকচারে ড. খলীকুজ্জমান

নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণেই হলমার্ক বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটেছে

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২ এপ্রিল ২০১৮

 নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণেই হলমার্ক বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, বাংলাদেশে সর্বত্র নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটছে। আজ নয়, দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের নৈতিকতার অবক্ষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিজের স্বার্থে আইন-নিয়মনীতি এবং বিধিমালা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিচালনা পরিষদ এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের একটি অংশের নৈতিকতার বড় স্খলন হয়েছে। এ কারণে হলমার্ক এবং বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা ঘটেছে। ব্যাংকের স্বার্থের পরিবর্তে নিজ স্বার্থে এসব লোক কাজ করায় ব্যাংক এবং অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। শনিবার রাতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটরিয়ামে ১৭তম নুরুল মতিন মেমোরিয়াল লেকচার ‘এথিকস ইন ব্যাংকিং’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের গবর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতার চর্চার জন্য এ ধরনের মেমোরিয়াল লেকচার কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক। মূল প্রবন্ধে খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, নৈতিকতার উন্নয়নে এবং ব্যাংকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি আরও কঠোরতর করার প্রয়োজন রয়েছে। কোন ঘটনা ঘটলে তা নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। বড় বড় যেসব ঘটনা ঘটেছে, এগুলো বিচারের আওতায় আনতে হবে। এসব ঘটনা প্রশ্রয় দিলে ব্যাংকিং খাতে আরও নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটবে। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথভাবে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। ২০০৯ সালে একুশে পদক পাওয়া এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নৈতিকতার বিষয়ে আলোচনা ও প্রশিক্ষণ দরকার। ওপরের দিকে বোর্ডের সদস্যদের বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে বছরে একবার হলেও আলোচনায় বসানো যেতে পারে। ব্যাংকের নৈতিকতা চর্চা এবং গলদ নিয়ে এ রকম অনুষ্ঠানেও বিশদভাবে বহুমুখী আলোচনা হতে পারে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সচেতনতা বাড়বে। তিনি বলেন, ব্যাংকে নৈতিকতার চর্চা বাড়াতে আরও একটি কাজ করা যেতে পারে। সব কর্মকর্তাকে বিশেষ করে মধ্য থেকে নিচের দিকের যারা আছেন, তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে। প্রশিক্ষণের মডিউল প্রযুক্তিভিত্তিক হলে কার্যকর বেশি হবে। এখানে নৈতিকতা কী, দেশ-বিদেশের উদাহরণ ভিডিওর মাধ্যমে সবাইকে অবগত করানো দরকার। এ মডিউলটা সময়ে সময়ে পরিবর্তন হবে। এতে সৎপথে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার আগ্রহ বাড়বে। তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে প্রবেশনারি কর্মকর্তাদের চাকরি জীবনের শুরু থেকে নৈতিকতার গুণাবলী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এটি করতে পারলে এসব নবীন কর্মকর্তা চাকরি জীবনে অনৈতিক কাজ করার অভ্যাস থেকে মুক্ত হওয়ার প্রয়াস নিতে পারবে। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এ ধরনের নৈতিকতার প্রচারণার প্রচলন শুরু করেছে। এ কারণে পিকেএসএফের অংশীদারদের মধ্যে মাদকের ব্যবহার, বাল্যবিবাহ এবং মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের সহযোগিতায় সবসময়ই ঋণখেলাপী, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর। ব্যাংকিং খাত যাতে আইন-কানুনের মধ্যে থেকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিচালিত হয়, তার সার্বক্ষণিক তদারকি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি আরও বলেন, অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারের সব সংস্থা মিলে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রভাবশালী, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে গ্রাহকদের কাছে ব্যাংকিং খাতের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পাবে। ফজলে কবির বলেন, অনৈতিক চর্চাগুলো দীর্ঘদিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আজকের মেমোরিয়াল লেকচারের মাধ্যমে তরুণ ব্যাংকাররা সততা এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবেন এবং ব্যাংকিং খাতে আরও পেশদারিত্বের দিকে অগ্রসর হবেন।
×