ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জলি রহমান

বাংলাদেশ রফতানি করছে প্রযুক্তিপণ্য

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১ এপ্রিল ২০১৮

বাংলাদেশ রফতানি করছে প্রযুক্তিপণ্য

বাংলাদেশের উৎপাদিত প্রযুক্তিপণ্য বিশ্ববাজারে রফতানি হচ্ছে- এটা এক সময়ের স্বপ্ন হলেও আজ সত্যি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়শীল দেশের পথে হাঁটতে শুরু করা বাংলাদেশের জন্য এ যেন এক মহা সুখবর। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করল ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ওয়ালটন ল্যাপটপ। শুরুতেই এই ল্যাপটপ রফতানি হচ্ছে নাইজেরিয়ায়। পর্যায়ক্রমে যাবে নেপাল, ভুটান এবং পূর্ব তিমুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। উচ্চমানের পণ্য, সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা, সাশ্রয়ী মূল্য এবং গ্রাহকের আস্থার প্রতিফলন পাচ্ছে বাংলাদেশের শীর্ষ ব্র্যান্ড ওয়ালটন। দেশের গ-ি পেরিয়ে ওয়ালটন এখন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড। দেশ-বিদেশে ওয়ালটন অর্জন করেছে বেশকিছু সম্মানজনক এ্যাওয়ার্ড। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়ালটন ট্রেডিং ব্যবসার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে আজ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ করদাতাদের মধ্যে অন্যতম। সম্প্রতি নাইজেরিয়ায় ল্যাপটপ রফতানি কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ইনগরেশন সেরিমনি অব ওয়ালটন ল্যাপটপ এক্সপোর্টেশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নাইজেরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওয়ালটনের আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পন্ন হয়। ওয়ালটনকে অভিনন্দন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, সরকারের নীতি-সহায়তা কাজে লাগিয়ে ওয়ালটন এগিয়ে যাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে তারা প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন করে দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রফতানিকারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কম্প্রেসার এবং ল্যাপটপের মতো মানসম্পন্ন নতুন প্রযুক্তির বৃহৎ পণ্য উৎপাদনে তারা সফল হয়েছে। ওয়ালটনের উত্তরোত্তর সাফল্যও কামনা করেন মন্ত্রী। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেছেন, ওয়ালটন ল্যাপটপ রফতানির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি স্বপ্ন পূরণ হলো। তিনি চেয়েছিলেন দেশেই ল্যাপটপ, কম্পিউটারের মতো প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন হবে এবং মেড ইন বাংলাদেশ লেখা নিয়ে তা রফতানি হবে। ওয়ালটন আজ তা সফল করল। ওয়ালটন প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে যে সাফল্য দেখিয়েছে তা অন্যান্য দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় বলে মন্তব্য করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজে চালু হয়েছে দেশের প্রথম কম্পিউটার উৎপাদন কারখানা। যেখানে উৎপাদিত হচ্ছে উচ্চমানসম্পন্ন ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ও মনিটরসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য। এই কারখানার মাসিক উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ হাজার ইউনিট ল্যাপটপ, ৩০ হাজার ইউনিট ডেস্কটপ এবং আরো ৩০ হাজার ইউনিট মনিটর। এর অর্থ বর্তমানে দেশের ল্যাপটপের চাহিদার পুরোটাই পূরণে সক্ষম ওয়ালটন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ জানায়, ইন্টেল- মাইক্রোসফট এবং বিজয় বাংলার সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ল্যাপটপ কম্পিউটার উৎপাদন করছে ওয়ালটন। যার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রফতানি আদেশ আসছে। প্রথম রফতানি আদেশ এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ নাইজেরিয়া থেকে। শুরুতে ৫০০ ইউনিট ল্যাপটপ নাইজেরিয়া যাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ নেপাল থেকেও ল্যাপটপ রফতানির আদেশ পেয়েছে ওয়ালটন। ভুটান এবং পূর্ব তিমুরেও ওয়ালটন ল্যাপটপ রফতানির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে তীব্র তাপদাহের কারণে এয়ারকন্ডিশনার বা এসির চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যায়। সেই রকম পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবার আগে ভাগেই প্রস্তুতি সেরে রাখল বাংলাদেশী ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন। গুণগত মান বৃদ্ধির পাশাপাশি নিজস্ব কারখানায় বাড়ানো হয়েছে উৎপাদন। বেড়েছে মজুদ। