ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খাল খননের উদ্যোগ॥ রাজধানীর জলাবদ্ধতা থাকবে না

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ১ এপ্রিল ২০১৮

খাল খননের উদ্যোগ॥ রাজধানীর জলাবদ্ধতা থাকবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসছে বৃষ্টি বাদলার দিন। প্রচন্ড গরমে একপশলা বৃষ্টি নাগরিক জীবনে আনে স্বস্তি। আবার একটু ভারি বৃষ্টিপাত রাজধানীবাসীর জন্য বয়ে আনে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ। বৃষ্টির মৌসুমে জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর নাকাল হওয়ার চিত্র প্রতি বছরের। চলতি বছর সেই চিত্র পাল্টাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। জলাবদ্ধতা নিরসনে রাজধানীর বিদ্যমান খালের পাশাপাশি নতুন খাল খনন করবে সংস্থাটি। এজন্য ‘হাজারীবাগ, বাইশটেকী, কুর্মিটোলা, মান্ডা ও বেগুনবাড়ি খালে ভূমি অধিগ্রহণ এবং খনন বা পুনঃখনন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বর্ষাকালে ঢাকার বড় খালগুলোতে পানির প্রবাহ বাড়বে। এতে জলজট ও জলাবদ্ধতা কমে আসবে। পাশাপাশি খাল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশবান্ধব টেকসই বসবাস নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ড্রেনেজ) মোঃ শওকত মাহমুদ বলেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। পানি প্রবাহ বাড়াতে প্রকল্পের আওতায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাল ৪০ ও ৩০ মিটারে প্রশস্ত করা হবে। এর মধ্যে সোয়া এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বাইশটেকি খালটি প্রশস্ত করা হবে ৪০ মিটার। এছাড়া সাংবাদিক কলোনির ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্যরে খালটি প্রশস্ত করা হবে ৩০ মিটার। এছাড়া অন্য খালগুলো খনন ও পুনঃখনন করা হবে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে পারলে চলতি বছরেই এ প্রকল্পের সুফল নগরবাসী পাবেন। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতায় ঢাকা ওয়াসা এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারির একনেক সভার প্রাথমিক প্রকল্প তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে এটি সভায় উত্থাপন করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সংশ্লিষ্ট খালগুলোতে জলপ্রবাহ নিশ্চিত হবে। ফলে প্রকল্প সংলগ্ন এলাকায় (ক্যাচমেন্ট এরিয়া) পানি, গৃহস্থালীর বর্জ্য পানি ইত্যাদি সহজেই খালের মাধ্যমে নির্ধারিত আউটফলে চলে যাবে। এতে জলাবদ্ধতা দূর হবে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা দূর হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট সড়কসমূহ টেকসই হবে এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন থাকবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পভুক্ত এলাকার জনগণের জন্য টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের সুবিধা সৃষ্টি হবে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় যেসব খাল খনন ও পুনঃখনন করা হবে সেগুলো হচ্ছে- ৪ দশমিক ৩৫৫ একর হাজারীবাগ খাল, ৬ দশমিক ৩৮৫ একর বাইশটেকি এবং সাংবাদিক কলোনি খাল, ৪ দশমিক ৬১৩ একর কুর্মিটোলা খাল, ১ দশমিক ৯০৫ একর বেগুনবাড়ি খাল ও ১৩ দশমিক ৩০৪ একর মান্ডা খাল। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামোর (ঘরবাড়ি ও ভবন ইত্যাদি) ক্ষতিপূরণ, রোড ক্রসিং কালভার্ট নির্মাণ, সাড়ে ১৩ কিলোমিটার খাল খনন ও পাড় উন্নয়ন এবং দুই হাজার ২০০টি ডিমারকেশন পিলার নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প এলাকার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনভুক্ত (ডিএসসিসি) মান্ডা, সবুজবাগ, বাসাবো ও হাজারীবাগ এলাকা রয়েছে। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মিরপুর, পল্লবী, বাড্ডা ও রামপুরা থানা এলাকা প্রকল্পের আওতাভুক্ত। সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসা অন্যান্য সেবা সংস্থার পাশাপাশি নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে। মহানগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রায় ১৫১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৪৪টি খাল, ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট ও বিভিন্ন সংস্থার কয়েক হাজার কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার আওতাধীন কিছু খাল বর্তমানে নগরবাসীর ব্যক্তিগত জমির মাধ্যমেও প্রবাহিত হচ্ছে, যেখানে ঢাকা ওয়াসার আইনগত কোন কর্তৃত্ব নেই। এতে করে সংশ্লিষ্ট জমির মালিকরা যে কোন সময় তাদের জমির শ্রেণী পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজেদের ইচ্ছামাফিক ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে নগরীর সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। সূত্র আরও জানায়, সম্প্রতি মহানগরীর এলাকাভুক্ত কুর্মিটোলা এলাকা, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকার গৃহস্থালী ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঢাকা ওয়াসাকে অনুরোধ জানায়। এছাড়া হাজারীবাগ খাল, বাইশটেকি খাল, মান্ডা খাল এবং বেগুনবাড়ি খালগুলোর সংস্কার করা প্রয়োজন। এজন্য খালসংলগ্ন জমি অধিগ্রহণ করা জরুরী। বর্জ্য পানি এবং বৃষ্টির পানি যাতে এসব খাল দিয়ে সহজে নেমে যেতে পারে, সেজন্য বাইশটেকি খালের ভাঁটিতে অবস্থিত সাংবাদিক কলোনি খালের পরে একটি খাল এবং মা-া ও বেগুনবাড়ি খাল প্রশস্তকরণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এছাড়া হাজারীবাগ খালের উজানে ও ভাঁটিতে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি রয়েছে। কুর্মিটোলা নামে নতুন খাল খননের জন্য এসব জমিও অধিগ্রহণ করতে হবে। এসব খালের উন্নয়নের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও পরিবেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের জন্য ঢাকা ওয়াসা এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও শেষ করেছে।
×