ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞার এক বছরে স্মিথ-ওয়ার্নারের ক্ষতির পরিমাণ হবে ৫৭ কোটি টাকা, বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) প্রত্যক্ষ লোকসান দাঁড়াতে পারে ৩০ কোটি ডলার

এক ভুলের এত মাসুল!

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৩১ মার্চ ২০১৮

এক ভুলের এত মাসুল!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ স্টিভেন স্মিথের মাঝে স্যার ডন ব্রাডম্যানের ছাঁয়া খুঁজতেন অস্ট্রেলীয়রা। ক’দিন আগেই প্রয়াত কিংবদন্তির সর্বকালের সেরা রেটিং পয়েন্টের রেকর্ড ভেঙ্গে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে স্মিথ বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন কেন তিনি সেরাদের সেরা। এক ভুলে সব কেমন চুরমার হয়ে গেল। কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সতীর্থ ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে দিয়ে বল টেম্পারিং করিয়ে ডেপুটি ক্যাপটেন ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে নিষিদ্ধ হলেন এক বছরের জন্য। সেরা পাঁচের দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে দল এখন হাল ভাঙ্গা নৌকার মতো। ইমেজ সঙ্কটে কুলিন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট (সিএ)। টাকার অঙ্কেও ক্ষতিটা কম নয়। স্মিথ-ওয়ার্নাররা তো বটেই, কলঙ্কিত এ ঘটনায় স্পন্সর হারাচ্ছে সিএ-ও। সবমিলিয়ে দুই তারকার টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণটা হবে ৫৭ কোটি। সাবেক হয়ে যাওয়া অধিনায়ক স্মিথ ছিলেন অস্ট্রেলিয়া স্কোয়াডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া ক্রিকেটার। জাতীয় দল ও আইপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের বেতন, ম্যাচ ফি আর স্পন্সর চুক্তি মিলিয়ে এই ১২ মাসে ৫০ লাখ ডলারের (প্রায় ৩১ কোটি টাকা) বেশি লোকসান গুনতে হবে তাকে। অস্ট্রেলিয়া দলে তার বার্ষিক পারিশ্রমিক ২০ লাখ ডলার। এ ছাড়া ন্যূনতম ৪ লাখ ডলার ম্যাচ ফি হারাতে হবে নিষিদ্ধ থাকার সময়ে। আইপিএলেও নিষিদ্ধ হওয়ায় ফ্র্যাঞ্চাইজি দল রাজস্থান রয়্যালস থেকে ২৪ লাখ ডলার পারিশ্রমিকও এবার পাচ্ছেন না স্মিথ। স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলোও সরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। সবমিলিয়ে স্পন্সরের খাত থেকেই আনুমানিক কয়েক মিলিয়ন ডলারের অর্থ হারাবেন। স্মিথের মতো ওয়ার্নারও এই ১২ মাসে বেশ বড় অঙ্কের আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হবেন। সবমিলিয়ে অঙ্কটা প্রায় ৪০ লাখ ডলার (২৬ কোটি টাকা)। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) থেকে তার বার্ষিক আয় ১৫ লাখ ডলার। এ ছাড়া আইপিএলেও নিষিদ্ধ হওয়ায় ফ্র্যাঞ্চাইজি দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ থেকে ২৪ লাখ ডলার পারিশ্রমিক হারাবেন তিনি। স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলোও ওয়ার্নারের পাশ থেকে সরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। যার মধ্যে অন্যতম কোরিয়ান ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য নির্মাতা এলজি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, টয়োটা ক্রীড়া সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, এসিক্সসহ অনেক কোম্পানি। স্মিথ-ওয়ার্নার-ব্যানক্রফটদের বল বিকৃতির কলঙ্কে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ারও (সিএ)। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ম্যাগেলান এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে স্পন্সর চুক্তি বাতিল করেছে। দেশটির সংবাদ মাধ্যমের মতে, এই স্পন্সর চুক্তির আর্থিক মূল্য ছিল ১৭-২০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার। কেপটাউন টেস্টে বল বিকৃতি-কাে র আগে নতুন সম্প্রচার স্বত্ব চুক্তির দ্বারপ্রান্তে ছিল সিএ। সংবাদ মাধ্যমের মতে, এই চুক্তির আনুমানিক দাম হতো ১০০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার। কিন্তু স্মিথ-ওয়ার্নার-ব্যানক্রফটদের বল বিকৃতির ঘটনার পর দামটা নেমে আসতে পারে ৭০ কোটিতে। ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীও মনে করেন, স্মিথ-ওয়ার্নারদের শাস্তিটা বেশি ‘কঠোর’ হয়ে গেছে, ‘আমার মতে এটা বেশি কঠোর হয়ে গেছে। বইয়ের দোকানে অপরাধ বিষয়ক বইয়ের তাকে রাখা হয়েছে স্মিথের আত্মজীবনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সবাইকে ঠা-া করতে জেমস সাদারল্যান্ডকে (সিএ’র প্রধান নির্বাহী) কিছু একটা করতেই হতো। সে জন্যই এই চরম সিদ্ধান্ত।’ দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসিসেরও একই মত। গত বছর পারিশ্রমিক নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন দেশটির প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটাররা। ওই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন ওয়ার্নার-স্মিথ। আরেক ভারতীয় গৌতম গম্ভীর মনে করছেন, সেই বিদ্রোহ এই শাস্তিতে ভূমিকা রাখতে পারে, ‘ক্রিকেটকে অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হবে কিন্তু অসিদের ওপর শাস্তিটা বেশি হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। স্মিথ-ওয়ার্নার কি তবে ওই বিদ্রোহের মাশুল দিচ্ছেন? ইতিহাস বলছে, তাদের প্রশাসকরা সবাইকে তিরস্কার করেছেন, যারা খেলোয়াড়দের স্বার্থের পক্ষে ছিলেন। উৎকৃষ্ট উদাহরণ : ইয়ান চ্যাপেল।’ স্মিথ-ওয়ার্নারের জন্য খারাপই লাগছে গম্ভীরের। অস্ট্রেলিয়ার এ দুই ক্রিকেটারের প্রতি অবশ্য অনেকেই সহানুভূতি দেখাচ্ছেন। আর কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকরের টুইট, ‘তারা অনুশোচনায় দগ্ধ হবে এবং কৃতকর্মের ফল বহন করতে হবে জীবনভর। খেলোয়াড়দের সঙ্গে নিয়ে তাদের পরিবারকেও এই ধকল কাটিয়ে উঠতে হবে। আমাদের এখন তাই মনোযোগ ফিরিয়ে নিতে হবে, তাদের একটু শ্বাস নেয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।’
×