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসেছে স্মার্ট, আয়নাইজার ও ব্যাপক বিদ্যুত সাশ্রয়ী ইন্টেলিজেন্ট ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে হচ্ছে রফতানিও। দেশের বাজারে প্রতিবছর তিন লাখের মতো এসি বিক্রি হয়। গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে অত্যন্ত মেধাবী, উচ্চ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ প্রকৌশলীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ এসি গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ। তারা নিয়মিত গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বের লেটেস্ট প্রযুক্তি ও মেশিনারিজের সমন্বয়ে তৈরি করছে সঠিক বিটিইউ (ব্রিটিশ থারমাল ইউনিট) সম্পন্ন এসি। গ্রাহকদের চাহিদা মোতাবেক ওয়ালটন বাজারে আনছে সর্বাধুনিক ফিচার সমৃদ্ধ এসি। ওয়ালটনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নতুন বছরের শুরুতে টেলিভিশন গ্রাহকদের চমক দিতে ওয়ালটন ৪৩ ইঞ্চির স্পেকট্রা কিউ টিভি নিয়ে এসেছে তারা। এরই মধ্যে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে স্পেকট্রা কিউ টিভি। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই টিভির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ হাজার ৯০০ টাকা। ওয়ালটনের এডিশনাল ডিরেক্টর ফরহাদ হোসেন মামুন জানান, তাদের টেলিভিশন গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রকৌশলীরা সম্প্রতি উদ্ভাবন করেছে মাল্টিটাচ সুবিধাসংবলিত বড়পর্দার কম্পো টিভি। হাতের স্পর্শেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় টিভির সব ফাংশন। ক্লাসে বা সেমিনারে লেখার জন্য ডিজিটাল বোর্ড হিসেবে অথবা অফিসে বা বাসায় প্রেজেন্টেশনের স্ক্রিন হিসেবেও এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। আরো আছে ফেসবুক, ভাইবারসহ বিভিন্ন সোশ্যাল, কমিউনিকেশন, বিজনেস অথবা এন্টারটেইনমেন্ট এ্যাপস চালানোর সুবিধা। আছে ভিডিও চ্যাটিংসহ গেমিং সুবিধা। দেশের কম্পিউটার বাজার অনেক বড় হয়েছে। দেশ পরিবর্তন হয়েছে। একটা সময় দেশে প্রযুক্তি পণ্যে আসতে সময় লাগত, এখন আর সময় লাগে না। মানুষ দ্রুত প্রযুক্তি পণ্যে হাতে পাচ্ছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলেয়ে সর্বশেষ প্রযুক্তি পণ্যে এখন বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে। ওয়ালটন সূত্র মতে, প্রতিবছরই দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে তারা। গত ১৯ নবেম্বর বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় ব্র্যান্ড গবেষণা প্রতিষ্ঠন কান্তার মিলওয়ার্ড ব্রাউন দ্য ডেইলি স্টারের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম আয়োজিত ’বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়াড-২০১৬’ তে রেফ্রিজারেটর ক্যাটাগরিতে সেরা ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি পায় ওয়ালটন। এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো এই এ্যাওয়ার্ড পেল দেশীয় ব্র্যান্ডটি। এর আগে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালেও সেরা রেফ্রিজারেটর ব্র্যান্ডের এ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ওয়ালটন। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত হোম ও কিচেন এ্যাপ্লায়েন্সেস সাশ্রয়ী মূল্যে ক্রেতাদের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি দেশে সমজাতীয় আমদানি পণ্যের দৌরাত্ম্য হ্রাস করে অর্থনীতিতে রাখছে বিশেষ অবদান। যেসব পণ্য এক সময় বাংলাদেশ আমদানি করত, ওয়ালটন সেসব পণ্য এখন রফতানি করছে। উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য খাতের দ্রুত বিকাশের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আর এ সকল কাজের স্বীকৃতিও পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সব মিলিয়ে প্রযুক্তিপণ্যের জগতে ‘সময় এখন বাংলাদেশের’।
×