ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

শিলাবৃষ্টি বজ্রঝড়ে দুদিনে ১২ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ১ এপ্রিল ২০১৮

শিলাবৃষ্টি বজ্রঝড়ে দুদিনে ১২ জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে গত শনিবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বজ্রপাতে বগুড়ায় একজন, পাবনায় তিনজন, শেরপুরে একজন ও বরগুনার আমতলীতে একজন এবং ঝড়ে মাগুরায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর শুক্রবার ঝড়ে আহত এক যুবলীগ নেতা শনিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ নিয়ে গত দু’দিনে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে মোট ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবারও ঝড় ও বজ্রাঘাতে দশজনের বেশি মানুষ আহত হন। সবজিক্ষেত, তামাক, বোরো ও ভুট্টাক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝরে পড়েছে আম-লিচুর মুকুল। উপড়ে গেছে শত শত গাছপালা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন কালবৈশাখীর সময়। এটা ঘনঘন হবে। আগামী কয়েক মাসে কালবৈশাখী ঝড় আসার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। দেশে প্রতিবছর বজ্রাঘাতে গড়ে দু’শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বেড়েই চলেছে বজ্রপাত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। বজ্রপাতের পাশাপাশি শিলাবৃষ্টির মাত্রাও যেন বেড়েই চলেছে। একেক শিলার ওজন ৫শ’ গ্রাম থেকে প্রায় এক কেজি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ওজনের শিলার আঘাত পেলে মারাত্মক আঘাত পাওয়া এবং মৃত্যু হওয়া স্বাভাবিক। তাই বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির সময় আভাস পাওয়া গেলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, এপ্রিল মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ওই মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ওই মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২-৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি/তীব্র কালবৈশাখী/বজ্র-ঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩-৪ দিন হালকা/মাঝারি কালবৈশাখী /বজ্রঝড় হতে পারে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র ২-৩টি মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এভাবে মে মাসেও দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ওই মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ওই মাসে দেশের উত্তর, উত্তরপূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২-৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি/ তীব্র কালবৈশাখী/বজ্র-ঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩-৪ দিন হালকা/মাঝারি কালবৈশাখী /বজ্রঝড় হতে পারে। আর দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২-৩টি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র ২-৩টি মৃদু /মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। পাবনা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা থেকে জানান, মাঠে পেঁয়াজ পাহাড়া দিতে গিয়ে বজ্রপাতে ৩ কৃষকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের হাটখালি মাঠে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের বিক্রমাদিত্য গ্রামের মুক্তার শেখের ছেলে দুলাল হোসেন (৪০), আব্দুল আজিজ মোল্লার ছেলে আব্দুল আলিম (৩২) ও মোতাহার আলীর ছেলে লইম উদ্দিন (৫০)। শুক্রবার রাতে পেঁয়াজ পাহাড়া দিতে গিয়ে তিন কৃষক নিখোঁজ হন। শনিবার সকাল ১১টার দিকে অন্য কৃষকরা তাদের মরদেহ মাঠে পরে থাকতে দেখে সুজানগর থানা পুলিশকে খবর দেয়। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সুজানগর সার্কেল) মা. ফরহাদ হাসান জানান, শুক্রবার বিকেলে মানিকহাট ইউনিয়নের হাটখালি মৌজার নিজের জমিতে পেঁয়াজ তুলতে যান ওই তিন কৃষক। বিকেলে ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়ে তারা বাড়িতে ফিরে যান। পরে রাতে পুনরায় মাঠ থেকে তোলা পেঁয়াজ পাহাড়া দিতে গিয়ে নিখোঁজ হন। ফরহাদ হাসান আরও জানান, রাতে বাড়ি না ফেরায় স্বজনরা তাদের খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পায়নি। শনিবার সকালে বজ্রপাতে নিহত তিনজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে এমন খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই তিন কৃষকের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বগুড়া ॥ স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস থেকে জানান, শনিবার ভোরে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। ঝড়ের সময় শিলাবৃষ্টিও হয়। এতে বোরো আবাদসহ আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এদিন সকালে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় বজ্রপাতে মোজাফ্ফর হোসেন (৫০) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মাগুরা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, মাগুরা থেকে জানান, শুক্রবার রাতে এবং আজ শনিবার ভোরে মাগুরা সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে আকরাম হোসেন (৫০) নামে এক কৃষক নিহত এবং আরও ১০ জন আহত হয়েছে। আলিম, খোকন, লিমা, মনিরা, শাহাবুদ্দিন, আবু হুবাইরা, জেসমি, সুজন, খোকন, রাতিব নামে আহত ১০ জনকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকায় পাঠনো হয়েছে। নিহত আকরাম হোসেন মাগুরা সদর উপজেলার ডহরসিংড়া গ্রামের মদন মোল্লার ছেলে। শনিবার সকালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চাউল, টিন ও নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। সদর উপজেলার জগদল, মঘি, শক্রুজিৎপুর, বেরইলপলিতা, গোপালগ্রাম, কুচিয়ামোড়া ৬টি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যায় কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়। ঝড়ে মাঠের ফসল ও টিনের ঘরের ক্ষতি হয়েছে । বরগুনা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা থেকে জানান, শনিবার সকালে বজ্রপাতে বরগুনার তালতলী উপজেলার মরানিদ্রা গ্রামের সজল (২৩) নামের এক জেলে নিহত হয়েছে। উপজেলার মরানিদ্রা গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে সজল শনিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে মরানিদ্রা বাড়ি থেকে সকিনা ট্রলার ঘাটে যাচ্ছিল। পথে রাজা মাস্টার বাড়ির সামনে এলে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এ সময় তাকে বজ্রপাত আঘাত হানে। এতে সজলের শরীর জলসে যায় এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে। সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ ছালাম ফকির জানান, বাড়ি থেকে সকিনা যাওয়ার পথে রাজা মাস্টারের বাড়ির সামনে বজ্রপাতে সজল নিহত হয়। তালতলী থানার ওসি পুলক চন্দ্র রায় বলেন, সজল নামের এক জেলে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে। কালকিনি ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, কালকিনি, মাদারীপুর থেকে জানান, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে বিভিন্ন ফসলের চরম ক্ষতি হয়েছে। শনিবার ভোরে এক ঘণ্টার এ ঝড়ে উপজেলার গোপালপুর, আলীনগর ও এনায়েতনগরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বোর ধান, পানের বরজ ও আমের গুটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে গাছের ডাল-পালা পথেঘাটে ভেঙ্গে অনেক জায়গায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া ঝড়ে বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের এজিএমকম মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পল্লী বিদ্যুতের মাঠ কর্মীরা মাঠে কাজ করছেন। দ্রুত লাইন ঠিক হয়ে যাবে। সিলেট ॥ স্টাফ রিপোটার, সিলেট অফিস থেকে জানান, সিলেটের কাজির বাজার সেতুতে শুক্রবার ঝড়ের সময় দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দক্ষিণ সুরমা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেন মুসা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শনিবার সকাল পৌনে সাতটায় ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে ঝড় চলাকালীন সময়ে মুসা মোটরসাইকেলযোগে দক্ষিণ সুরমা থেকে কাজির বাজার সেতু হয়ে সিলেট নগরীতে আসছিলেন। হঠাৎ একটি চটপটির গাড়ি তার মোটরসাইকেলের ওপর এসে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে মোটরসেইকেল থেকে পড়ে তিনি গুরুতর আহত হন। প্রথমে ওসমানী হাসপাতালে, তারপর ওয়েসিস হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। শুক্রবার সকালে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার এ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। শেরপুর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর থেকে জানান, শেরপুরের নকলায় বজ্রপাতে আসমত আলী (৩০) নামে এক জেলে নিহত হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার কুর্শা বিলে ওই ঘটনা ঘটে। আসমত আলী নকলা পৌরসভার কলাপাড়া গ্রামের আবেদ আলীর পুত্র। সে তিন পুত্র সন্তানের জনক।
×