ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কারও সঙ্গে এমওইউ, আলোচনা কারও সঙ্গে

এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ১৮ কোম্পানি আগ্রহী

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৩১ মার্চ ২০১৮

এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ১৮ কোম্পানি আগ্রহী

রশিদ মামুন ॥ আমদানির শুরুতেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে আগ্রহী ১৮ কোম্পনি। বিদ্যুত বিভাগে কোম্পানিগুলো এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের আগ্রহপত্র জমা দিয়েছে। এদের মধ্যে কোন কোন কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। আবার কোন কোন কোম্পানি সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। বিদ্যুত বিভাগের ২০৪১ সাল মেয়াদী মহাপরিকল্পনায় দেখা যায়, সরকার মোট বিদ্যুত উৎপাদনের ৩৫ ভাগ গ্যাস দিয়ে উৎপাদন করতে চায়। তবে দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ দিন দিন কমে আসায় এলএনজি হবে বিকল্প জ¦ালানি। যার পুরোটা আমাদানি করা হবে। সরকার ইতোমধ্যে এলএনজি আমদানির সব চূড়ান্ত করেছে। আগামী ২৫ এপ্রিল দেশে প্রথম এলএনজি আমদানি শুরু হচ্ছে। প্রথমে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট আমদানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য এক্সিলারেট এনার্জির একটি রি গ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল আগামী ২২ বা ২৩ এপ্রিল মহেশখালী এসে পৌঁছাবে। আর বছরের শেষ নাগাদ সামিট পাওয়ারের এলএনজি টার্মিনালটি উৎপাদনে আসবে। সব মিলিয়ে তখন এলএনজি সরবরাহের ক্ষমতা দাঁড়াবে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। তবে কুতুবদিয়া, মহেশখালী এবং পায়রা এলাকাতে সরকার স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। ইতোমধ্যে কুতুবদিয়াতে একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) হয়েছে। এখন বিদ্যুত উৎপাদনে অন্তত ৪০ দশমিক ৯০ ভাগ গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। এলএনজি আমদানি পর পরই ব্যবহার বেড়ে ৪৫ ভাগ হবে। এখন বিদ্যুত কেন্দ্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩ টাকা ১৬ পয়সা। এলএনজি আসলে গ্যাসের দাম ২০৬ ভাগ বৃদ্ধি করে প্রতি ঘনমিটার ১০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে এলএনজি আসলেই বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমে যাবে এমনটি নয়। টানা চারবছর বিশ^বাজারে এলএনজির দাম কম ছিল। এখন এই দাম আবারও বাড়তে শুরু করেছে। বিদ্যুতের উৎপাদন খরচের ৬০ ভাগই জ¦ালানি খরচ। জ¦ালানি বাবদ খরচ বাড়লে বিদ্যুতের দাম স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। এখন গড় বিদ্যুত উৎপাদনে পিডিবি ইউনিটপ্রতি এক টাকার কাছাকাছি লোকসান করছে। নতুন এই জ¦ালানি যোগ হলে উৎপাদন খরচ আরও বাড়বে। এখন বিশ^বাজারে এলএনজির দাম প্রতি এমসিএফ ৮ দশমিক ৫ ডলার। ক্রমান্বয়ে এই দাম বাড়ছে। দুই বছর আগেও এই দাম সাড়ে চার থেকে পাঁচ ডলার ছিল। বিদ্যুত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, আমরা এলএনজি চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের অনেক প্রস্তাব পেয়েছি। সরকার এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাবগুলো সরকার পর্যালোচনা করছে। যেসব প্রস্তাবগুলো অসম্পূর্ণ তাদের সম্পূর্ণ প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, জার্মানির সিমেন্স আচ হাজার মেগাওয়াটের এলএনজি চালিত কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিপিজিসিএল) এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এছাড়া পিডিবির সঙ্গেও তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের আরও একটি সমওইউ সই হওয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন কোম্পানি জিই- ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এর এলএনজি চালিত কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। কোম্পানিটি বাংলাদেশের সরকারী কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে কেন্দ্র নির্মাণ করতে আগ্রহী। এছাড়া জাপানী মিতসুই ৬০০ মেগাওয়াট, চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং তিন হাজার ২০০ মেগাওয়াট, চায়না ন্যাশনাল ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন এক হাজার ৮০০ মেগাওয়াট, ইন্দোনেশিয়ার পেট্রোমিনা এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট এবং সিঙ্গাপুরের সেম্বকর্প এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। সরকারী কোম্পানি এনডব্লিউপিজিসিএল খুলনার রূপসায়-৮০০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া বেসরকারী মিডল্যান্ড এবং শাহাজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি ৬০০ মেগাওয়াট, বেক্সিমকো ৪৬০ মেগাওয়াট, ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইস ৪৬০ মেগাওয়াট, ইউনিক পাওয়ার এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতের রিল্যায়েন্স পাওয়ার মেঘনা ঘাটে এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। কোম্পানিটি বিদ্যুত কেন্দ্রর সঙ্গে এলএনজি টার্মিনালও নির্মাণ করবে।
×