ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ‘সালাম পার্টি’

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১ এপ্রিল ২০১৮

এবার ‘সালাম পার্টি’

ঢাকায় ফাঁকা রাস্তায় যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীদের ব্যাগ, মোবাইল, মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নানা কৌশলে কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। পুলিশের ভাষায় এই চক্রের পরিচয় ‘টানাপার্টি’, ছিনতাইকারী, শরবত পার্টি, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টিসহ নানা নামে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অপরাধীরা পাল্টায় তাদের কৌশল। এবার তালিকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সালাম পার্টি। চলতি পথে হঠাৎ ভদ্রবেশী একজন আপনার সামনে এসে সালাম দেবে। পর পরই আরও চার-পাঁচজন এসে ভিড় করবে সেখানে। এরপর আকস্মিকভাবে তারা আপনাকে ঘিরে ধাক্কাধাক্কি-মারামারি শুরু করে দেবে। আপনি কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হয়ে আসবে। চলে যাবে সব উটকো লোকজন। কিন্তু তখন পকেট হাতড়ে দেখবেন, সঙ্গে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন কিছুই নেই। এমন অভিনব কায়দায় ছিনতাইয়ে নেমেছে একদল দুর্বৃত্ত। পুলিশ যাদের নাম দিয়েছে ‘সালাম পার্টি’। সম্প্রতি রাজধানীর পল্টন থেকে ‘সালাম পার্টি’র একটি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তাদের দস্যুতার নানা কৌশল সম্পর্কে। এরা পোশাক-পরিচ্ছদে খুব স্মার্ট। কথাবার্তাও খুব সুন্দর। তাই তারা সালাম দিলে মুহূর্তের জন্য হলেও মানুষ থমকে দাঁড়ায়। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েই সর্বস্ব লুটে নেয় এ চক্রের সদস্যরা। জানা গেছে, সালাম পার্টির আরও কিছু কৌশল সম্পর্কে। পার্টির সদস্যরা দুই বা তিন ঘণ্টার জন্য রিকশা ভাড়া করে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে থাকে। তাদের একজন ব্যাংক বা এটিএম বুথের পাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখে। বোঝার চেষ্টা করে কে কত টাকা নিয়ে বের হচ্ছে। এরপর বেশি টাকা নিয়ে বের হওয়া একজনকে টার্গেট করে তার পিছু নেয়। এর মধ্যে মোবাইল ফোনে অপর সঙ্গীদের জানিয়ে দেয় অবস্থান। একপর্যায়ে রাস্তার সুবিধাজনক স্থানে ওই ব্যক্তির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তাদের দল। সুন্দর করে সালাম দিয়ে বলে, ‘ভাই বা আঙ্কেল কেমন আছেন?’ এর পরের পর্বটি সাধারণত দুভাবে ঘটে থাকে। কখনও সহযোগীরা এসে সালাম পার্টির দলনেতাকে সালাম দিয়ে তার পাশে দাঁড়ায়। দলনেতা এ সময় টার্গেট ব্যক্তিকে বলে, ‘এরা সবাই আমার লোক। সঙ্গে অস্ত্রপাতি আছে। ঝামেলা না করে যা আছে দ্রুত দিয়ে দেন।’ এভাবে কাজ না হলে শুরু হয় নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি। এ সুযোগে লোকটির পকেট থেকে টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নেয়। জানা গেছে, তারা এলাকা ভাগ করে নিয়ে ছিনতাই করে। এক এলাকার চক্র সাধারণত অন্য এলাকায় যায় না। প্রতিটি চক্রে চার-পাঁচজন করে থাকে। এক সময় তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে চলতো নানা প্রতারণা। বিভিন্ন জেলার ডিসি, ইউএনও ও সরকারের অন্য দফতরের কর্মকর্তাদের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে ‘কল স্পুফিং’-এর মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হতো মোটা অঙ্কের টাকা। ওই চক্রের বেশ কয়েকজনকে আটক করার পর এই কৌশল কমে এসেছে। ‘হ্যালো, স্যার আসসালামু আলাইকুম। বিকাশ কাস্টমার সার্ভিস থেকে অমুক বলছি। স্যার আপনার কি একটু কথা বলার সময় হবে? বিকাশ তার গ্রাহকের সেবা সুরক্ষিত ও শতভাগ নিশ্চিত করার জন্য সব গ্রাহকের এ্যাকাউন্ট হালনাগাদ করার কাজ শুরু করেছে। অনুগ্রহ করে আপনার এ্যাকাউন্ট যে এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) দিয়ে চালু করেছেন সেই আইডি নম্বর এবং সর্বশেষ লেনদেনের পরিমাণ ও সে ব্যাপারে আমাদের কিছু তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন।’ তারপর টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা। এমনকি মোবাইল কোম্পানির লটারি পেয়েছেন এখনই এত টাকা এই নাম্বারের রিচার্জ করুন এমন তথ্য দিয়েও টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটত এক সময়। এখন এসব কৌশল খুব একটা কাজে লাগাতে পারছে না প্রতারকরা। তাই তারা কৌশল বদলাচ্ছে। পথচারীদের টার্গেট করে নানারকম প্রতারণা চলে নগরে যা নতুন নয়। এসব প্রতারণা থেকে পথচারীদের বাঁচাতে প্রশাসনিক সহযোগিতা আরও জোরদার করা জরুরী। এই চক্রের মূল উৎপাটন করতে হবে। সবার আগে এই ধরনের অপরাধীদের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ছাড়া পাওয়ার পর তাদের গতিবিধি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের আওতায় থাকতে হবে, যাতে ফাঁকা পেয়ে আবার তারা এই পথে অন্য কেউ না আসে। পথচারীদেরও রাস্তাঘাটে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করা উচিত।
×